Advertisement
০৬ মে ২০২৪
West Bengal News

এ বার কি প্রত্যাহারের খেলা? সাক্ষাত্কারে কী বললেন কেষ্ট...

মনোনয়ন পর্ব শেষ। প্রত্যাহার পর্ব শুরু। তার মাঝামাঝি একটা সময়ে তৃণমূলের ‘ফার্স্ট বয়’ অনুব্রত মণ্ডলের মুখোমুখি ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়।মনোনয়ন পর্ব শেষ। প্রত্যাহার পর্ব শুরু। তার মাঝামাঝি একটা সময়ে তৃণমূলের ‘ফার্স্ট বয়’ অনুব্রত মণ্ডলের মুখোমুখি ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ১৫:১৮
Share: Save:

ড্রয়িং রুমের দেওয়ালে ঢাউস এলসিডি-তে খবরের চ্যানেলই চলছিল। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বীরভূম দখল প্রসঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল কী বলছেন, টিভিতে তখন সেটাই দেখানো হচ্ছে। ঠিক সেই সময়েই ঘরটাতে ঢুকলেন তিনি। সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে টিভির দিকে তাকিয়ে মুচিকে হেসেও নিলেন। তার পর পার্শ্বচরদের বললেন টিভি-টা ‘মিউট’ করে দিতে।

পরনে সাদা-নীল চেক লুঙ্গি, নীল টি শার্ট। কলারটা তোলা। ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে এক রুদ্রাক্ষের এক গোছা নানা ধরনের মালা।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদের বোর্ড যে দখল হচ্ছে, তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বস্তুত মনোনয়ন জমার পর্ব মেটার আগেই বোঝা গিয়েছিল, ‘কেষ্ট’ এ বার ‘ফার্স্ট বয়’। কিন্তু এ বার ‘কেষ্ট’ বুঝিয়ে দিলেন, ‘ফার্স্ট’ হয়েও তিনি ‘আত্মসন্তুষ্টি’তে ভুগছেন না। বরং আরও ‘ভাল রেজাল্ট’ করতে চাইছেন। তাই এ বার শুরু হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া।

আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনুব্রত মণ্ডলের স্পষ্ট ইঙ্গিত, এ বার শুরু হতে চলেছে মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্ব। বললেন, ‘‘শুনলাম কিছু লোক নাকি আবার সারেন্ডার করেছেন। বলছেন যে, আমরা ভুল করে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। আমরা উন্নয়নের সঙ্গে থাকতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এত উন্নয়ন। অনুব্রত মণ্ডলের এত আদর্শ। অনুব্রত মণ্ডলকে মিস করা মানে আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি করা।’’

এ কথার অর্থ কী? যে ক’জন বিরোধী প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছেন, তাঁদেরও কি এ বার মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হবে?

মুখমণ্ডলে অপার সারল্য এনে অনুব্রত মণ্ডলের জবাব, ‘‘প্রত্যাহার মানে ওই...। কষ্ট পাচ্ছেন তাঁরা, মানসিক কষ্ট পাচ্ছেন।’’

আরও পড়ুন: মুণ্ডু চিবিয়ে বেঁচে আছি, বলছেন অনিল

বীরভূম জেলার সিংহভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি যে তৃণমূলের দখলে যাচ্ছে, তা মনোনয়ন পর্ব মেটার আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদের অবস্থাও তথৈবচ। ৪২টি আসনের মধ্যে ৪১টি-তে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। কারণ, বিরোধীদের কোনও প্রার্থী নেই। শুধুমাত্র রাজনগর এলাকায় ১টি জেলা পরিষদ আসনে বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে। সে প্রসঙ্গ উঠতেই অনুব্রত বললেন, ‘‘উনিও কষ্ট পাচ্ছেন।’’ তার মানে জেলা পরিষদের সবেধন নীলমণি বিরোধী প্রার্থীটিও সরে দাঁড়াচ্ছেন? অনুব্রত বললেন, ‘‘হতে পারে, কষ্ট যখন পাচ্ছেন, সরে দাঁড়াতেই পারেন।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তৃণমূল জমানা শুরু হওয়ার পর রাজ্য দ্বিতীয় বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখোমুখি। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও অনেক আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল তৃণমূল— মোট আসনের ১০.৮৬ শতাংশ। তবে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের সে হার বেনজির ছিল না। কারণ ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১১ শতাংশ আসন বামেরা দখল করে নিয়েছিলেন বিনা যুদ্ধে। বামেদের সেই নজিরকেও ছাপিয়ে গিয়েছে এ বারের তৃণমূল।

ভোটের অনেক আগেই বীরভূম ও বাঁকুড়া জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে শাসক দল। মুর্শিদাবাদ এবং দুই বর্ধমানের চেহারাও প্রায় একই রকম। অনুব্রত মণ্ডলকে বেশ নিশ্চিন্ত এবং চাপমুক্ত দেখাচ্ছে। বীরভূমের গড় ঘিরে ‘মশারি’ টাঙিয়ে দেওয়া সারা। দু’একটা ‘মশা’ ঢুকে পড়েছে ঠিকই। কিন্তু, সেগুলোকেও বার করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। দিন কয়েকের জন্য বীরভূমের ‘কেষ্টদা’ তাই কলকাতায়।

আরও পড়ুন: শাসকের ‘বোঝানো’য় ১২ ঘণ্টাতেই ডিগবাজি অমরেন্দ্রর

দেব-দ্বিজে অটল ভক্তি অনুব্রতর। বললেন, ‘‘সিপিএম চুরাশি সাল থেকে আমাকে খুন করার চেষ্টা করছে। ছিয়ানব্বইতে একেবারে প্রোগ্রাম বানিয়ে ফেলেছিল, ঘরে ঢুকে মারবে। কিন্তু আমার বাড়িতে আড়াইশো বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়। আমার গৃহদেবতা মহাদেব রয়েছেন। আমার সামনে সিপিএম দাঁড়াতে পারেনি কোনও দিন।’’

হাতে গুনে গুনে বলে দিচ্ছেন, নিজের জেলায় কতগুলো গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেয়ে গিয়েছেন। কতগুলো পঞ্চায়েত সমিতি ইতিমধ্যেই হাতে এসে গিয়েছে। কিন্তু তাতে কি গর্ব করার আদৌ কিছু রয়েছে? বীরভূমের প্রতিটি প্রান্তে কী রকম তাণ্ডব চলেছে, সে ছবি তো সংবাদমাধ্যমে দেখাই গিয়েছে। ফুঁসে উঠলেন অনুব্রত। ‘‘কোথায় তাণ্ডব! আমাকে ফুটেজ দেখান।’’ ফুটেজ তো গত এক সপ্তাহ ধরে রোজ দেখানো হয়েছে! অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘‘ও সব পুরনো ফুটেজ। বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ওই ছবি তোলা হয়েছিল।’’

প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের মাথাটাও কি বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ফেটেছিল? আবার অপার সারল্য কেষ্টর মুখে। বললেন, ‘‘রামচন্দ্র ডোম আসলে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে কথাটা উনি বলছেন না।’’

যে ভাবে সিংহভাগ আসনে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা রুখে দিয়েছে তৃণমূল, বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর বিষয়েও ততটাই আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি। আর বার বার দাবি করছেন, কোথাও কোনও হিংসা নেই, রয়েছে শুধুই ‘উন্নয়ন’। জানিয়ে দিচ্ছেন, কয়েকটা আসনে যদি বিরোধী প্রার্থী থেকেও যান, ‘উন্নয়ন’ই তাঁদের জিততে দেবে না।

তা হলে কি বীরভূমে পঞ্চায়েতের কোনও স্তরে বিরোধী দলের কোনও প্রার্থী জিতবেন না? অনুব্রত এখনই জানিয়ে দিলেন, ‘‘কয়েক জন হয়ত জিততে পারেন। কিন্তু তার পর ছ’সাত দিনের মধ্যেই তাঁরা তৃণমূলে চলে আসবেন।’’

ভিডিও: মৃণালকান্তি হালদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE