পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে আলোচনায় দুই শীর্ষনেতা— সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং পলিটব্যুরো সদস্য তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। ছবি: পিটিআই।
দ্বিতীয় বারের জন্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন সীতারাম ইয়েচুরি। ৯৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হল, বাংলা থেকে সেই কমিটিতে ঢুকলেন নতুন ৪ সদস্য। উল্লেখযোগ্য ভাবে বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের প্রাক্তন পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম এ বার কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য তালিকাতেও নেই। তবে বেশ চমক দিয়ে পলিটব্যুরোয় ঢোকানো হল নতুন দুই বাঙালিকে।
বাংলার বেশ কয়েক জন নেতা এ বার কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়বেন বলে জল্পনা ছিলই। বাদ পড়লেনও। কিন্তু যতগুলি নাম নিয়ে জল্পনা ছিল, তত জন বাদ পড়েননি। গৌতম দেব এবং দীপক দাশগুপ্তকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়েছেন মদন ঘোষও। তবে তাঁকে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে। শ্যামল চক্রবর্তী এবং নৃপেন চৌধুরীও বাদ যেতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল। কিন্তু তা হয়নি, তাঁদের কমিটিতে রেখে দেওয়া হয়েছে।
সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, মহম্মদ সেলিমদের মতো পলিটব্যুরো সদস্যরা প্রত্যাশিত ভাবেই এ বারেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তপন সেন, নীলোৎপল বসু, মৃদুল দে, রেখা গোস্বামী, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, রামচন্দ্র ডোম, মিনতি ঘোষ, অঞ্জু করও আগের বারের মতোই এ বারও রয়েছেন কমিটিতে। বাংলার আর এক নেতা হান্নান মোল্লা আগের বারও কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবং পলিটব্যুরোয় ছিলেন। বাংলার কোটায় নয়, তিনি ছিলেন দিল্লির কোটায়। হান্নানের অবস্থান এ বারও অপরিবর্তিত।
চমক রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলা থেকে ঠাঁই পাওয়া চার নতুন সদস্যের নামে। সুজন চক্রবর্তী, অমিয় পাত্র, রবীন দেব, আভাস রায়চৌধুরী— বঙ্গ ব্রিগেডের এই চার জন এ বার নতুন সদস্য হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢুকলেন। সুজন এবং অমিয় যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢুকতে চলেছেন, তা প্রায় নিশ্চিত ছিল। শোনা যাচ্ছিল অশোক ভট্টাচার্য এবং কনীনিকা ঘোষের নামও। কিন্তু অশোক-কনীনিকার কপালে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির শিকে ছিঁড়ল না। রবীন দেব এবং আভাস রায়চৌধুরী উঠে এলেন।
নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি এ দিন বৈঠক করে সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে। সেই বৈঠকেই পলিটব্যুরো গঠিত হয়। বাংলার জন্য সবচেয়ে বড় চমক অপেক্ষা করছিল সেখানেই। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিমদের পাশাপাশি বাংলা থেকে এ বার পলিটব্যুরোতে ঢুকে পড়েছেন তপন সেন এবং নীলোৎপল বসু।
দলের শীর্ষ স্তরে প্রভাব বাড়ল ইয়েচুরির। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এ বার আগের চেয়ে অনেকটাই শক্তিশালী হলেন তিনি। —পিটিআই থেকে নেওয়া ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাংলার তিন জন বাদ পড়েছেন, নতুন চার জন্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আগের কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য ছিলেন। এ বার তিনি নেই। কিন্তু মদন ঘোষ আমন্ত্রিত হিসেবে ঠাঁই পেয়েছেন। অতএব কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাংলার প্রতিনিধিত্ব সরল পাটিগণিতেই বেড়েছে। পলিটব্যুরোতেও বাংলার প্রতিনিধি এক ধাক্কায় তিন থেকে বেড়ে পাঁচ হয়ে গিয়েছে। সিপিএম সূত্রের খবর, সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছা এবং চেষ্টাতেই এমনটা হয়েছে।
গত তিন বছর ধরে সীতারাম ইয়েচুরি দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সে কথা ঠিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটিতে কেরল লবির তথা কারাট অনুগামীদের দাপট অনেক বেশি ছিল। তাই নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে সাধারণ সম্পাদককে বার বার হোঁচট খেতে হয়েছে। এ বার তাই দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটিতে এবং পলিটব্যুরোতে নিজের অনুগামীর সংখ্যা বাড়াতে তৎপর ছিলেন ইয়েচুরি। কারাটের প্রবল দাপটের বিরুদ্ধে গিয়ে বঙ্গ ব্রিগেড যে ভাবে ইয়েচুরিকে সমর্থন করে এসেছে গত তিন বছর ধরে, তাতে বাংলার উপরেই ইয়েচুরির ভরসা সবচেয়ে বেশি। সেই কারণেই ইয়েচুরির নেতৃত্বাধীন দলের সর্বোচ্চ স্তরগুলিতে বাংলার প্রতিনিধিত্ব বাড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দলিলে বদল, বিনা ভোটেই জয় ইয়েচুরি লাইনের
সিপিএমের প্রাক্তন সংসদীয় দলনেতা বাসুদেব আচারিয়া হয়েছেন সেন্ট্রাল কন্ট্রোল কমিশনের প্রধান। আর কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য তালিকায় সর্বাগ্রে রয়েছে কেরলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তথা কারাট-বিজয়ন জুটির ঘোর বিরোধী হিসেবে পরিচিত নবতিপর ভি এস অচ্যুতানন্দনের নাম।
আরও পড়ুন: সিপিএমে ছোটরা কলেবরে বাড়ছে, বড়রা হচ্ছে ছোট
ভি এস-এর মতো প্রবীণতম নেতা রয়ে গেলেন, কিন্তু বুদ্ধবাবু ঠাঁই পেলেন না। এমনটা কেন? প্রশ্ন উঠেছে কোনও কোনও শিবির থেকে। সিপিএম সূত্রে জানানো হচ্ছে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অসুস্থতা অনেকটাই বেড়েছে। তিনি নিজেই দীর্ঘ দিন ধরে সব দায়-দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছিলেন। হায়দরাবাদে হওয়া পার্টি কংগ্রেসে যোগ দেওয়া তো দূরের কথা, অসুস্থতার কারণে দলের রাজ্য সম্মেলনেও সে ভাবে থাকতে পারেননি। মাত্র এক দিনের জন্য গিয়েছিলেন রাজ্য সম্মেলনে। তাই বুদ্ধবাবুর আর্জি মেনে তাঁকে এ বার আর কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমন্ত্রিত হিসেবেও রাখা হয়নি। বলছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy