মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য আরও এক কিস্তি মহার্ঘভাতা (ডিএ) ঘোষণা করল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আলু-সহ প্রায় সব সব্জির দাম গত বছরের তুলনায় অনেকটা বাড়লেও রাজ্য সরকারি কর্মীদের এখনই ডিএ দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের।
বৃহস্পতিবার মোদী সরকার ৭% ডিএ ঘোষণা করেছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ বেড়ে দাঁড়াল মূল বেতনের ১০৭%। গত ১ জুলাই থেকে এই বৃদ্ধি কার্যকর হবে। ফলে ৩০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং ৫০ লক্ষ পেনশন প্রাপক উপকৃত হবেন। সরকারি সূত্রে খবর, এ রাজ্যের কর্মচারীরা এখন ডিএ পান ৫৮%। ফলে ডিএ-র ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯%-এ।
কেন্দ্রের এই ঘোষণার পরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তাঁদের দাবি, যত দিন যাচ্ছে, কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের কর্মীদের ডিএ-এর ব্যবধান তত বাড়ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নীতির সমালোচনা করে তাঁরা বলেন, এই সরকারের উৎসব করতে, ক্লাবকে টাকা দিতে, পুরস্কার বিতরণ করতে কখনও টাকার অভাব হয় না। কিন্তু কর্মীদের ন্যায্য পাওনা মেটাতে গেলেই কোষাগারে টান পড়ে যায়। তাঁদের ক্ষোভ, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে মানুষের উপর যে চাপ পড়ছে, কেন্দ্রীয় সরকার তা মেনে নিয়ে এক কিস্তি ডিএ ঘোষণা করল। কিন্তু এমন মূল্যবৃদ্ধির পরেও রাজ্য সরকার এখনও ডিএ বাড়াতে রাজি নয় কিছুতেই।
২০১১ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার আগে তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা ক্ষমতায় এলে সরকারি কর্মীদের সব দাবি পূরণ করবে।
কর্মী-নেতাদের দাবি, মমতার সরকার সেই প্রতিশ্রুতি তো রাখেইনি, উল্টে কেন্দ্রের সঙ্গে ব্যবধান বেড়েই চলেছে ক্রমশ। নবান্ন সূত্রের খবর, নতুন সরকারের আমলে গত তিন বছরে তিন কিস্তি ডিএ (বছরে এক বার) পেয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। সব মিলিয়ে যা ২৩%।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ছ’মাস অন্তর বছরে দু’বার ডিএ দেয়। বাম আমলেও মোটামুটি এই নিয়ম অনুসরণ করেই ডিএ পেয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। নেতাদের দাবি, অতীতে প্রতিশ্রুতি দিলেও ডিএ নিয়ে অতীতের যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থ দফতরের একাধিক কর্তা জানান, কেন্দ্র তো বটেই, ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের সিংহভাগ রাজ্যের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
কেন্দ্রীয় সরকারের আরও এক কিস্তি ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা শুনে এ দিন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা মনোজ গুহ বলেন,“রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের বেতন ক্রমশই কমছে। এখন আমরা প্রায় অর্ধেক বেতন পাই। এ বার আন্দোলনের মাধ্যমেই পাওনাগণ্ডা আদায় করে নেব।” মনোজবাবু আরও জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ডিএ-সহ বিভিন্ন দাবিতে রানি রাসমণি রোডে বিক্ষোভ দেখাবেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।
আইএনটিইউসি অনুমোদিত সরকারি কর্মী সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর নেতা মলয় মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “এখন কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যূনতম বেতনের চেয়ে এ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন গড়ে সাড়ে আট হাজার টাকা
কম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে ভোটের আগে দেওয়া সব প্রতিশ্রুতিই ভুলে গিয়েছেন। মহার্ঘভাতা দেবেন কোথা থেকে!”
শাসক দল তৃণমূল প্রভাবিত সরকারি কর্মী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক সৌম্য বিশ্বাস বলেন, “বিদায়ী এবং নতুন কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা চলছে। এই অবস্থায় সাধ থাকা সত্ত্বেও সামর্থ্যে ঘাটতি হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, আর্থিক পরিস্থিতি একটু ভাল হলেই মুখ্যমন্ত্রী কর্মচারীদের দাবি মেটাবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy