চলছে অভিযান। তাই খোঁয়াড়ের শুয়োরের ঠাঁই হয়েছে বাড়িতেই। শিলিগুড়ির জনতানগরে বিশ্বরূপ বসাকের ছবি।
এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে নেমে যেন নাকানিচোবানি খাচ্ছেন অনেকে। প্রথমে জোর দেওয়া হয়েছিল শুয়োর ধরার উপরে। তার পরে জলবাহিত জীবাণুর বিপদ সামাল দিতেও অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে কোন কাজটা আগে হবে আর কোনটা পরে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়ছে। আগে জল সচেতনতার প্রচার করা হবে না শুয়োর ধরার কাজ, তা নিয়ে একাধিক বিডিও অফিস, পুরসভায় তর্কাতর্কিও চলছে। এই অবস্থায়, রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে বাসিন্দাদের সচেতন করতে পুলিশকেও সামিল করছে রাজ্য সরকার। সোমবার সরকারি ভাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বৈঠক করে পুলিশকেও প্রচারে সামিল করান। এতদিন পুলিশের দায়িত্ব ছিল শুয়োর ধরার অভিযানে যাতে বাধা না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখা। এদিনের নির্দেশের পরে লিফলেট বিলি করবেন না শুয়োর ধরার অভিযানে যাবেন তা নিয়ে পুলিশের অনেকে বিভ্রান্ত।
কিন্তু জলবাহিত জীবাণু নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে গিয়ে এ দিন শিলিগুড়িতে দিনভর কোনও শুয়োর ধরা পড়েনি। বহু এলাকায় শুয়োরগুলি নদীর ধার থেকে তুলে নিয়ে শহরের মধ্যেই নিজেদের থাকার ঘরের পাশে গাদাগাদি করে রেখে চুপিসাড়ে ব্যবসা করতে দেখা গিয়েছে অনেককে।
জলপাইগুড়িতে শুয়োর ধরার উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর থেকেই। শুয়োর ধরে তা পাঠানো হচ্ছিল ময়নাগুড়ি লাগোয়া রামসাইয়ের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের খামারে। এদিন রামসাইয়ের লোকজন সেখানে গিয়ে ৩ দিনের মধ্যে সব শুয়োর না সরালে নিজেরাই তাড়িয়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। ফলে জলপাইগুড়িতে শুয়োর ধরার অভিযান প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেখানেও স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের কর্মীরা জল-সচেতনতার উপরেই বেশি জোর দিয়েছেন। কোচবিহার, আলিপুর দুয়ারে সকাল থেকে পানীয় জলের উৎস দূষণ মুক্ত করতে অভিযানে নামে পুরসভা-পঞ্চায়েত। কর্মীরা প্রায় সকলে তাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় শুয়োর ধরার অভিযান শিকেয় ওঠে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পানীয় জলের উৎস ঠিকঠাক করতে দিনভর ঘাম ঝরান স্বাস্থ্যকর্মীরা। ঘটনাচক্রে, মেডিক্যাল লাগোয়া এলাকায় বহাল তবিয়তে শুয়োর চরতে দেখা যায়।
এ দিন মন্ত্রী গৌতমবাবু সাত সকালে বৈঠকে বসেন সরকারি অফিসারদের সঙ্গে। পরে দলীয় পর্যায়ে কাউন্সিলরদের এলাকায় প্রচারে ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামার নির্দেশ দেন। পরে তিনি বলেন, “সচেতনতা প্রচারে শিলিগুড়ি পুলিশ সামিল হচ্ছে। তারা লিফলেট বিলির কাজ করবে। শিলিগুড়ি পুরসভায় ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। মহকুমাশাসকের দফতর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করবে। এসজিডেএ-র তরফে দু’টি ধোঁয়া ছড়ানোর যন্ত্র কিনে দেওয়া হচ্ছে। ৪টি ব্লকে আপাতত ২টি যন্ত্র রয়েছে।” ঠিক হয়েছে, পুরসভার পাঁচটি বরো এলাকায় সাফাইয়ের কাজে গতি আনতে এক সপ্তাহের জন্য ৫টি জেসিপি এবং ১৫টি ট্রিপারের (আবর্জনা একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে ফেলার ট্রাক) ব্যবস্থা করা হবে। মাটিগাড়া এবং অন্য ব্লকেও এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন বাজার এলাকাগুলি পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি জানান, সচেতনতা প্রচারে লিফলেট বিলি এবং সিডি তৈরি করার জন্য পুর দফতরের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই শহরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে বৈঠক হবে। তা হলে শুয়োর ধরার অভিযানের কী হবে? মন্ত্রী এই দিন জানান, প্রাণিসম্পদ দফতর সেই কাজের দায়িত্বে রয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের শিলিগুড়ির শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর মিলন হালদার জানান, তাঁদের অভিযান দিনভর চলেছে। কিন্তু সারা দিনে কোনও শুয়োরই তারা খুঁজে পাননি। ডেপুটি ডিরেক্টরের সন্দেহ, “খামার মালিকেরা শুয়োর লুকিয়ে ফেলছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy