Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
hilsa fish

ইলিশে জব্দ হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোক-স্নায়ু রোগ, আর কোন মাছে জেনে নিন

হৃদযন্ত্র থেকে মস্তিষ্ক, চোখ থেকে হাড়ের কাঠামো সবই মজবুত ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে ইলিশে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিঙ্ক-সহ অজস্র পুষ্টিকর উপাদান।

ইলিশে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন-সহ অজস্র পুষ্টিকর উপাদান।

ইলিশে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন-সহ অজস্র পুষ্টিকর উপাদান।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১১:১৯
Share: Save:

একটা সময় ছিল যখন দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জন ইলিশ ধরা ছিল মানা। সেকালের মানুষ নিয়ম মানতেন অক্ষরে অক্ষরে। তাই বর্ষায় এই রুপোলি শস্য মিলত যথেষ্ট।

কোভিড অতিমারির বছরে আমরা যদি আবার সেই নিয়ম চালু করি ইলিশের আকাল সামলানো যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশা। শুধু স্বাদের দিক থেকেই নয় পুষ্টির দিক থেকে বিচার করলেও মাছ মহলে সম্রাট এই ইলিশই। হৃদযন্ত্র থেকে মস্তিষ্ক, চোখ থেকে হাড়ের কাঠামো সবই মজবুত ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে ইলিশে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিঙ্ক-সহ অজস্র পুষ্টিকর উপাদান।

তেনুয়ালোসা ইলিশা (ইলিশের বিজ্ঞান সম্মত নাম)-তে আছে যথেষ্ট পরিমাণে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বা পুফা। ডায়াবিটিস, হার্টের অসুখ, ক্যানসার প্রতিরোধের পাশাপাশি ওজন স্বাভাবিক রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে এই পুফা, বললেন ডায়েটিশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী। পুফাতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে হাই ডেনসিটি কোলেস্টেরল বা এইচডিএল যা আমাদের হৃদযন্ত্রের রক্তবাহী ধমনীকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যু, ‘সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম’ ঠেকাতে কী বিষয়ে সতর্ক থাকতেই হবে​

রক্ত চলাচল ভাল হলে হৃদযন্ত্র-ফুসফুস-সহ শরীরের যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকবে। ইলিশের অসাধারণ স্বাদের মূলে আছে বেশ কয়েকটি মোনো ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড সংক্ষেপে মুফা ও পুফা। ওলেইক, লেনোলেইক, লেনোলেনিয়িক, অ্যারাকআয়োডোনিক, ডকোসা-হেক্সায়োনিক অ্যাসিড-সহ নানা অত্যন্ত দরকারি উপাদান থাকে ইলিশ মাছ-সহ সমুদ্রের নানান তৈলাক্ত মাছে। এঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবথেকে স্বাদু রুপোলি শস্য ইলিশ।

আরও পড়ুন:সর্বনাশ তামাকেই, দেশে প্রতি ঘণ্টায় মুখের ক্যানসারে মৃত ৫​

আজকের কোভিড যুগে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। রেশমী জানালেন যে পুফা ও মুফা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের নানা ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে মানসিক অবসাদ, অ্যাংজাইটি ও স্নায়ুর ক্ষয়জনিত নানা অসুখ প্রতিরোধ করতে কার্যকর ভূমিকা নেয়।

মুফা ও পুফার গুণের শেষ নেই। এই ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বন্ধু কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা বাড়াতে সাহায় করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। আমেরিকান ডায়াবিটিস অ্যাসোশিয়েশন ও আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশন এই দুই লাইফস্টাইল সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করতে নিয়মিত মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

আরও পড়ুন:শুধুমাত্র অতিরিক্ত চিনি খেয়েই বিশ্বে মারা যান ৩.৫ কোটি মানুষ!​

দৈনিক ৫০–১০০ গ্রাম মাছ খেলে ভাল হয়। তবে বিজয়ার পর ইলিশ মাছ খাবেন না। এই সময়ে অন্যান্য তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য মাছ খাওয়া যেতে পারে। ইলিশ মরসুমি মাছ। তাই বর্ষার সময় পকেট বুঝে কয়েকদিন ইলিশের স্বাদে মজতে পারলে শরীর মন দুইই ফুরফুরে থাকবে সেকথা নিশ্চিত বলা যায়। পেটে আর পকেটে কুলোলে তবেই পাতে নিন ইলিশ।

হবু মায়েদের শারীরিক সমস্যা না থাকলে ইলিশ-সহ অন্য সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। ছবি: পিটিআই

সর্ষের সঙ্গে ইলিশের সঙ্গতে মাছের পুষ্টিগুণ কিছুটা বাড়ে। তবে বেশি তেল-মশলা দিলে স্বাদ ও পুষ্টি দুয়েরই খামতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বেশি বয়সের মানুষজনও ইলিশ খেতে পারেন নির্ভয়ে।

ক্রনিক কিডনির অসুখ বা অন্য কোনও জটিল শারীরিক সমস্যায় ইলিশ খাওয়া চলবে না। বয়স্কদের ডিমেনশিয়া, পার্কিনসনস ও অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ প্রতিরোধ করতে ইলিশ মাছে থাকা পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড কিছুটা সাহায্য করে। আবার ক্যালসিয়াম, ফসফরাসের মত উপাদান থাকায় হাড় মজবুত হয় বলে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো বাতের ব্যথার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: করোনা আবহে বাড়িতে অতিথি? কী কী খেয়াল রাখতেই হবে​

ইলিশ ছাড়াও যে কোনও সামুদ্রিক ও তৈলাক্ত মাছ খেলে একই ফল পাওয়া যাবে, বললেন রেশমী। হবু মায়েদের কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে ইলিশ-সহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। এর ফলে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক ও দৃষ্টি শক্তির বিকাশ হয়।

ইলিশ অল্প সময়ের জন্য পাতে পড়লেও বছরের অন্য সময় পমফ্রেট, আড়, ভেটকি, বেলে-সহ অন্যান্য মাছ খেতে হবে। আর হ্যাঁ, সরস্বতী পুজোর আগে ভুলেও ইলিশ বাড়িতে আনবেন না। ইলিশে সর্ষের সঙ্গে সামান্য সাদা তিল মিশিয়ে বেটে নিলে পুষ্টিমূল্য কিছুটা বাড়ে। রোজ পাতে থাকুক এক টুকরো মাছ। সুস্থ থাকুন। ভাল থাকুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Ilish Sea Fish ইলিশ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE