Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নষ্ট রুটি, পচা মাংসে দুঃস্বপ্ন-সফর প্রিমিয়াম ট্রেনে

চলতি মাসেরই ৫ তারিখে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হাওড়ামুখী শতাব্দী এক্সপ্রেসে বিকল হয়ে গিয়েছিল বাতানুকূল যন্ত্র। বুধবার রাতে পচা খাবার দেওয়া হল বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়ামুখী প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসে। নামীদামি ট্রেনেও রেলের পরিষেবা কোন তলানিতে পৌঁছেছে, ১০ দিনের মধ্যে এই দু’টি ঘটনায় ফের তা বেআব্রু হয়ে গেল।

পচা খাবার নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসের যাত্রী। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

পচা খাবার নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসের যাত্রী। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:৫৮
Share: Save:

চলতি মাসেরই ৫ তারিখে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হাওড়ামুখী শতাব্দী এক্সপ্রেসে বিকল হয়ে গিয়েছিল বাতানুকূল যন্ত্র। বুধবার রাতে পচা খাবার দেওয়া হল বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়ামুখী প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসে।

নামীদামি ট্রেনেও রেলের পরিষেবা কোন তলানিতে পৌঁছেছে, ১০ দিনের মধ্যে এই দু’টি ঘটনায় ফের তা বেআব্রু হয়ে গেল।

এক মাস আগে টিকিট কাটলে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরুর বিমান-ভাড়া হাজার সাতেক টাকা। সদ্য চালু হওয়া প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসের কথা শুনে পাঁচ হাজার টাকায় ওই ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন সবিতা কাঞ্জিলাল। বুধবার রাতে সেই ট্রেনের পচা খাবার মুখেই তুলতে পারলেন না তিনি।

শুধু সবিতাদেবীই নয়, ওই ট্রেনের বেশ কয়েকটি কামরার যাত্রীকে সারা রাত কার্যত অভুক্তই থাকতে হল। খিদের মুখে যে-ক’জন যাত্রী বাধ্য হয়ে সেই পচা খাবার খেয়েছিলেন, রাতে তাঁদের অনেকেরই বমি, পায়খানা শুরু হয়ে যায়। যাত্রীদের অভিযোগ, ওই অবস্থায় তাঁদের চিকিৎসারও কোনও ব্যবস্থা করেননি রেল-কর্তৃপক্ষ। বুধবার বেলা ১১টায় বেঙ্গালুরু থেকে ছেড়েছিল প্রিমিয়াম এক্সপ্রেস। যাত্রীরা জানান, ওই দিন দুপুরের খাবার ছিল মন্দের ভাল। কিন্তু রাতের খাবার আর মুখেই দেওয়া যায়নি।

কী রকম ছিল সেই খাবার?

সবিতাদেবী জানান, রাতে খেতে দেওয়া হয়েছিল জিরা রাইস আর হাতরুটি। রুটিগুলি ঠিকমতো সেঁকা হয়নি। তা থেকে পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল। সঙ্গে ছিল জলের মতো ডাল। সেটাও টকে গিয়েছে। সঙ্গে পচে যাওয়া মুরগির মাংস। দই এতটাই পচে গিয়েছিল যে, মুখে তোলা যায়নি।

রেল বাজেটে প্রিমিয়াম ট্রেনের কথা ঘোষণা করেছিলেন রেলমন্ত্রী। বলা হয়েছিল, সম্পূর্ণ বাতানুকূল এই ট্রেনের ভাড়া চাহিদা অনুযায়ী ওঠানামা করবে। ঠিক বিমান-ভাড়ার মতো। ট্রেনটির পরিষেবাও হবে অন্য ট্রেনের চেয়ে অনেক উঁচু মানের।

ভোটের সপ্তাহখানেক আগে চালু হওয়া এই প্রিমিয়াম ট্রেনে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়ায় আসার টিকিট কেটেছিলেন সবিতাদেবীর মতো অনেকেই। ভাড়ার মধ্যেই ধরা ছিল খাবারের দাম। সবিতাদেবী বলেন, “প্রিমিয়াম ট্রেনেও যে পরিষেবার এই হাল হবে, তা ভাবতেই পারিনি। এর চেয়ে তো বিমানে যাওয়াই ভাল ছিল।” একই বক্তব্য ওই ট্রেনের যাত্রী অমিতাভ বসু, রূপা বসু, রীতা রায়, শর্বরী নাগ, অশোক নাগেদেরও। তাঁদের দাবি, রেলকে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। যথাযথ পরিষেবার বন্দোবস্ত না-করা পর্যন্ত প্রিমিয়াম ট্রেন বন্ধ রাখার দাবিও জানান ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি না-করেই যে তড়িঘড়ি ওই প্রিমিয়াম ট্রেন চালু করা হয়েছে, রেলকর্তাদের একাংশ তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁরা জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরনো বাতানুকূল কামরা মেরামত করে গড়ে তোলা হয়েছে প্রিমিয়াম ট্রেন। বুধবারের ট্রেনটির প্যান্ট্রি কারে শুধু বাতানুকূল প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জনা খাবার তৈরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাকি খাবার তোলা হচ্ছে বিভিন্ন স্টেশন থেকে। সেই সব খাবার কামরার ‘ফ্রিজ’ বা ‘হটবক্স’-এ রাখার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ কামরার ফ্রিজ বা হটবক্স খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। তাই গরমে অনেক ক্ষেত্রেই খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রেল সূত্রের খবর, বুধবার ওই প্রিমিয়াম ট্রেনে যে-খাবার দেওয়া হয়েছিল, তা তোলা হয়েছিল কাঠপাড়ি স্টেশন থেকে। ট্রেনটি কাঠপাড়ি পৌঁছয় বেলা ৩টে নাগাদ। প্রায় ছ’ঘণ্টা পরে, রাত ৯টা নাগাদ সেই খাবার পরিবেশন করতে গিয়েই বিপত্তি ঘটেছে।

রেলেরই এক কর্তার অভিযোগ, রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো সব প্রিমিয়াম ট্রেনই পুরোপুরি বাতানুকূল হওয়ার কথা। কিন্তু পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব রেল-সহ অনেক ক্ষেত্রেই প্রিমিয়াম ট্রেন সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা যায়নি। নতুন কামরা (এলএইচবি কামরা) না-থাকায় ওই সব ট্রেনে সাধারণ কামরাও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলে এখন সপ্তাহে ৪-৫টা করে প্রিমিয়াম ট্রেন চালাচ্ছে। অভিযোগ, সব ট্রেনেরই হাল কার্যত একই রকম। প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটেও ওই সব ট্রেনের যাত্রীরা উঁচু মানের পরিষেবা পাওয়া দূরের কথা, অনেক সময়ে সাধারণ পরিষেবাটুকুও পাচ্ছেন না। বেঙ্গালুরু-হাওড়া প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসের এক যাত্রীর অভিযোগ, “প্রায় ৩০ ঘণ্টার যাত্রায় মাত্র দু’বোতল জল পেয়েছি। তা-ও রীতিমতো ঝগড়া করে।”

কী বলছেন রেলকর্তারা?

“খাবার খারাপ হলে দায় রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম সংস্থা (আইআরসিটিসি)-র। আমরা দেখছি, কী করা যায়,” বললেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার সুচিত্ত দাস।

পরিকাঠামো ছাড়া এই ট্রেন চালানো হচ্ছে কেন?

সুচিত্তবাবু বলেন, “এটা রেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত।” রেল বোর্ডের কর্তারা অবশ্য এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

রেল কেটারিং সংস্থা কী বলছে?

আইআরসিটিসি-র এক কর্তা বলেন, “রেল-কর্তৃপক্ষ খাবার রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা না-করলে খাবার তো নষ্ট হবেই। তবে আগামী দিনে কাঠপাড়ি স্টেশনের বদলে আরও কয়েক ঘণ্টা পরের একটি স্টেশন থেকে ওই ট্রেনে খাবার তোলার ব্যবস্থা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

premium train
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE