Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গি রুখতে আগাম রাস্তায়

শিরে সংক্রান্তি এলে মাঠে নামা আর নয়। বরং সিঁদুরে মেঘ দেখেই সতর্ক হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসন। মশাবাহিত ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া হোক বা সোয়াইন ফ্লু, ডায়েরিয়া— যে সব রোগের মূলে অপরিচ্ছন্নতা, সেগুলি রুখতে আগে থেকেই প্রতিরোধী পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করেছে পুর দফতর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ০৫:০৮
Share: Save:

শিরে সংক্রান্তি এলে মাঠে নামা আর নয়। বরং সিঁদুরে মেঘ দেখেই সতর্ক হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসন।

মশাবাহিত ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া হোক বা সোয়াইন ফ্লু, ডায়েরিয়া— যে সব রোগের মূলে অপরিচ্ছন্নতা, সেগুলি রুখতে আগে থেকেই প্রতিরোধী পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করেছে পুর দফতর। গত কাল, ১০ মে থেকে রাজ্যের ১২৪টি পুরসভায় ‘পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ শুরু হয়েছে। চলবে ২৪ তারিখ পর্যন্ত। এ জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি পুর এলাকায় ৪৯৯ জন ডাক্তার ও প্রায় ২০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে সচেতনতা অভিযানও শুরু হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, পুর এলাকা ঝকঝকে হলে, আর মানুষ একটু সচেতন হলেই ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ঠেকানো যায়। তাই রোগ ছড়ালে ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে আগে থেকেই পরিচ্ছন্নতার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অনেকে এটিকে নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান বা যোগী আদিত্যনাথের লখনউয়ের রাস্তা ঝাঁট দেওয়ার পাল্টা বঙ্গীয় অভিযান বললেও পুর দফতর তা মানে না। পুরকর্তারা জানান, এটি সম্পূর্ণরূপে রাজ্যের টাকায় চলা জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রতিরোধী অভিযান। যা আগে কখনও হয়নি।

সাধারণ ভাবে মশা-মাছি তাড়াতে পুরসভা অভিযানে নেমেই থাকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ বারের অভিযানে সামিল হতে হবে মন্ত্রী-আমলা-বিধায়ক-সাংসদ সকলকেই। ফলে এই অভিযান পরিচালনার ভার আর শুধু পুরসভাগুলির উপর থাকছে না। প্রত্যেক জেলাশাসককে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের নজরদার করা হয়েছে। বুধবারই জেলায় জেলায় শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা সাফাই অভিযানে নেমে পড়েন। ঠিক যেমন, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে এক সময়ে স্বচ্ছ ভারত অভিযানে নেমেছিলেন নেতা-মন্ত্রীরা। তৃণমূল সূত্র বলছে, এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া কমলে তার ফায়দা কুড়োবে রাজ্য সরকার। আর মন্ত্রী-নেতারা পথে নামায় দলের পক্ষ থেকে জনসংযোগের কাজটাও সারা হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: গরিব-কল্যাণে মন দেবেন ঠাকুরভক্ত পিনাকী

রাজ্যের ১২৪টি পুরসভায় মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ২৮৯৬। অভিযান চলাকালীন প্রতিটি ওয়ার্ডের সমস্ত নিকাশি নালা, রাস্তা সাফ করা হবে। পরিষ্কার করা হবে আবর্জনা এবং ভ্যাট। এ জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০ জন করে বাড়তি শ্রমিক নেওয়া হয়েছে। পুরমন্ত্রীর দাবি, ‘‘১৫ দিনের অভিযানে ১৩ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হবে। এটাও কম কথা নয়।’’

কিন্তু যেখানে মশা-মাছি বাহিত রোগ বর্ষাকালে শুরু হয়ে পুজোর পরেও টানা চলতে থাকে, সেখানে ১৫ দিনের অভিযান কতটা সফল হবে? পুরমন্ত্রী জানান, রাজ্য প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়ে পনেরো দিন অগ্রাধিকারে ভিত্তিতে কাজ করবে। কিন্তু সেটাই শেষ নয়। ২০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ১ মে থেকে বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন। অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসের ১-৫ তারিখ এবং ১৬-২০ তারিখ এই পরিদর্শন চালাবেন তাঁরা । গত বছর শ্রীরামপুর, দক্ষিণ দমদম, বরানগর, বিধাননগর ও হাওড়ায় ব্যাপক ডেঙ্গি হয়েছিল। সেই সব এলাকায় এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর্মীরা যেতে শুরু করেছেন।

তবে ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু করে শেষ পর্যন্ত মিইয়ে গিয়েছে, এমন প্রকল্পের সংখ্যা প্রচুর। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ভবিষ্যৎও তেমন হবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পুরমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, পরিচ্ছন্নতা অভিযানকে একটি আন্দোলনের রূপ দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Municipality Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE