ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: ডার্বিতে খেলতে আসার আগের দিনই তো আপনার গাড়িটা দূর্ঘটনায় পড়ল? শুনলাম অল্পের জন্য বেঁচেছেন?
শঙ্করলাল চক্রবর্তী: (হেসে) বড় ফাঁড়াটা কেটে গেল মনে হচ্ছে। কোথা থেকে এসে ওই গাড়িটা আমার গাড়িতে ধাক্কাটা মারল কে জানে। খুব বেঁচে গেছি।
প্র: আপনি তো ভাগ্যে বিশ্বাস করেন। ডার্বির ফাঁড়াটা তা হলে কেটে গেল বলছেন? কলকাতা লিগ পাওয়াটা সহজ হয়ে গেল?
শঙ্করলাল: সেটা বলতে পারব না। তবে ম্যাচটা জিততে হবে। সেই মানসিকতা নিয়ে নামব রবিবার। রেনবো ম্যাচে পয়েন্ট নষ্টের পর বলেছিলাম, এত হাহুতাশ করার কিছু নেই। পরের তিনটে ম্যাচ জিততে পারলেই চ্যাম্পিয়ন। দুটো জিতেছি। শেষটা বাকি।
প্র: আপনার স্বপ্নকে ধাক্কা দেওয়ার লোক তো ইস্টবেঙ্গলে অনেক। প্লাজা, আমনা, গ্যাব্রিয়েল।
শঙ্করলাল: সেটা তো সত্যিই। সে জন্যই তো আমরা ওদের ধরে ধরে হোমওয়ার্ক করছি। চুলচেরা বিশ্লেষণ যাকে বলে। তার পর দেখা যাবে মাঠে কে কাকে ধাক্কা দেয়।
প্র: প্লাজা দুর্দান্ত ফর্মে। ইস্টবেঙ্গল প্রচুর গোল করছে। সবাই করছে। আপনার ডিফেন্স আটকাতে পারবে?
শঙ্করলাল: দেখা যাক। আমরা তৈরি হচ্ছি। প্লাজার হ্যাটট্রিক দেখেছি। মহমেডানের বিরুদ্ধে ম্যাচে শেষ গোলটাও। প্লাজা গোল না করলে তো ইস্টবেঙ্গল হেরে যেত সে দিন। সব দেখেছি। কোনও ম্যাচ বাদ রাখিনি। রবিবারের জন্য অপেক্ষা করুন। আমাদেরও তো কামো-ক্রোমা বারোটা গোল করেছে।
প্র: ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে বেশি খেলেছেন। মোহনবাগানেও। সবাই বলে এই ম্যাচে না কি লাল-হলুদ জার্সিধারীদের বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরে।
শঙ্করলাল: দুটো ড্রেসিংরুমের পরিবেশ আমি দেখেছি। আগে ওসব হত। এখন হয় না। আধুনিক কোচিং-এ ফুটবলারদের অন্য উপায়ে মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হয়। পেশাদার ফুটবলাররা জানে কখন বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরাতে হয়।
প্র: মোহনবাগানের তেরো বছর পর আই লিগ জেতার অন্যতম কারিগর আপনি। গত চার বছর ছিলেন সঞ্জয় সেনের ছায়ায়। এ বার তো একা কুম্ভ কোচ। সঞ্জয়দার পরামর্শ নিলেন শিলিগুড়ি আসার আগে?
শঙ্করলাল: সঞ্জয়দার যা শরীরের অবস্থা তাতে তাঁর সঙ্গে ফুটবল নিয়ে আলোচনা করতে যাওয়ার কথা ভাবিনি। গতবারও কলকাতা লিগে কোচিং করিয়েছি। ডার্বিটা হয়নি। এ বার তাই বেশ রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে। সঞ্জয়দার কাছে যা শিখেছি সেটা কাজে লাগাতে চাই। ময়দানে কোচ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে কিন্তু ডার্বি জিততে হবে।
শিলিগুড়িতে সমর্থকদের উন্মাদনা তুঙ্গে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
প্র: যে কোনও ডার্বিতে নামার সময় চিমার কথা মনে পড়ে? ওঁর জন্যই তো জীবনটা শেষ হয়ে গেল?
শঙ্করলাল: ওটা একটা দুর্ঘটনা। তারপরও তো ফিরে এসে ডার্বি জিতেছি। সুভাষ ভৌমিক কোচ ছিলেন তখন। ডার্বি বরাবরই আমাকে সঙ্গ দিয়েছে। ফুটবলার জীবনে যতদূর মনে পড়ছে আটটা ডার্বি খেলেছি দুই প্রধানে। বেশিরভাগ ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে। হেরেছি মাত্র একটা। দু’বার বাঁশির ম্যাচটা না ধরে। ফলে কোনও চাপ নেই। এটা মানসিক যুদ্ধ। সঙ্গে ট্যাকটিক্যাল গেমও। অন্য যে কোনও ম্যাচের থেকে আমাদের মতো বঙ্গসন্তানদের কাছে ডার্বির আলাদা গুরুত্ব।
প্র: কিন্তু কামো-ক্রোমা-কিংগসলে-লিংডোদের মধ্যে এই আবেগ আছে?
শঙ্করলাল: অবশ্যই। এদের মধ্যে অনেকেই অনেক দিন ধরে কলকাতায় খেলেছে। সব জানে। আমার চেয়ে বেশি জানে হয়তো।
প্র: খালিদ জামিল আর আপনি প্রায় সমসাময়িক ফুটবলার।
শঙ্করলাল: (থামিয়ে দিয়ে) খেলেছি। কিন্তু তখন ওকে চিনতাম না। খালিদের নাম কাউকে বলতে শুনিনি। কোচ হওয়ার পর চিনেছি। সফল কোচ। আইজলকে আই লিগ জিতিয়েছে। মুম্বইতে কোচিং করিয়েছে।
প্র: তা হলে ট্যাকটিক্যাল ও মেন্টাল যুদ্ধটা জমবে বলছেন?
শঙ্করলাল: অবশ্যই। ওর হাতেও ভাল অস্ত্র আছে। আমাদেরও আছে। সেটা কে কী ভাবে প্রয়োগ করে তার উপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। বললাম না, ডার্বি অন্য ম্যাচ।
কলকাতা ছাড়ার আগে অনুশীলন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
প্র: শিলিগুড়ি তো ইস্টবেঙ্গলের শহর। টিকিট কিনছেন তো লাল-হলুদ সমর্থকরাই বেশি। এটা বাড়তি চাপ?
শঙ্করলাল: গতবার আই লিগ ডার্বি জেতার পর স্টে়ডিয়ামের চেহারাটা দেখেছিলেন। ওসব কোনও ব্যাপার নয়। খেলা তো গ্যালারিতে হবে না।
প্র: খেতাব পেতে গেলে জিততেই হবে। কতটা আশাবাদী?
শঙ্করলাল: আমি জ্যোতিষী নই। বললাম না এটা মেন্টাল গেম। ওয়ান ডে ক্রিকেট ম্যাচের মতো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy