Advertisement
২৮ এপ্রিল ২০২৪

রেললাইনে উদ্ধার দু’পা কাটা যুবক, অভিযোগ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের

হাঁটাচলার শক্তিটা চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেললেন। কিন্তু তা কি নিছক দুর্ঘটনার জন্য নাকি তার পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? সেটাও ঠিক মতো মনে করতে পারছেন না। হাসপাতালের বিছনায় শুয়ে ট্যাংরার বাসিন্দা বছর তিরিশের রাহুল রায় শুধু মাঝেমধ্যে চারিদিকে চোখ মেলে তাকাচ্ছেন। মাথায় আর পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা, চলছে স্যালাইনও। নিজের শারীরিক যন্ত্রণার কথাও স্পষ্ট ভাবে বলার মতো অবস্থায় নেই।

ছবি: রণজিৎ নন্দী।

ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ১৮:০৩
Share: Save:

হাঁটাচলার শক্তিটা চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেললেন। কিন্তু তা কি নিছক দুর্ঘটনার জন্য নাকি তার পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? সেটাও ঠিক মতো মনে করতে পারছেন না। হাসপাতালের বিছনায় শুয়ে ট্যাংরার বাসিন্দা বছর তিরিশের রাহুল রায় শুধু মাঝেমধ্যে চারিদিকে চোখ মেলে তাকাচ্ছেন। মাথায় আর পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা, চলছে স্যালাইনও। নিজের শারীরিক যন্ত্রণার কথাও স্পষ্ট ভাবে বলার মতো অবস্থায় নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রবিবার ভোর ৩টে নাগাদ শিয়ালদহ এক নম্বর রেলব্রিজের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় রাহুলের অচৈতন্য দেহ। স্থানীয় যুবকেরা চিনতে পারে অঞ্চলের ছেলেটিকে। তাঁরাই রাহুলের পরিবারকে খবর দেন। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কেন এই পরিণতি ওই যুবকের? নিছক দূর্ঘটনা নাকি অন্য কিছু?

পুলিশের দাবি, ট্রেন দুর্ঘটনায় পা খুইয়েছেন এই যুবক। যদিও আহতের পরিবার এ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা।

রাহুলের স্ত্রী ও পরিবারের দাবি, কোনও ট্রেন দুর্ঘটনা নয়, তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন কাউন্সিলার শম্ভুনাথ কাওয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যই প্রাণনাশের ছক রাহুলের বিরুদ্ধে। তার জেরেই পা দু’টো খোয়াতে হল তাঁকে। অভিযোগের তির এলাকার কাউন্সিলার স্বপন সমাদ্দারের ও বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহার বিরুদ্ধে।

রাহুলের দাদা যগ্গু রায় বলেন, ‘‘এটা কোন দুর্ঘটনা নয়। আমার ভাই কাল রাতে বাইকে চালিয়ে বাড়ি থেকে বেলেঘাটার দিকে যাচ্ছিল। তখনই বাঁশ দিয়ে মেরে ওকে রেল লাইনে শুইয়ে দেয় টিঙ্কু আর উজ্বলের দুষ্কৃতি বাহিনী। তার পরে ওকে রেল ব্রিজের নীচে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘স্বর্ণকমল সাহা আর স্বপন সমাদ্দারের লোকেরা এ রকম করেছে। আমরা হলাম পুরনো তৃণমূল। যারা সিপিএম থেকে তৃণমূলে এসেছে। তাঁরাই এখন এরকম করছে। আমাদের সরিয়ে দিয়ে লুটেপুটে খেতে চায় সব কিছু।’’ রাহুলের স্ত্রী গোড়িয়া রায় বলেন, ‘‘ও সব সময় শম্ভুনাথ কাওয়ের সঙ্গে থাকত। উনি চলে গিয়েছেন, আমাদের সব শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে দলের গোষ্ঠীদন্দ্বের জেরে ঘরছাড়া রাহুল। স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে খুশির শরীর ভাল নেই শুনে আর লুকিয়ে থাকতে পারেননি। বাড়িতে ছুটে চলে এসেছিলেন। রাহুলের ভাই রামা রায় বলেন, ‘‘দূর্ঘটনায় ট্রেনে পা কাটা পড়লে, মাথায় চোট পেল কী করে আর একটা কাটা পা হারিয়ে বা গেল কী করে? দু’টো কাটা পা তো রেল লাইনের ধারে আমরা পাইনি। স্বপন সমাদ্দারের অত্যাচারে আমরা কেউ বাড়িতে থাকতে পারি না। বাড়ির মেয়েদের ওপরেও চলে অত্যাচার, প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। জানেন, আমার বাবা গত বছর মারা যান, শ্রাদ্ধটাও করতে দেয়নি ওঁরা।’’ রাহুলের এক আত্মীয়ের অভিযোগ, ‘‘পুলিশকে সবই জানিয়েছি কিন্তু কিছুই তো করেন না ওঁনারা।’’

যদিও পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। ডিসি গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আসলে আমরা সব সময়ই তৎপরতার সঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখি।’’

আরও পড়ুন

গড়-রক্ষায় গুরুকে পাশে চান শিষ্য

যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘কেন আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠছে জানি না। এ সবই মিথ্যা। যে ছেলেটি আহত, আমি তো তাঁকে চিনিই না। শম্ভুনাথ কাওয়ের সঙ্গে আমার খুব ভাল ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। সেখানে গোষ্ঠীদন্দ্বের প্রশ্ন আসছে কেন?’’ এলাকার বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা বলেন, ‘‘আসলে নির্বাচনের সময় সব ঘটনাতেই রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যে ছেলেটির কথা শুনছি, সে তো এলাকার ছেলেই নয়। মাঝে মাঝে ওই এলাকায় এসে ঝামেলা করে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।’’

কলকাতায় বার বারই শাসক দলের গোষ্ঠীদন্দ্বের কথা প্রকাশ্যে এসেছে। এই ঘটনা সেই তালিকায় নবতম সংযোজন। যা রাজনীতির ওপরে কি মানবিকতা ঠাঁই পাবে না, সে প্রশ্নকেই আরেক বার তুলে ধরল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE