Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সন্তানকে স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলুন এ ভাবে

সন্তানকে স্বাবলম্বী এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলা তাঁর নিজের ভবিষ্যতের জন্য যেমন জরুরি তেমনই জরুরি দেশের পক্ষেও। তারাই আগামী দিনে দেশ গড়ার কারিগর। লিখেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী।সন্তানকে স্বাবলম্বী এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলা তাঁর নিজের ভবিষ্যতের জন্য যেমন জরুরি তেমনই জরুরি দেশের পক্ষেও। তারাই আগামী দিনে দেশ গড়ার কারিগর।

ছবি প্রতীকী। তুলেছেন প্রণব দেবনাথ

ছবি প্রতীকী। তুলেছেন প্রণব দেবনাথ

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:০১
Share: Save:

সন্তানকে স্বনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী করতে কেমন হবে অভিভাবকত্ব এ নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক কম হয়নি। মনোবিদ জাঁ পিঁয়াজে তাঁর সামনে বেড়ে ওঠা পরিবারের ছোটদের উপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, শৈশব থেকে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথে অভিভাবকদের তিনটি ধাপ মনে রাখতে হবে। প্রথম ধাপ, সেই শিশুর আশপাশের জগৎ(পিঁয়াজের ভাষায় 'স্কিমা')। পরের ধাপে তার যোগ্য সংমিশ্রণ ও তার পরের ধাপে তাদের পরিণত হয়ে ওঠা।

মনোবৈজ্ঞানিক বলবি অবশ্য ‘অ্যাটাচমেন্ট’ তত্ত্বের ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। যে মানুষটির সঙ্গে বাচ্চাটি বেড়ে ওঠার সময়ে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাচ্ছে সেই তার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই মানুষটি তার মা বা বাবা। কিন্তু যার ক্ষেত্রে বাবা-মা দুজনেই চাকরিরত, তার ক্ষেত্রে সেই মানুষটি অনায়াসে হয়ে উঠতে পারে আয়ামাসি।

বলবি বলছেন, দুই বছরের মধ্যে এই বন্ধন কোনও কারণে ভেঙে গেলে বাচ্চার পাকাপাকিভাবে অবসাদগ্রস্ত বা খিটখিটে মেজাজের হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। কখনও কখনও একটা স্থায়ী নিরাপত্তাহীনতা কাজ করতে থাকে তার মনের ভিতর। তবে ছেলেমেয়ে "মানুষ" করে তোলা নিয়ে তাত্ত্বিক ভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় মডেলটি করেন বমরিন্ড। তাঁর মতে, অভিভাবকত্ব প্রধানত চার রকম। প্রথমটি কঠোর শাসনে ভরা, পান থেকে চুন খসলেই উত্তমমধ্যম। বমরিন্ডের মতে 'অথরিটেরিয়ান'। দ্বিতীয়টিতে শাসন অবশ্যই আছে, তবে নিয়মানুবর্তিতার বাঁধনের আড়ালেই রয়েছে স্নেহের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ও। মনোবিদদের মতে, এই ধরনের 'অথরিটেটিভ' অভিভাবকত্ব সন্তানের ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য সবচেয়ে অনুকুল। আর আছে আদর দিয়ে সন্তানকে "বাঁদর" তৈরি করা ইন্ডালজেন্ট অভিভাকত্ব ও পরম ঔদাসীন্যের ‘নেগলিজেন্ট’ অভিভাকত্ব।

সন্তান প্রতিপালনের আদবকায়দা এক-এক দেশে এক-এক রকম। সুইডেনে বাচ্চাদের এক বছর বয়স থেকেই 'ডে কেয়ার'- এ দেওয়ার চল আছে। জাপানে চার থেকে সাত বছর হলেই তাকে একা রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার এমনটা আমেরিকায় ঘটলে বাবা-মাকে দায়িত্বহীন বলা হতে পারে। ভারতবর্ষে বিভিন্ন জাতি ও রাজ্যের মানুষের সন্তান মানুষের কায়দা বিভিন্ন। অভিভাবকত্ব নিয়ে নানান পরীক্ষা চলেছে। চতুরাশ্রমে শিক্ষাগুরুই শিশুকে স্বাবলম্বী করতেন। সেখানে বাবা মায়ের ভূমিকা নগণ্য। তার পর যৌথ পরিবারে প্রবল হল বয়োজ্যেষ্ঠর হুকুমদারি। যৌথ পরিবার ভেঙে গেলে ছোট পরিবারে বাবা ও মায়ের বোঝাপড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। বিশেষত, সমাজের নিচের তলায় স্ত্রীশিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা গেমচেঞ্জার হয়ে ওঠে। আণবিক থেকে আমাদের দেশের এক শ্রেণির পরিবার সিঙ্গল পেরেন্টহুডের দিকে ঝুঁকছে। সেখানে আবার সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠছে ক্রেশের বা আয়ামাসির ভূমিকা। এক কথায় আমাদের দেশে এখনও অভিভাবকত্ব নিয়ে বিবর্তন চলছেই।

স্কুলের রিপোর্ট কার্ডটাই সব নয়। তার বাইরেটাও দেখতে ও চিনতে শেখান। সন্তানের শৈশবকে শুধু বইয়ের পাতায় বন্ধ করবেন না। আদর যেমন করবেন শাসনও সে রকম করুন। সন্তানকে পড়ানো ও শাসনের পাশাপাশি কিছুটা সময় ওদের সঙ্গে নিছক আনন্দে হইহই করে কাটান। বয়ঃসন্ধিতে সন্তানের বন্ধু হন। ওর সমস্যার কথা শুনুন। ওর ভরসা হন। স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি বা মতের অমিলের আঁচ যেন সন্তানকে নিরাপত্তাগীনতায় না ভোগায়। সামাজিক রীতি-নীতি, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ সন্তানকে শেখান।

অনুলিখন: সম্রাট চন্দ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Children Self Dependent Confidence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE