Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

যাত্রী নামিয়ে বাস দখল, অভিযুক্ত তৃণমূল

‘শহিদ দিবস’-এর সমাবেশের আগে লাঠি নিয়ে যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে পরের পর বাস ‘দখল’ করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ওই ঘটনায় ব্যাগপত্র ও অসুস্থদের নিয়ে হেঁটে ও গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন যাত্রীরা। এর আগেও কলকাতায় দলীয় সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে জেলায় জেলায় যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে বাস দখল করার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৩
Share: Save:

‘শহিদ দিবস’-এর সমাবেশের আগে লাঠি নিয়ে যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে পরের পর বাস ‘দখল’ করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ওই ঘটনায় ব্যাগপত্র ও অসুস্থদের নিয়ে হেঁটে ও গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন যাত্রীরা।

এর আগেও কলকাতায় দলীয় সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে জেলায় জেলায় যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে বাস দখল করার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। শনিবার বিকেলে পাত্রসায়রের ফকিরডাঙার মোড়ে তৃণমূলের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক লাঠি নিয়ে প্রায় ২৫টি বাস আটকায় বলে অভিযোগ। যে-সব যাত্রী ওই দিন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের এক দম্পতি। তাঁদের কথায়, “হঠাৎ দেখি বাস থেমে গেল। কিছু লোক তৃণমূলের পতাকা হাতে লাঠিসোটা নিয়ে বাসচালককে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলল। যাত্রীদের কাছে এসে দ্রুত বাস খালি করে দিতে বলল। কথা না বাড়িয়ে সব যাত্রী বাস থেকে নেমে পড়েন। নেমে দেখি, আরও অনেকগুলো বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর তৃণমূলের লোকেরা পতাকা ও লাঠি নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে।”

অন্য যাত্রীদের সঙ্গে ওই দম্পতিও হাঁটা লাগান। প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে হাটকৃষ্ণনগর হাইস্কুলের সামনে গিয়ে তাঁরা কিছুক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করেন। বাস অবশ্য মেলেনি। শেষে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে মোটা টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া নিয়ে রাতে বাড়ি ফেরেন। সোনামুখীর এক বাসিন্দা সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি বলেন, “লাঠি হাতে অত লোককে দেখে ছেলে ভয়ে কাঁদতে শুরু করে। শেষে ভ্যানোয় চেপে কিছুটা পথ গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে অনেক রাতে বাড়ি পৌঁছই।”

গোটা পঁচিশেক বাস আটকানোর অভিযোগ উঠলেও বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী মনে করেছেন এটি ‘ছোটখাটো ঘটনা’! তাঁর দাবি, “তেমন কিছুই হয়নি। ছোট ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। বাসের জন্য জেলায় সমস্যার কথা আমাকে কেউ বলেননি। কলকাতায় দলের সভায় যাওয়ার জন্য আমরা বাস ভাড়া নিয়েছি। রুটের বাস তেমন নেওয়াই হয়নি।” পাত্রসায়রের ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায় অবশ্য দলের একাংশের বিরুদ্ধে জোর খাটানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, “আমরা জোরাজুরি করে বাস নেওয়া পছন্দ করি না। যারা ওই কাজ করেছে, তারা ভাল করেনি।” তৃণমূলের একাংশ আবার জানাচ্ছেন, কিছু বাস মালিক সমাবেশের জন্য বাস ভাড়া দিতে না চাওয়ায় তাঁরা জোর খাটাতে বাধ্য হয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “লাঠি হাতে যাত্রীদের নামিয়ে বাসের দখল নিয়ে তৃণমূল আখেরে নিজেদের মুখ পোড়ালো। মানুষ দেখলেন, সিপিএম আর তৃণমূলের কোনও তফাৎ নেই।”

এটা অবশ্য এই সরকারের আমলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত ৩০ জানুয়ারি তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশকে ‘ঐত্যিহাসিক’ রূপ দিতে মরিয়া দলের নেতা কর্মীরা বিভিন্ন জেলায় বাস ‘দখল’ করেছিলেন। হুগলির আরামবাগে এক প্রতিবাদী যাত্রীকে মারধরও করা হয়। গত ৩১ মার্চ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে কেশিয়াড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় যাওয়ার জন্য বেলদায় যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দখল করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তবে এ বার সেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের নেতারাই দলের কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েছেন বাস নয়, শহিদ দিবসের সমাবেশে ট্রেনে করেই যেতে হবে। ইতিমধ্যে যে-সব ব্লকের কর্মীরা বাস ভাড়া করে নিয়েছিলেন, তাঁদের বলা হয়েছে বাসে চেপে নিকটবর্তী স্টেশনে যাওয়া যাবে। তার পর ট্রেনে হাওড়া। সেখান থেকে মিছিল করে ধর্মতলায়। বাস্তবে এই নির্দেশ কতটা কার্যকর হয়, তা আজ, সোমবারই বোঝা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mednipur patrasayar bus occupied tmc accused
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE