বলি: নিহত দলীয় কর্মী তাসি ভুটিয়ার দেহ নিয়ে জিএনএলএফ সদস্যরা। শনিবার সোনাদায়। ছবি: এএফপি।
সিংমারির ঘটনার ঠিক তিন সপ্তাহের মাথায় আবার পাহাড়ে গুলিতে মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। শুক্রবার রাত থেকে পরবর্তী ১৭ ঘণ্টার মধ্যে একাধিক ঘটনায় মোর্চার তিন ও জিএনএলএফের এক কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। আরও এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুই ঘটনায় এ দিন সকালে সোনাদা, দুপুরে দার্জিলিং ও তার আশপাশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বিকেলের দিকে গোলমাল ছড়িয়ে পড়ে কালিম্পং এবং গরুবাথানেও। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাও নামাতে হয়। এর পরে রাতের দিকে কার্শিয়াংয়েও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যেই বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি পাহাড়ের দলগুলিকে আলোচনায় বসার ডাক দেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন, কথা বলতে চান, যে কোনও সময়ে বলা যায়। শান্তির পথে ফিরুন। ১০-১৫ দিনের মধ্যে পাহাড়ের দলগুলিকে আমি ডেকে নেব।’’ পুলিশকে সংযত থাকার বার্তাও দেন তিনি। বলেন, ‘‘আমি চাই না, পুলিশ অসংযত হোক। পাহাড়ের দলগুলি ও প্রশাসনকে বলছি, সংযত থাকুন।’’ মোর্চা ও জিএনএলএফ দু’পক্ষই যে এ দিনের মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে কেউ ছাড় পাবেন না।’’
আরও পড়ুন: গাড়িতে আগুন দিচ্ছে কারা, খুঁজছে পুলিশ
অনেকেই বলছেন, এ দিন এক দিকে যেমন পাহাড়ের প্রশাসনকে সংযত হতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তেমনই পাহাড়ের দলগুলির প্রতি আলোচনার বার্তা দিয়ে শান্তির পথই খুলতে চেয়েছেন। তবে একই সঙ্গে শুধু মোর্চা নয়, তিনি ডেকেছেন সব দলকেই। সেই তালিকায় জিএনএলএফ-ও থাকছে। ষষ্ঠ তফসিলের বদলে সরাসরি গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলে এর মধ্যেই কিছুটা জোর বাড়িয়েছে মন ঘিসিঙ্গের দল। পাহাড়ের লোকজনের মতে, শুক্রবার রাতে জিএনএলএফ কর্মীর মৃত্যু এবং তার পরে শনিবার সকালে সোনাদায় তাদের বিরাট মিছিল ও অশান্তি মন ঘিসিঙ্গদের নতুন করে প্রচারে নিয়ে এসেছে।
শুক্রবার রাতে জিএনএলএফ সমর্থকেরাই সোনাদায় পুলিশদের দুটি গাড়ি আটকায় বলে অভিযোগ। রাত ১১টা পর্যন্ত অবরোধ সরাতে না পেরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পাল্টা পাথর উড়ে আসে। কিছু পুলিশকর্মী জখম হন। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরানোর চেষ্টা হয়। জিএনএলএফের মুখপাত্র নীরজ জিম্বার অভিযোগ, ওই সময়ে পুলিশ গুলি চালালে তাসি ভুটিয়া (২৭) লুটিয়ে পড়েন। এ দিন সকালে তাসির দেহ নিয়ে সোনাদা থানার সামনে জড়ো হন জিএনএলএফ প্রধান মন ঘিসিঙ্গ-সহ অনেকে। তাতে উপচে পড়ে ভিড়। এর পরে সেখানে ট্রাফিক পোস্ট, থানায় আগুন ধরানো হয়। আগুন লাগানো হয় সোনাদা স্টেশনেও। মন বলেন, ‘‘পুলিশ নিরীহদের উপরে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে। এ ভাবে আমাদের আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না।’’
সোনাদার ঘটনা কানে যেতেই মিছিলের প্রস্তুতি নেয় মোর্চা। তুমুল বৃষ্টিতেই তারা চকবাজারে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। ডিএসপি অফিসে আগুন লাগানো হয়। আক্রান্ত হয় খাদ্য সরবরাহ দফতরও। মোর্চার অভিযোগ, এই সময়ে গুলি চালায় পুলিশ। একে একে সুরজ সুনদাস, আশা কুমার ও সমীর সুব্বার মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আর এক জনের চিকিৎসা চলছে। সন্ধ্যার একটু আগে সেনা নামানো হয়। রাতের দিকে কার্শিয়াংয়ের মহকুমা শাসকের দফতরে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পুড়ে যায় ওই দফতরের একটি ঘর। পুলিশের অভিযোগ, ওই ঘটনায় কিছু মোর্চা সমর্থক জড়িত। মহকুমা শাসকের দফতর লাগোয়া কার্শিয়াং সংশোধনাগার। নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে ওই এলাকায়।
গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলনে নামলেও ভাঙা সংগঠন নিয়ে মন বেশি দূর এগোতে পারবেন না ভেবে নিশ্চিন্ত ছিলেন মোর্চা নেতারা। এ বারে তাসির মৃত্যুকে সামনে রেখে মন ফের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে নামায় মোর্চা উদ্বিগ্ন। তারাও তীব্রতা বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তবে মোর্চা নেতা বিনয় তামাঙ্গের দাবি, ‘‘সোনাদায় গোর্খাল্যান্ডপ্রেমী এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা জন আন্দোলন। কোনও দলের কৃতিত্বের কথা উঠছে কেন! ’’
আর শান্তি ফেরানো এবং রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা? বিনয়ের জবাব, ‘‘বাহিনী সরলেই বন্ধ উঠবে। তা ছাড়া রাজ্যের সঙ্গে নয়, আমরা আলোচনা করব কেন্দ্রের সঙ্গে। বিষয় হবে শুধুই গোর্খাল্যান্ড।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy