Advertisement
০২ মে ২০২৪
India vs Australia

India vs Australia 2020-21: ৩৬-এর অ্যাডিলেড থেকে মিশন মেলবোর্ন, কেমন ছিল ভারতীয় দলের সফর?

আইসিসি-র বেছে নেওয়া টেস্ট ইতিহাসের সেরা সিরিজ, ভারতের সেই অস্ট্রেলিয়া সফরকে কী ভাবে দেখেছিলেন অশ্বিন এবং শ্রীধর।

৩৬-এর অ্যাডিলেড থেকে মিশন মেলবোর্ন।

৩৬-এর অ্যাডিলেড থেকে মিশন মেলবোর্ন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২১ ১৯:০৬
Share: Save:

এক জন ছিলেন মাঠে, অন্য জন সাজঘরে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং আর শ্রীধর। আইসিসি-র বেছে নেওয়া টেস্ট ইতিহাসের সেরা সিরিজ, ভারতের সেই অস্ট্রেলিয়া সফরকে কী ভাবে দেখেছিলেন দুই জনে? একে অপরের সঙ্গে কথা বলে সেই মুহূর্তই ভাগ করে নিলেন সমর্থকদের সঙ্গে। এই প্রতিবেদনে প্রথম পর্ব।

অশ্বিনের মতে ১০০ বছরের ইতিহাসে এমন সিরিজ তিনি দেখেননি। সমর্থন করেন শ্রীধর। তিনি বলেন, “প্রতিটা মুহূর্তে এক জন হিরো উঠে এসেছে। যখনই আমাদের ইঞ্জেকশনের প্রয়োজন হয়েছে, কেউ না কেউ ঠিক এগিয়ে এসেছে দায়িত্ব নিয়ে।” অশ্বিন বলেন, “অ্যাডিলেড দিয়েই শুরু করা যাক।”

ক্যাচ ফসকানো এবং ৩৬-এর অ্যাডিলেড

গোলাপি বলের সেই টেস্টে একের পর এক ক্যাচ ফেলেছিল ভারতীয় দল। সাজঘরে বসে কী মনে হচ্ছিল শ্রীধরের? ভারতের ফিল্ডিং প্রশিক্ষক বলেন, “আমি তো ভেবেছিলাম চাকরিটাই চলে যাবে। একদিনের সিরিজেও ক্যাচ পড়েছিল। মনে হয়েছিল পরের ম্যাচের আগেই আমাকে তাড়িয়ে দেবে। অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার তখন ৭ উইকেটে ১১১ রান। তার আগেও দুটো ক্যাচ পড়েছিল। লাবুশানে একটা হুক করল, ফের ক্যাচ পড়ল। ভয় করছিল খুব। ভাবছিলাম কী করে মুখ দেখাব রবি শাস্ত্রীর কাছে। তাকিয়ে দেখি নিজের জায়গায় নেই ও।” শ্রীধরকে কথার মাঝে থামিয়ে অশ্বিন বলেন, “তোমরা কী ভাবে ম্যাচ দেখ সেটা আগে বলে দাও, তা হলে সবার বুঝতে সুবিধা হবে।” শ্রীধর বলেন, “প্রশিক্ষকদের বসার জায়গায় প্রথমে শাস্ত্রী, পাশে ভরত অরুণ, তারপর আমি এবং আমার পাশে বিক্রম রাঠৌর।” অশ্বিন বলে ওঠেন, “হরি থাকে তো। আমাদের স্কোরার।” শ্রীধর বলেন, “হ্যাঁ, ওকে বাদ দিয়ে ফেলেছি। সব সময় কম্পিউটারে চোখ ওর।” ছন্দ ধরিয়ে দেন অশ্বিন, শ্রীধর ফেরেন ক্যাচের কথায়। তিনি বলেন, “শাস্ত্রী দেখি প্রায় মাটিতে শুয়ে পড়েছে। চিৎকার করে উঠল, ‘এ কী হল!” সিরিজ জিতে উঠে এই কথোপকথনের সময় দুই জনে হাসলেও সেই সময় যে খুব স্বস্তিতে ছিলেন তা তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট।

অ্যাডিলেডে আউট হয়ে ফিরছেন বিরাট।

অ্যাডিলেডে আউট হয়ে ফিরছেন বিরাট। ছবি: টুইটার থেকে

অ্যাডিলেডের কথা উঠলে ভারতের ৩৬ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা তো উঠবেই। সেই ঘটনার কথা তুলে ধরলেন শ্রীধর। বলেন, “আমাদের আগের দিন রাতে ছিল ১ উইকেট ৯ রান। দিনের খেলা শুরুর আগে সেই ম্যাচে সুযোগ না পাওয়া ঋষভ পন্থ এসে উইকেটরক্ষণের অনুশীলনে যেতে চাইল। বলল, ‘সারাদিন তো ব্যাটিং হবে আজ, আমি অনুশীলন করি।’ ব্যাটসম্যানরা মাঠে নামল আর আমরা অনুশীলনে গেলাম। দশ মিনিটের মধ্যে আমরা খালি দর্শকের আওয়াজ পাচ্ছি। ওখান থেকে দেখতেও পাচ্ছি না কী হচ্ছে। প্রতি বলে দর্শকের আওয়াজ পাচ্ছি। কিছু একটা হয়েছে বুঝতে পেরে ফিরে দেখি অশ্বিন আর হনুমা বিহারী ব্যাট করছে। সবে তো ২০ মিনিট হয়েছে!”

৩৬ রানে ইনিংস শেষের সঙ্গে মহম্মদ শামিকেও হারায় ভারত চোটের জন্য। দলকে ছেড়ে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে দেশে ফিরবেন বিরাট কোহলীও। এমন অবস্থায় কী ভাবে নিজেদের সামলালেন অশ্বিনরা? শ্রীধর বলেন, “ক্রিকেটারদের আমরা কোনও কথাই বলিনি ওই বিষয়। অ্যাডিলেডে নদীর ধারে ঘুরতে বেরিয়েছিল দল। কাউকে অনুশীলন করতে দেওয়া হয়নি।” তা হলে মেলবোর্নের জন্য কী ভাবে তৈরি হল ভারত?

মিশন মেলবোর্ন

অশ্বিন বলেন, “অ্যাডিলেডেই শুরু হয়ে গিয়েছিল মেলবোর্নের প্রস্তুতি। কোহলী সবার সঙ্গে দেখা করে বিদায় নিল কলেজের শেষ দিনের মতো। আমরা সবাই বাচ্চাদের মতো বললাম এই অবস্থায় যেও না, এমন অবস্থায় একটা বৈঠক হল।” শ্রীধর বলেন, “রাত তখন সাড়ে ১২টা। কোহলী মেসেজ করে লেখে কী করছ? আমি অবাক। এত রাতে কেন মেসেজ করছে? বলল শাস্ত্রী, অরুণ, রাঠৌর সবাই আছে। আমিও যোগ দিলাম। ওখান থেকেই শুরু হল মিশন মেলবোর্ন।”

শাস্ত্রীর হুঙ্কার এখনও কানে বাজছে শ্রীধরের। শাস্ত্রী বলেন, “এই ৩৬টাকে ব্যাজের মতো পরে নাও, এটাই আমাদের শক্তিশালী দল তৈরি করবে।” অজিঙ্ক রহাণেও পর দিন সকালে যোগ দিয়েছিলেন সেই বৈঠকে। শ্রীধর বলেন, “৩৬ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পর ব্যাটিংকে শক্তিশালী করার দিকে মন না দিয়ে কোহলীর জায়গা দলে এল জাডেজা। মাস্টারস্ট্রোক হয়ে উঠল ওই সিদ্ধান্তটাই।” অনুশীলন বাতিল করার সিদ্ধান্ত ছিল বোলিং প্রশিক্ষক অরুণের। তিনি বলেন, “এখন অনুশীলন করলে ছেলেদের মধ্যে বিরক্তি তৈরি হবে। ওরা বেশি ভাববে। সেটা ঠিক নয়।” অনুশীলন না করে একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিল ভারতীয় দল। সেখানে অভিনয় করে বোঝানোর খেলা হয়েছিল। শ্রীধর জানান, সব চেয়ে বেশি ক্রিকেটারদের সম্পর্কে জানেন অশ্বিন। অশ্বিনকে ‘ক্রিকোপিডিয়া’ উপাধি দেন শ্রীধর।

মেলবোর্নের সেই ম্যাচে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল রহাণের শতরান।

মেলবোর্নের সেই ম্যাচে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল রহাণের শতরান। ছবি: টুইটার থেকে

মেলবোর্নে টস জয় মানেই ব্যাট করবে যে কোনও দল। সেটাই হল। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিল টিম পেন। শ্রীধর বলেন, “টসের পাঁচ মিনিট আগের কথা বলি। রবি শাস্ত্রী এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে এখানে শেষ কবে আগে ফিল্ডিং করা দল জিতেছে? আমার সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন এটা। শেষ ৫ ম্যাচে যে দল আগে ব্যাট করেছে তারাই জিতেছে বলে জানায় শাস্ত্রী। সেই সঙ্গে বলে, ‘আমার মনে হচ্ছে ড্যাম্প উইকেট। আমাদের জন্য এটা ভাল হতে পারে।” এই সময় অশ্বিন বলেন, “সাজঘরে এসে আমাকে বলে ১০ ওভারের মধ্যে বল করতে। আমি তো অবাক। মেলবোর্নে প্রথম দশ ওভারের মধ্যে আমি বল করব?” শাস্ত্রী বুঝেছিলেন বল স্পিন করবে, সেই অনুযায়ী নির্দেশ দিয়েছিলেন রহাণেকেও। বল করতে এসে অবাক অশ্বিন। প্রথম বল ড্রপ খেয়ে ঘুরল, সেই সঙ্গে বাউন্সও ছিল। অশ্বিন তখন শিকারের জন্য ছটফট করছেন। অন্য দিকে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শ্রীধর। তিনি বলেন, “তোমার বলের স্পিন দেখে আমার তখন চিন্তা, পন্থ কী করবে? সিরিজে প্রথম বার খেলতে নেমেছে ও।”

মেলবোর্নের সেই ম্যাচে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল রহাণের শতরান। অশ্বিনের মতে, রহাণের হাত কেউ বেঁধে দিয়েছিল। অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাটই ছোঁয়াচ্ছিলেন না ভারত অধিনায়ক। যেন পণ করে নেমেছিলেন সেই ম্যাচে। শ্রীধর বলেন, “অস্ট্রেলিয়া দলের সেরা টেস্ট বোলিং দেখেছিলাম সেই দিন। রহাণে এবং পূজারা তার বিরুদ্ধেই লড়াই করল।” সিরিজ ১-১ করল ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE