Advertisement
০৮ মে ২০২৪

উত্তাপ কমানোর ইঙ্গিত দু’পক্ষেরই

কূটনীতিকদের মতে, ভারতের পাশাপাশি চিনও ডোকলাম নিয়ে উত্তেজনা কমাতে চাইছে। এই বিবৃতি থেকে তারই ইঙ্গিত মিলেছে। চিনা এলাকায় ভারতীয় সেনা কমছে, এমন ইঙ্গিত বেজিংই দেওয়ায় আখেরে দিল্লির সুবিধেই হবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০৫:২৩
Share: Save:

সরকারি মুখপত্রের মাধ্যমে গর্জন অথবা সীমান্তে যুদ্ধজিগির বাড়িয়ে তোলা নয়। আজ ডোকলাম নিয়ে ১৪ পাতার দীর্ঘ কূটনৈতিক বিবৃতি প্রকাশ করল চিনা বিদেশ মন্ত্রক। তাতে বেজিং জানিয়েছে, ডোকলামে কমে গিয়েছে ভারতীয় সেনার সংখ্যা। কূটনীতিকদের মতে, ভারতের পাশাপাশি চিনও ডোকলাম নিয়ে উত্তেজনা কমাতে চাইছে। এই বিবৃতি থেকে তারই ইঙ্গিত মিলেছে। চিনা এলাকায় ভারতীয় সেনা কমছে, এমন ইঙ্গিত বেজিংই দেওয়ায় আখেরে দিল্লির সুবিধেই হবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

কূটনৈতিক বিবৃতিতে চিন-সিকিম সীমান্তের ঐতিহাসিক অবস্থান বিশদে তুলে ধরে সঙ্কটের ‘মসৃণ নিষ্পত্তি’র জন্য ভারতীয় সেনাকে ডোকলাম ছেড়ে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে চিন দাবি করেছে, ১৮ জুন ২৭০ জন ভারতীয় সেনা দু’টি বুলডো়জার নিয়ে ডোকলামে এসেছিলেন। এক সময়ে সেখানে প্রায় ৪০০ ভারতীয় সেনা ছিলেন। কিন্তু এখন সেখানে রয়েছেন মাত্র ৪০ জন!

চিনের এই বিবৃতির পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে অবশ্য পাল্টা জানানো হয়েছে, যে দিন থেকে দু’দেশের সেনা ডোকলামে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে তখন থেকেই ৩৫০ জন ভারতীয় সেনা সেখানে রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কোনও সেনা প্রত্যাবর্তনের ঘটনা ঘটেনি। পাশাপাশি চিনা বিদেশ মন্ত্রকের দীর্ঘ বিবৃতির জবাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জানিয়েছে, ‘‘ভারত–চিন সীমান্তে শান্তি এবং স্থিতি বজায় রাখাটা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পূর্বশর্ত। এ নিয়ে গত ৩০ জুন প্রকাশিত বিবৃতিতে যা বলা হয়েছিল, সেটাই ভারতের ঘোষিত অবস্থান।’’

আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক করিডর ঘিরে চিন-বিরোধী ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে পাকিস্তানে

কূটনীতিকদের মতে, এ দিনের ঘটনাপ্রবাহ এই ইঙ্গিতই করছে যে উত্তেজনা কমানোর জন্য দু’দেশের পক্ষ থেকেই সক্রিয়তা শুরু হয়ে গিয়েছে। না হলে বেজিংয়ের ধুলো ঝেড়ে অতীতের দস্তাবেজ বের করে ভারতের কাছে কিছু প্রমাণ করার দায় থাকত না। অন্য দিকে ভারতের প্রতিক্রিয়াও কার্যত যথেষ্টই নরম। কূটনীতিকদের মতে, চিন স্নায়ুর লড়াইয়ে ভারতকে বেশ কিছুটা চাপে ফেলতে পেরেছে।
কিন্তু এখন তাদের উপরেও মার্কিন চাপ বাড়ছে। সামনেই চিনা কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস। আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সেপ্টেম্বর মাসে চিনে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন। ফলে দু’পক্ষই উত্তেজনা কমাতে চেয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের চিন সফরের সময়েই উত্তেজনা কমানোর চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছিল বলে ধারণা কূটনীতিকদের।

বেজিং আজ বিবৃতিতে ১৮৯০ সালের চিনা-ব্রিটিশ চুক্তির উল্লেখ করেছে। তাদের দাবি, সেই চুক্তি অনুযায়ী ডোকলাম চিনের অধিকারে এসেছিল। ভারত অবশ্য আগেই এই দাবির বিরোধিতা করেছে। ডোকলামে সড়ক নির্মাণের আগে সীমান্ত সৌজন্যের খাতিরে ভারতকে আগাম জানানো হয়েছিল বলেও দাবি চিনের। ভারত এ নিয়েও আজ রা কাড়েনি।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভুটানকে পাশে নিয়ে চিনের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করার পথ থেকেও ক্রমশ পিছু হটতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। কারণ কিছুটা গোপনে ভুটানও চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগ বাড়িয়ে চলেছে। ডোকলাম নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ভুটানি রাষ্ট্রদূত দিল্লির চিনা দূতাবাসে সে দেশের সেনার প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE