বিষাদ: ব্যর্থ কোহালি। কেপ টাউনে। ছবি: এএফপি
হাতের মুঠোয় চলে আসা জয় হাতছাড়া করে আসার হতাশা চোখেমুখে লেগে রয়েছে। তার মধ্যেই স্বীকার করে গেলেন ক্যাপ্টেন কোহালি যে, মূলত ব্যাটিংয়ের দোষেই ডুবল টিম। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে এ-ও বলে গেলেন যে, হার থেকে শিক্ষা নিয়ে ফেরত আসাটাই লক্ষ্য তাঁদের। তুলে দেওয়া হল সাংবাদিক সম্মেলনের নির্বাচিত অংশ—
প্রস্তুতি ঠিক ছিল কি না: আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভাল হয়েছিল। যথেষ্ট প্রস্তুতির অবকাশ ছিল না, বলতে চাই না। ওরাও ১৩০ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। আর ওরা সব সময় এখানে খেলছে। এটা এমন একটা উইকেট ছিল, যেখানে সারাক্ষণ বোলাররা সাহায্য পাচ্ছিল। আমার মনে হয়, ব্যাটেই আমরা ডুবিয়েছি দলকে। পরপর উইকেট হারাতে থাকলে টেস্ট ম্যাচে দাঁড়ানো যায় না। প্রথম ইনিংসে ১২-৩ হয়ে গিয়েছিল ওরা। সেখান থেকে আমরা ওদের বেরিয়ে যেতে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ সকালে সেই ক্ষতি মেরামত করেছিল বোলাররা। ২০৮ রান করা যায় বলে আমাদের বিশ্বাস ছিল। এই রান না করার কোনও কারণ নেই। কিন্তু ব্যাট হাতে আমাদের ২০-৩০ করলে হবে না। ৭০-৮০ করতে হবে এই সব পরিস্থিতিতে জিততে গেলে।
ব্যাটিংই আসল কি না: একদমই তাই। কুড়ি উইকেট নিয়েও কিছু লাভ হবে না যদি আমরা এ রকম ব্যাট করতে থাকি। আমাদের বুঝতে হবে, একই সঙ্গে মনঃসংযোগ রাখতে হবে, আবার তীব্রতাও দেখাতে হবে। হার্দিক (পাণ্ড্য) দেখিয়েছে কী করা যেতে পারে। প্রথম ইনিংসে আমার মনে হয়, ৫০-৬০ রান আমরা বোলিংয়ে বেশি দিয়েছি। ওটা যদি না হতো, তা হলেও পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত। ব্যাটিংয়েও আরও অনেক ভাল করার জায়গা রয়েছে। এখন বড় কথা শোনাতে পারে কিন্তু আমরা ম্যাচটায় ঠিকঠাকই এগোচ্ছিলাম। আমরা হতাশ যে, শেষ পর্যন্ত কাজটা করে উঠতে পারলাম না। এ সব পরিস্থিতিতে হয় একটা বড় পার্টনারশিপ দরকার, নয়তো প্রত্যেক উইকেটে লড়াই দেখাও। প্রত্যেক জুটিতে অন্তত ২৫-৩০ করে যোগ করতে থাকো। তা হলেও হতো।
ব্যাটিং নীতি কী হবে: খুব খোলসে ঢুকে পড়লে কোনও লাভ হবে না। ইতিবাচক থাকতে হবে, আবার উল্টোপাল্টা শটও খেলা যাবে না। ওদের বোলাররা খুবই চাপ তৈরি করছে। সেটাকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। আমার মনে হয়, পরের ইনিংস থেকে আমাদের আরও ইতিবাচক ব্যাটিং করতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘প্রথম দলে দরকার ছিল রাহানেকে’
ফিল্যান্ডার কেন বিপজ্জনক: ভার্নন অন্য রকম বোলার। ডেল স্টেন না থাকার পরেও যে ভাবে সেটা বুঝতে দিল না, প্রশংসা করতেই হবে। অফস্টাম্পের বাইরে অনিশ্চয়তার করিডরে বল করেই যাবে ও। কিন্তু এই পর্যায়ে ভাল বোলিং খেলার রাস্তাও আবিষ্কার করতে হবে আমাদের। আমি আর রোহিত যখন ব্যাট করছিলাম, বেশ স্বচ্ছন্দই ছিলাম। কিন্তু চার ওভারে আমরা চারটি উইকেট হারালাম। ওটাই পার্থক্য তৈরি করে দিল।
পিচ নিয়ে অভিযোগ নেই: দারুণ পিচ। আমার খুবই ভাল লাগে এই ধরনের পিচ। টেস্ট ক্রিকেট এই ধরনের বাইশ গজের জন্য আরও উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে। একটা গোটা দিন বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার পরেও চার দিনের মধ্যে ফয়সালা হয়ে গেল। এবং, একপেশে ম্যাচ হয়েছে বলা যাবে না। দু’টো দলই সুযোগ তৈরি করেছিল, শেষে জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা।
রাহানে-কে বসানোর যুক্তি: আমরা সাম্প্রতিক ফর্ম দেখে প্রথম একাদশ বেছেছিলাম। শেষ তিনটে টেস্টেই রোহিত রান করেছে, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ সিরিজেও খুব ভাল ব্যাট করছিল। রোহিত আর শিখর দু’জনেই রানের মধ্যে ছিল। এখন পিছন ফিরে তাকিয়ে অনেক কিছুই বলা যেতে পারে কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্মের উপর আস্থা রেখে আমরা প্রথম একাদশ বেছেছিলাম।
বাঁ হাতি থাকলে সুবিধে কি না: কিছুটা সুবিধে তো হয়-ই। ওদের দু’জন বাঁ হাতি আছে। বোলারদের লাইন-লেংথে তারতম্য ঘটাতে হয়, যেটা ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। প্রতিপক্ষের কাজ কী ভাবে কঠিন করা যায়, সেটাও মাথায় রাখতে হয়।
নানা প্রশ্নের মুখে: আমার মনে হয় না, উদ্বেগ ছড়ানোর কোনও কারণ আছে বলে। ওদের স্কোরবোর্ড থেকে যদি এ বি-র রান আর কিছুটা ফ্যাফের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংকে সরিয়ে নেন, তা হলে দেখা যাবে ওরাও খুব সমস্যা পড়েছে। আমার মনে হয়, পরের টেস্টে একই রকম উইকেট থাকলে আমরা অনেক ভাল খেলব। আমি এখনও বিশ্বাস করি, এখানে এসেও জেতার মতো ক্রিকেট খেলার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে এবং সেটা আমরা এই টেস্টেও দেখিয়েছি। ২০৮ রানের টার্গেট স্থির হওয়ার পরে ড্রেসিংরুমে আমরা খুবই আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। দিনের শেষে সকলেই তাই খুব হতাশ। এই হার আমাদের সকলকে আঘাত করছে এবং আঘাত করাই উচিত। তবেই না ভুলত্রুটি শুধরে ফিরে আসা সম্ভব।
বোলারদের নিয়ে ভাবনা: আজ সকালে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলি। টিম চাইছিল বোলারদের থেকে নিয়ন্ত্রিত পারফরম্যান্স। বুমরা, শামি, ভুবনেশ্বর প্রত্যেকে সেটা করেছে। কিন্তু আবার যদি এ রকম উইকেট পাই, আমাদের ব্যাটিংয়ে অনেক উন্নতি করতে হবে। এ নিয়ে প্রশ্ন নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy