Advertisement
১৬ মে ২০২৪
UNGA

UNGA: কূটনীতির এক বেনজির জয়ের ৫০ বছর পূর্তি

কূটনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিকে সে দিন জনপ্রিয় করে তোলেন ভারতীয় কূটনীতিকেরা। সেই কষ্টার্জিত সাফল্যেরও এ বার সুবর্ণজয়ন্তী।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:১৮
Share: Save:

নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বার্ষিক অধিবেশনে শনিবার দুই অর্ধে বক্তৃতা দিলেন ভারত ও বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধান— নরেন্দ্র মোদী এবং শেখ হাসিনা। চলতি বছরে এই দুই প্রতিবেশী দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অর্ধশতাব্দী পালন করছে। কিন্তু শনিবারের ঘটনা নিউ ইয়র্কে ভারতীয় কূটনৈতিক দৌত্যের আরও একটি সাফল্যের সুবর্ণজয়ন্তী, স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের কাজে যার তাৎপর্য অসীম।

বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে পুরোদস্তুর স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল ১৯৭১-এর মার্চেই। মুক্তিযুদ্ধের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলে পুরে গোটা পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তান সরকার। ‘খান সেনা’-দের ধর্ষণের শিকার কয়েক লক্ষ বাংলাভাষী মহিলা। ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী সেই নির্যাতনের প্রমাণপত্র নিয়ে তখন পৃথিবী চষে ফেলছেন বোঝাতে, পাকিস্তানের জাঁতাকল থেকে কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রয়োজন। ১৯৭১-এর সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার যে অধিবেশন বসেছিল, সেখানে হাজির হওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সামনে পাকিস্তানের নির্যাতন ও গণহত্যার বিবরণ পেশ করে ভারতীয় কূটনীতিকেরা প্রস্তাব দিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাড়া বিকল্প নেই। সাধারণ সভার অধিবেশনের পাশে ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ দেশকে নিয়ে একটি সম্মেলনের ডাক দেয় ভারত। সব দেখেশুনে সেই দেশগুলি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রস্তাবকে সমর্থনেরই সিদ্ধান্ত নেয়। সাধারণ সভার
বক্তৃতায় ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সর্দার স্বর্ণ সিংহ শেখ মুজিবের মুক্তির দাবি জানান। বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানে এখন শুধুই খান সেনাদের খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ। একের পর এক গণহত্যার খবর আসছে, অথচ রেড ক্রসকেও সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।” সেই সময়ে নিউ ইয়র্কে ভারতের স্থায়ী মিশনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এ এন ডি হাকসরের কথায়, “ভারতের কূটনীতিকেরা সে দিন রাষ্ট্রপুঞ্জে শুধু নিজেরাই বাংলাদেশ সঙ্কট নিয়ে কথা বলেননি, পূর্ব পাকিস্তানের এক দল প্রতিনিধিকেও নিয়ে গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কে। এতে স্বাধীনতার দাবির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।”

সেই ১৯৭১-এ বিশ্ব রাজনীতি তখন সোভিয়েত ব্লক ও আমেরিকার নেতৃত্বে নেটো— দ্বিমেরুতে বিভক্ত। জোট নিরপেক্ষতার নীতিতে বিশ্বাসী ভারত এই প্রচারের কাজে কোনও বাছাবাছি করেনি সে দিন। সব বিষয়ে দুই মেরুতে থাকে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতের প্রস্তাবে দুই দেশই সহমত হয়। রাশিয়া, পোলান্ডের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতকে সমর্থন করে ব্রিটেন বা ফ্রান্সের মতো নেটোর শক্তিশালী দুই সহযোগীও। এমনকি আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও স্বাধীন অবস্থান নেয় ব্রিটেন, পশ্চিম জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো প্রবল আমেরিকা-সহযোগী দেশ। চিনকে পাশে নিয়ে পাকিস্তানের পাল্টা কূটনৈতিক লড়াই সে দিন ধোপে টেকেনি। কূটনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের পর্যুদস্ত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিকে সে দিন জনপ্রিয় করে তোলেন ভারতীয় কূটনীতিকেরা। সেই কষ্টার্জিত সাফল্যেরও এ বার সুবর্ণজয়ন্তী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE