Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পঞ্চাশ বুথের ভিডিও দেখবে কমিশন, সরছেন না রাকেশ

তৃতীয় দফায় ভোট হওয়া রাজ্যের ৫০টি বুথের অসম্পাদিত ভিডিও রেকর্ডিং-সহ ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পাঠাল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। জারি করল পরবর্তী দু’দফা ভোট সম্পর্কে বেশ কিছু নির্দেশিকাও। এ দফায় ভোট হওয়া প্রায় ১৭ হাজার বুথের মধ্যে ৮২৬টিতে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল কংগ্রেস এবং বামেরা। সেই দাবি খারিজ করে শুক্রবারই কমিশন জানিয়ে দিয়েছিল, কোনও বুথেই পুনর্নির্বাচন হবে না। তার পর ভোটপ্রক্রিয়ার তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে সুধীরকুমার রাকেশ। শনিবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে সুধীরকুমার রাকেশ। শনিবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৪ ০২:৩৪
Share: Save:

তৃতীয় দফায় ভোট হওয়া রাজ্যের ৫০টি বুথের অসম্পাদিত ভিডিও রেকর্ডিং-সহ ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পাঠাল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। জারি করল পরবর্তী দু’দফা ভোট সম্পর্কে বেশ কিছু নির্দেশিকাও।

এ দফায় ভোট হওয়া প্রায় ১৭ হাজার বুথের মধ্যে ৮২৬টিতে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল কংগ্রেস এবং বামেরা। সেই দাবি খারিজ করে শুক্রবারই কমিশন জানিয়ে দিয়েছিল, কোনও বুথেই পুনর্নির্বাচন হবে না। তার পর ভোটপ্রক্রিয়ার তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কমিশন সূত্রের খবর, ওই ৫০টি বুথের তথ্য দেখে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আগের সিদ্ধান্ত বদলে পুনর্নির্বাচন ঘোষণা করা হতে পারে।

পুনর্নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি রাজ্যে নিযুক্ত কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণ দাবি করেছিল কংগ্রেস-সিপিএম। সেই দাবি অবশ্য এ দিন খারিজ করে দিয়েছে কমিশন। কমিশনের অধিকর্তা ধীরেন্দ্র ওঝা বলেন, “সুধীরকুমার রাকেশকে সরানোর প্রশ্ন নেই। কমিশন মনে করে উনি যথেষ্ট যোগ্য ব্যক্তি।” তবে রেকর্ডিং খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্তে রাকেশের উপরে চাপ বাড়ল, এবং তার জেরে তিনি খানিকটা নড়েচড়ে বসেছেন বলেই কমিশন সূত্রের খবর।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত এ দিন বলেন, “তৃতীয় দফার ভোটের দিন রিগিং ও ছাপ্পাভোটের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যের ৫০টির মতো বুথের অসম্পাদিত ভিডিও রেকর্ডিং, ডিজিটাল ছবি, প্রিজাইডিং অফিসারের রিপোর্ট, প্রতি ঘণ্টার ভোটের হিসেব, মাইক্রো অবজার্ভারদের রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।”

শনিবার দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পতের সঙ্গে দেখা করে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ধনেখালি বিধানসভার সব বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী চন্দন মিত্র-সহ দলীয় নেতারা। পরে চন্দনবাবু বলেন, “আমরা প্রমাণ সহকারে দেখিয়েছি কী ভাবে শাসক দল ওই এলাকায় বুথ লুঠ করেছে, তাদের ভয়ে প্রকৃত ভোটারেরা ভোট দিতে পারেননি।” তার পরেই ৫০টি বুথের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার অধিকাংশই ধনেখালি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বলে কমিশন সূত্রের খবর। এ ছাড়া, হাওড়া ও বর্ধমান জেলার কয়েকটি বুথেরও তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে জানান সুনীলবাবু। যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে রবিবারই তা দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তৃতীয় দফার ভোট নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ ওঠায় শেষ দু’দফার ভোটের আগে রাজ্যে বেশ কিছু নির্দেশও পাঠিয়েছে কমিশন। যেমন, l চতুর্থ ও পঞ্চম দফার ভোটে প্রতিটি বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী, মাইক্রো অবজার্ভার, ভিডিওগ্রাফি, ডিজিটাল ক্যামেরা, ওয়েব কাস্টিংয়ের মধ্যে কোনও একটি ব্যবস্থা রাখতেই হবে। l স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে প্রার্থীর মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

এত দিন নিয়ম ছিল, অতীত ঘটনার নজির ও বর্তমান অবস্থা বিচার করে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের পর্যবেক্ষকরা স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত করবেন। l কমিশনের এই নয়া নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষক, মুখ্য নির্বাচনী অফিসার এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-কে নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গড়ে দিয়েছে কমিশন। তারাই বুথের বাহিনী মোতায়েন বা অন্য ব্যবস্থা নির্ধারণের ব্যাপারে চুড়ান্ত নির্দেশ নেবেন। কমিশনের এই নতুন নির্দেশ মেনে চতুর্থ দফার বেশ কিছু বুথে জেলা প্রশাসনের তৈরি করে দেওয়া বাহিনী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিবর্তন করেছেন সুধীরকুমার রাকেশ।

রাকেশের বিরুদ্ধে বিরোধীরা খড়্গহস্ত হলেও তাঁকে কেন সরানো হল না, এই প্রশ্নের উত্তরে কমিশনের একটি সূত্র বলেন, রাকেশ এক জন যোগ্য আমলা। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন করা যথেষ্ট শক্ত কাজ। তাই জেনেবুঝেই তাঁর মতো অফিসারকে রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগকেও যে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, এ দিনের জারি করা নির্দেশিকা তারই প্রমাণ।

কমিশনের তরফে রাকেশকে শো-কজ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের একাংশে খবর রটেছিল। এ দিন মেদিনীপুর রওনা হওয়ার আগে কলকাতায় তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে রাকেশের সহাস্য মন্তব্য, “আপনারা আমাকে হাসাচ্ছেন।” পরে মেদিনীপুরে তিনি বলেন, “নির্বাচন করেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। আমি পর্যবেক্ষক মাত্র।” তা হলে পর্যবেক্ষকের কাজটা কী? রাকেশের ব্যাখ্যা, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। নির্বাচনের দিনে হলে আধ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য দিন হলে এক ঘণ্টা।”

তৃতীয় দফার ভোটের দিন রাকেশ এই ব্যবস্থাটাই নেননি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তবে রাকেশকে সরানোর দাবি নিয়েও বিরোধীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কংগ্রেস এবং বামেরা রাকেশের অপসারণ চাইলেও বিজেপি সেই পথে হাঁটেনি। কারণ তারা মনে করে, রাকেশকে সরিয়ে দিলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। এখন বিশেষ পর্যবেক্ষক সরে গেলে অভিযোগ জানানোর আর কোনও জায়গা থাকবে না। তাই চতুর্থ ও পঞ্চম দফা নির্বাচন যাতে অবাধে হয়, তার জন্য কমিশনের উপর চাপ বজায় রাখার কৌশলই নিয়েছে বিজেপি।

অপসারণের দাবি খারিজ হলেও এ দিন আবার রাকেশের সমালোচনা করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “বিশেষ পর্যবেক্ষক পদে সুধীরকুমার রাকেশ যত ক্ষণ থাকবেন, তত দিন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমি চিঠি লিখে জানিয়েছি, রাকেশ অনেক গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি তৃতীয় দফায় তৃণমূলকে জিততে পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমার সন্দেহ, তাঁর সঙ্গে কোনও অশুভ আঁতাঁত তৈরি হয়েছে।”

এ দিন সবংয়ে পথসভা করতে এসে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী অস্কার ফার্নান্ডেজ বলেন, “আপনারা দেখেছেন তৃতীয় দফার নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ ভাবে হয়নি। সেই বিষয় নিয়ে এ মাসের ৫ তারিখ এআইসিসির তরফে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।”

রাকেশ অবশ্য তাঁর দাবিতে অনড় রয়েছেন। এ দিন কলকাতায় তিনি বলেন, “তৃতীয় দফার ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। চতুর্থ দফার ভোটেও আমার উদ্দেশ্য একটাই, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা।”

তবে বিরোধীদের দাবি কমিশন আপাতত খারিজ করে দিলেও চতুর্থ ও পঞ্চম দফার ভোট নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যাতে আর কোনও অভিযোগ না ওঠে, সে জন্য রাকেশ তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে কমিশন সূত্রে খবর। এ দিন সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরে পৌঁছে তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। রাতে কলকাতায় ফিরে তিনি বৈঠকে বসেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মৃত্যুঞ্জয়কুমার সিংহ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের সঙ্গে।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sudhirkumar rakesh election commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE