সেই আলো।
পার্কে সৌর বিদ্যুতে চলা ওই আলোগুলো যখন জ্বলে, তখন তা থেকে নির্গত হয় কম ঘনত্বের কার্বন ডাই-অক্সাইড। আর সেটাই ওই আলো-ফাঁদের দিকে টেনে আনে মশাদের। আলোর নীচে রাখা জালে মশারা টপাটপ পড়বে আর মরবে।
মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি ওই প্রযুক্তি এ বার এ দেশে আনার পরিকল্পনা করেছে কলকাতার একটি গবেষণা সংস্থা। সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করা ওই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রযুক্তি এতদিন পরীক্ষামূলক স্তরে ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় তা পাশ করার পরে এখন সেই প্রযুক্তিকে এ দেশের মতো করে ব্যবহার করতে চাইছে কলকাতার গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
মানুষের নিঃশ্বাসের সঙ্গে নির্গত হাল্কা কার্বন ডাই অক্সাই়ড এবং ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে আসা ল্যাকটিক অ্যাসিড মশাদের আকর্ষণ করে। ওই গন্ধই মশাদের টেনে আনে মানুষের দিকে। মশার সেই চরিত্রকে কাজে লাগিয়েই মালয়েশিয়ায় তৈরি হয়েছে এই নতুন ধরনের সৌর আলো। তবে ল্যাকটিক অ্যাসিড নয়। এ ক্ষেত্রে মশাদের টোপ হাল্কা ঘনত্বের কার্বন ডাই অক্সাইড।
কী ভাবে তৈরি হয় ওই হাল্কা ঘনত্বের কার্বন ডাই-অক্সাইড? কেন্দ্রীয় সরকারের অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রকের পরামর্শদাতা শান্তিপদ গনচৌধুরী বলছেন, ‘‘মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দেখেছেন, আলোর অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইডের বিক্রিয়ায় মৃদু (কম ঘনত্বের) কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: গুরুঙ্গ আজ আসবেন, দার্জিলিঙে পড়ল পোস্টার
তাই আলো জ্বলার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মশারা ওই আলোর দিকে ছুটে আসছে।’’
মালয়েশিয়ার ওই মশা-মারা প্রযুক্তিকেই এ দেশে আনতে চাইছেন শান্তিপদবাবুরা। ওই সৌর বিজ্ঞানী বলেন, ‘‘কী ভাবে আমাদের এখানেও ওই একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে
মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা খতিয়ে দেখছি। ওই সৌর আলো আমাদের এখানে সফল হলে মশা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটা বড় পদক্ষেপ হবে।’’ শান্তিপদবাবুর মতে, মূলত ডেঙ্গির মশা ধরতেই এই ফাঁদ তৈরি করেছে মালয়েশিয়া। ওরা পারলে কলকাতাই বা পারবে না কেন?
হাল্কা কার্বন ডাই-অক্সাইডের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার ধর্মকে কাজে লাগিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ যে এ দেশে একেবারেই হয়নি, তা কিন্তু নয়। কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে যখন এন্টেমোলজি গবেষণাগারের রমরমা ছিল, তখন এই ধরনের গবেষণা শুরু হয়েছিল। ট্রপিক্যালের এক প্রাক্তন গবেষকের কথায়, ‘‘আমরা এক বার এলপিজি ব্যবহার করে হাল্কা ঘনত্বের কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করে মশাদের কব্জা করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু গবেষণাগারের বাইরে সেই পরীক্ষার সফল প্রয়োগ করা যায়নি।’’
ট্রপিক্যাল যেটা পারেনি, সেটাই করতে পেরেছে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণাগারের বাইরে তাদের ওই আলোর ব্যবহারে মশা নিধনের কাজ সফল হয়েছে। কুয়ালা লামপুরে ভালই কাজ করছে মশার ফাঁদ। এমনকী মালয়েশিয়া থেকে সম্প্রতি ওই আলো নিয়ে গিয়েছে নরওয়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কম ঘনত্বের কার্বন ডাই-অক্সাইড এত ধীরে ধীরে নির্গত হয় যে, তাতে পরিবেশ দূষণেরও বড় একটা ভয় নেই। বাতাসে ক্ষতিকারক গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণে এই আলো তেমন হেরফের ঘটাতে পারে না।
ট্রপিক্যালে কাজ করা এক পতঙ্গবিদের আশা, ‘‘মালয়েশিয়া যা করেছে, তা এ রাজ্যেও একদিন সফল হবে। এক বার বাইরের ফাঁদ-আলো কাজ করতে শুরু করলে, প্রযুক্তির একটু অদলবদল ঘটিয়ে তা ঘরের মধ্যেও ব্যবহারের উপযুক্ত করে নেওয়া যাবে। আর সেটাই হবে মশা মারার আদর্শ কল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy