Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
পার্থকে চিঠি সহকর্মীদের

তোলা চাওয়ায় অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

শিক্ষিকার শ্লীলতাহানি বা নিয়োগপত্র থাকা সত্ত্বেও শিক্ষককে অধ্যক্ষ পদে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ছিলই। এ বার সহকর্মীদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ উঠল বর্ধমান রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (টিচার ইন-চার্জ) তারকেশ্বর মণ্ডলের বিরুদ্ধে।

রাজ কলেজে অভিযুক্ত তারকেশ্বর মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ কলেজে অভিযুক্ত তারকেশ্বর মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০৪:০৩
Share: Save:

শিক্ষিকার শ্লীলতাহানি বা নিয়োগপত্র থাকা সত্ত্বেও শিক্ষককে অধ্যক্ষ পদে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ছিলই। এ বার সহকর্মীদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ উঠল বর্ধমান রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (টিচার ইন-চার্জ) তারকেশ্বর মণ্ডলের বিরুদ্ধে।

কলেজের জনা পঞ্চাশ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রশাসনের নানা স্তরে চিঠি দিয়ে এই অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, টাকা দিতে রাজি না হলে নানা ভাবে হেনস্থা, এমনকী মারধর করা হচ্ছে। অভিযোগ মানেননি তারকেশ্বরবাবু। পাল্টা চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করতে দিয়েছি। রিপোর্ট পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এলাকায় তৃণমূলের কর্মী হিসেবে পরিচিত তারকেশ্বরবাবু গত কয়েক বছরে বারবারই বিতর্কে জড়িয়েছেন। বছর আড়াই আগে এক শিক্ষিকার সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগে বেশ কয়েক দিন জেল-হাজতে কাটাতে হয় তাঁকে। পরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হন। কিন্তু বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। বিবিএ-বিসিএ বিভাগের এক শিক্ষিকার শ্লীলতাহানি থেকে পড়ুয়াদের মারধরের মতো নানা অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। কয়েক মাস আগে কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগপত্র নিয়ে অধ্যক্ষ পদে যোগ দিতে আসেন এক শিক্ষক। চিঠি আটকে রেখে তারকেশ্বরবাবু তাঁকে পদে যোগ দিতে দেননি বলে অভিযোগ। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেও নাম জড়িয়েছে তাঁর।

অভিযোগকারীদের দাবি, কলেজে কার্যত ‘দাদাগিরি’ চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। সে জন্য চুক্তির ভিত্তিতে নিজের পছন্দ মতো কর্মী নিয়োগ করেন। চাকরির লোভ দেখিয়ে কিছু ছাত্রকে অনুগত করে রেখেছেন। তারা কলেজ দাপিয়ে বেড়ায়। বহিরাগতরাও যাতায়াত করে। এ সবের বিরুদ্ধে মুখ খুললে হুমকি শুনতে হয় বা রাস্তাঘাটে হেনস্থা হতে হয়। অভিযোগ, কিছু দিন ধরেই টাকা চেয়ে উত্তক্ত্য
করছে ওই সব লোকজন। তাতে মদত দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের অভিযোগ, সম্প্রতি অঙ্কের এক শিক্ষককে তারকেশ্বরবাবুর ঘরে ডেকে চাপ দিয়ে ৩৫ হাজার টাকার দু’টি চেক লিখিয়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য ব্যাঙ্কের সাহায্যে সেই টাকা আটকেছেন তিনি। তার আগে পদার্থবিদ্যার এক শিক্ষককে তারকেশ্বরবাবুর সামনেই তাঁর ‘দলবলের’ হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দিতে হয়েছে। প্রথমে টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। ওই শিক্ষক এখন কলেজে আসছেন না। দু’জন শিক্ষাকর্মী টাকা দিতে না পারায় তাঁদের হেনস্থা করা হয়েছে। কলেজের একটি সূত্রের দাবি, পরিচালন সমিতির দুই সদস্য তারকেশ্বরবাবুকে এ সব বন্ধ করার আর্জি জানান। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করা তো দূর, উল্টে তাঁদের এক জনকে শ্লীলতাহানির মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি শুনতে হয় বলে অভিযোগ।

কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য শিখা আদিত্যের অভিযোগ, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কলেজে তোলাবাজি ও গুন্ডামি চলছে। কলেজের ঐতিহ্য ফেরানোর জন্য শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পরিচালন সমিতির সদস্যেরা শিক্ষামন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি।” শিক্ষকদের একাংশ জানান, সোমবার তাঁদের প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর হাতে চিঠি তুলে দেন। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, জেলার
মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকেও চিঠি মেল করা হয়েছে।

তারকেশ্বরবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগ করলেই হবে? প্রমাণ দিতে হবে তো!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শিক্ষকদের অনেকে আমাকে জানিয়েছেন, জোর করে তাঁদের অভিযোগপত্রে সই করানো হয়েছে। সিপিএম ঘনিষ্ঠ কিছু শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত করছেন।’’ বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। শিক্ষকেরা যে চিঠি দিয়েছেন তা উচ্চ শিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher-in-charge Extortion Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE