Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Urinary Tract infection

কাঁপুনি দিয়ে জ্বর? মূত্রের সংক্রমণ নয় তো? কী কী করতেই হবে জেনে নিন

কোভিডের অতিমারির কারণে জ্বর হলে সকলে আতঙ্কে ভুগলেও জ্বর কিন্তু নিজে কোনও রোগ নয়।

মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে তলপেটে ব্যথা করে। ফাইল ছবি।

মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে তলপেটে ব্যথা করে। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৯:০০
Share: Save:

কোভিড-১৯ সংক্রমণের কালে বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যের জ্বর হলে বাবা মা ও নিকটজনেরা ভয়ে আর উৎকণ্ঠায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকেই। তার উপর নিয়ম মেনে টানা ৫ দিন অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও যখন লাভ হয় না, জ্বর থেকেই যায়, তখন আতঙ্ক বাড়ছে। জ্বরের সঙ্গে যদি সর্দি বা গলা ব্যথা না থাকে, খাবারে অরুচি আর বমি ভাব থাকে তাহলে প্রস্রাবের সংক্রমণের কথা ভাবতে হয়, বললেন ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের শিশুরোগ চিকিৎসক জয়দীপ চৌধুরী।

কোভিডের অতিমারির কারণে জ্বর হলে সকলে আতঙ্কে ভুগলেও জ্বর কিন্তু নিজে কোনও রোগ নয়। বিভিন্ন সংক্রমণ বা অসুখের উপসর্গ হিসেবে জ্বর হয়। সার্স কোভ-২ ভাইরাস ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ডেঙ্গির ভাইরাস, চিকেন পক্সের ভাইরাস বা যে কোনও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করলে তার উপসর্গ হিসেবে জ্বর হতে পারে।

আবার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট অর্থাৎ মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে জ্বর, বমি ভাব বা বমি, তলপেটে ও কোমরের পিছন দিকে ব্যথা, বার বার শৌচাগারে যাওয়া, প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালা, কখনও আবার ঘাম হওয়ার মত উপসর্গ থাকে।

আরও পড়ুন:পা ফাটার সমস্যা? জব্দ করতে কী কী মানতেই হবে​

জয়দীপ বললেন, অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের বিশেষ কোনও উপসর্গ ছাড়াও মূত্রনালীতে সংক্রমণ হতে পারে। জেনে রাখা ভাল যে প্রস্রাবের সংক্রমণজনিত জ্বর হলে কাশি বা গলা ব্যথা থাকে না। তবে বমি ভাব ও বমি হলে সংক্রমণ সন্দেহ করতে হবে। তবে অনেক সময় সংক্রমণ হলে শীত করে, প্রস্রাব করার সময় ব্যাথা ও জ্বালা করে, তলপেটে ব্যথা করে, প্রস্রাবে কটূ গন্ধ হয়, প্রস্রাব ঘোলাটে বা লালচে হতে পারে। এ ছাড়া সামগ্রিক ভাবে দুর্বল লাগে।

আরও পড়ুন:ডায়াবিটিসে কী কী খাবার কীভাবে খেতে হবে​

বাচ্চাদের জ্বর হলে এবং আপাতদৃষ্টিতে কারণ বোঝা না গেলে বাচ্চাদের রুটিনমাফিক ইউরিন টেস্ট ও ইউরিন কালচার করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন জয়দীপ। প্রস্রাবে সংক্রমণ ধরা পড়লে কালচারের রিপোর্ট অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। ৫ বছরের কম বয়সি বাচ্চার সংক্রমণ হলে অবশ্যই তার পেটের একটা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করিয়ে নেওয়া উচিত। অনেক সময় জন্মগতভাবে বাচ্চার মূত্রনালী ও মূত্রথলির কোনও গঠনগত ত্রুটি থাকলে বারবার মূত্রনালীতে সংক্রমণ হতে পারে।

কোমরে ব্যথা বাড়ে মূত্রনালী সংক্রমণে। ফাইল ছবি।

সঠিক চিকিৎসা না করালে কিডনির উপর চাপ পড়ে পরবর্তীকালে জটিল সমস্যার ঝুঁকি থাকে। দুবছরের কম বয়সি শিশুর প্রস্রাবের সংক্রমণ হলে বিশেষ ধরনের এক্স-রে ও ডিএমএসএ স্ক্যান নামে কিডনির পরীক্ষা করানো জরুরি। অনেক সময়ই প্রস্রাবের সংক্রমণের পিছনে কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কম জল পান ও অপরিচ্ছন্নতার সঙ্গে প্রস্রাবের সংক্রমণের সম্পর্ক আছে। ছোট বাচ্চাদের নাগাড়ে ডায়াপার পরিয়ে রাখলে মূত্রনালী সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

আরও পড়ুন:ইলিশে জব্দ হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোক-স্নায়ু রোগ, আর কোন মাছে জেনে নিন​

অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার ব্যবহার করলেও প্রস্রাবের সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তাই ছোট থেকেই শিশুকে পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন করা উচিত। নানা জীবাণুর মধ্যে সব থেকে বেশি ই-কোলাই নামক জীবাণুর সংক্রমণ বেশি দেখা যায় বলে জানালেন জয়দীপ। বয়ঃসন্ধির মেয়েদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। কৃমি থাকলে প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট মাত্রায় কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। অনেক সময় বাচ্চারা প্রস্রাব পেলেও চেপে রাখে। যদিও এখন করোনার জন্যে স্কুল বন্ধ, স্কুলে গেলে বা বাড়ির বাইরে গেলে অনেক শিশুই শৌচাগারে যেতে চায় না। প্রস্রাব চেপে রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নিউ নর্মাল জীবনযাপনে বাইরে বেরনো কমে যাওয়ায় বাচ্চাদের জীবন যাত্রা বদলে গেছে। অনেকেই জল পান কমিয়ে দিয়েছে। এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে। অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার এবং ময়লা অন্তর্বাস থেকেও প্রস্রাবের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। যে সব বাচ্চার বারংবার প্রস্রাবের সংক্রমণ হয় তাদের খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে কারণ জেনে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা করা দরকার বলে পরামর্শ দিলেন জয়দীপ। কেননা সংক্রমণ মূত্রথলি থেকে কিডনিতে পৌঁছে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

আরও পড়ুন:করোনা-আক্রান্তের কাছে বাজি কিন্তু আরও মারাত্মক বিষ​

প্রস্রাবের সংক্রমণ হলে খাওয়ার ব্যপারে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার বললেন ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ। বাড়িতে তৈরি সব খাবারই দেওয়া যায়। বেশি করে জল আর তরল খাবার খেতে হবে। ডাল, স্যুপ, ঝোল, ডাবের জল, সরবত (ঠান্ডা পানীয় নয়), টাটকা ফলের রস যা খেতে ভাল লাগে তাই দেবেন। তবে বেশি তেল-মশলা দেওয়া খাবার না খাওয়াই ভাল। পর্যাপ্ত জল ও তরল খাবার খেতে হবে ও বিশ্রামে থাকতে হবে।

কৃমি থাকলে প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। ফাইল ছবি।

কী কী খেয়াল রাখতে হবে

• বাচ্চা যেন বেশিক্ষণ প্রস্রাব চেপে না রাখে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। বিশেষ করে খাবার আগে আর ঘুমোতে যাবার আগে শৌচাগারে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করে দিতে হবে।

• কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া উচিত।

• নাইলন বা সিন্থেটিক অন্তর্বাসের পরিবর্তে সুতির হালকা অন্তর্বাস পরতে হবে।

• আঁটোসাঁটো ট্রাউজার পরাবেন না।

• বাচ্চাদের নিয়ম করে স্নান করানো ও শুকনো করে মুছে নেওয়ার ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।

• ছোট বাচ্চাদের একটানা ডায়াপার পরিয়ে রাখা ঠিক নয়।

• কৃমি থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে।

• সামনে থেকে পিছন দিকে প্রস্রাবের জায়গা পরিষ্কার করতে হবে।

• জল শুষে নেয় এ রকম নরম টয়লেট পেপার ব্যবহার করতে হবে।

• বাড়ির শৌচাগার তো বটেই, স্কুলের শৌচাগারও পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি।সংক্রমণ প্রতিরোধ করে বাচ্চাকে সুস্থ রাখুন, ভাল থাকুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fever Urine Infection UTI Child Care
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE