Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বন্ধু হোন অভিভাবক

কৈশোরের প্রেমে মানসিক টানাপোড়েনে থাকে অল্পবয়সীরা। দিশেহারা হয়, অবসাদে ভোগে। এইসময় যদি বন্ধুর মতো এগিয়ে আসেন অভিভাবকেরা তবে সমস্যা অনেকটাই হালকা হয়। লিখেছেন মনোবিদ সুপর্ণা রায়চট্টোপাধ্যায়।অবসর সময়ে, খাবার টেবিলে বসে তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। গল্প করতে হবে হালকা মেজাজে। রাতে ঘুমানোর আগে একটু গল্প করতে হবে। সন্তান যেন এটাকে জেরা হিসেবে না ভাবে।

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩৫
Share: Save:

শিশু যখন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছোয় তখন সে বাইরের জগতে পা রাখে। বাবা-মায়ের বাইরে বর্হিজগতের লোকজনের সঙ্গে তার মেলামেশা শুরু হয়। কো-এ়ডুকেশন স্কুলে বা কোচিং ক্লাস গিয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তার আকর্ষণ তৈরি হয়। তার উপর এই বয়সের সে হয়ে ওঠে অনেকটা স্বাধীনচেতা। কিশোর-কিশোরীর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। এই বয়সের ধর্ম প্রেমে পড়া আর তার থেকেই নানারকম মানসিক টানাপোড়েনে সে দীর্ণ হতে থাকে, বিভ্রান্ত হয়, দুঃখও পায়। সকলের পক্ষে প্রেমজনিত সমস্যা, টানাপোড়েন বা সঙ্কট ঠিকঠাক মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। এই সময়ে পাশে ভরসাযোগ্য বন্ধু দরকার। যে তাকে মানসিক ভাবে সাহায্য করবে, সুপরামর্শ দেবে, আবার কান্না পেলে নিজের কাঁধ এগিয়ে দেবে। যদি অভিভাবকেরাই সেই ভূমিকায় থাকতে পারেন তা হলে তার থেকে ভাল কিছু হতে পারে না। কিন্তু এখনও অনেকে ভাবতেই পারেন না যে, ছেলেমেয়ের সঙ্গে তাদের প্রেম বা প্রে‌মজনিত সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন, বন্ধুর মতো আলোচনা করবেন। তবে ছেলেমেয়ের মনের খবর জানতে হলে, বাবা-মাকে তার সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতেই হবে। অবসর সময়ে, খাবার টেবিলে বসে তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। গল্প করতে হবে হালকা মেজাজে। রাতে ঘুমানোর আগে একটু গল্প করতে হবে। সন্তান যেন এটাকে জেরা হিসেবে না ভাবে। এই বয়সে সন্তানের জীবনে প্রেম আসার বিষয়টি স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়ে বাবা-মাকে বোঝাতে হবে, প্রেমই জীবনের সব কিছু নয়। বরং এই বয়সে কেরিয়ার তৈরির জন্য পড়াশোনাটাই আসল। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ছেলেটি বা মেয়েটি হয়তো আলাদা আলাদা কলেজে ভর্তি হবে। অন্য শহর, রাজ্য, বা অন্য দেশে পড়তে চলে যাবে। দূরত্বের জন্য বা মতের অমতে সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। জীবনে একটা সম্পর্ক ভাঙলে অন্য সম্পর্ক হতে পারে। কিন্তু পড়াশোনা এবং কেরিয়ার তৈরির সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে আসবে না। অনেক সময় কিশোর-কিশোরীরা কম্পিউটর বা মোবাইলে বুঁদ হয়ে প্রমিক-প্রেমিকার সঙ্গে মাঝ রাত পর্যন্ত চ্যাট করে। অনেকে আবার ইন্টারনেটে, ফেশবুকে ভুলভাল মানুষের প্রেমের ফাঁদে পড়ে। প্রেমজনিত কারণে খুন বা আত্মহত্যার অনেক ঘটনাও কৈশোরে ঘটে। ইমোশনালি ছেলেমেয়েকে সাহায্য করতে হবে অভিভাবকদের। বেশি বকাবকি করলে চলবে না। অনেক সময় দেখা যায়, কিশোর-কিশোরীরা কল্পনার জগতে চলে যায়। এমন কাউকে মনে মনে পছন্দ করতে শুরু করল যেটা হয়তো অবাস্তব, সেই সম্পর্ক বাস্তবে কখনও হতে পারে না। তখন বাবা-মাকে বোঝাতে হবে, এই বায়বীয় স্বপ্ন এক দিন ভাঙবেই। অনেক মুখচোরা সন্তান আবার বাবা-মাকে কিছুই বলতে পারে না। তাকে পর্যবেক্ষণ করবেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সন্তান বেশি চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। তার দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন এসেছে। ঠিকমতো খাচ্ছে না, ঘুমোচ্ছে না, অমনোযোগী হয়ে পড়েছে, আচমকা রেগে যাচ্ছে, কেঁদে ফেলছে, দুর্বল বোধ করছে, নিজেকেই আঘাত করছে বা নেশা করছে। তখন মা-বাবাকে সতর্ক হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এই বয়সে। দ্রুত সঙ্গী বদল করে। তখনও বাবা-মাকে বোঝাতে হবে যে, এটা স্বাভাবিক নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Relationship Friend Mental Condition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE