Advertisement
০২ মে ২০২৪

কলকাতার কড়চা

তিরিশ থেকে ষাটের দশক জুড়ে বাঙালির ছেলেবেলার সঙ্গে মানুষটি ওতপ্রোত। এক দিকে ছোটদের চয়নিকা থেকে মণিদীপা পর্যন্ত দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত পূজাবার্ষিকী আর তাদের প্রকাশিত ছোটদের অজস্র বই, অন্য দিকে শিশু সাহিত্য সংসদের কালজয়ী নিজে পড়, নিজে শেখ, ছড়ার ছবি-র মতো বইয়ে প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৯০৩-’৭৪) প্রচ্ছদ ও রঙিন বা সাদাকালো অসংখ্য অলংকরণ কয়েক প্রজন্মের ছোটদের মনপ্রাণ কতটা অধিকার করে ছিল তা বলার লোকের আজও অভাব নেই।

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৭
Share: Save:

শতবর্ষ পেরিয়ে সম্মান পেলেন শিল্পী

তিরিশ থেকে ষাটের দশক জুড়ে বাঙালির ছেলেবেলার সঙ্গে মানুষটি ওতপ্রোত। এক দিকে ছোটদের চয়নিকা থেকে মণিদীপা পর্যন্ত দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত পূজাবার্ষিকী আর তাদের প্রকাশিত ছোটদের অজস্র বই, অন্য দিকে শিশু সাহিত্য সংসদের কালজয়ী নিজে পড়, নিজে শেখ, ছড়ার ছবি-র মতো বইয়ে প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৯০৩-’৭৪) প্রচ্ছদ ও রঙিন বা সাদাকালো অসংখ্য অলংকরণ কয়েক প্রজন্মের ছোটদের মনপ্রাণ কতটা অধিকার করে ছিল তা বলার লোকের আজও অভাব নেই। শিশুসাহিত্যের অমর চরিত্র ঘনাদা, টেনিদা, জয়ন্ত-মাণিক কিংবা অমরেশ তাঁর তুলি-কলমের সহযোগে আজও স্মৃতিধার্য। পরে নারায়ণ দেবনাথের হাতে বিখ্যাত হাঁদা-ভোঁদার সূচনা প্রতুলবাবুর হাতেই। তাঁর চিত্রকাহিনি, নানা লেখা ছড়িয়ে আছে পত্রপত্রিকায়।

না, জন্মের পর ১১২ বছর, চলে যাওয়ারও ৪১ বছর পার করে তিনি এ বার কোনও পুরস্কার পাননি। তবে বোধহয় তার থেকেও বেশি কিছু তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল— অনুরাগীদের সশ্রদ্ধ স্বীকৃতি। তারই প্রকাশ ‘বিষয় কার্টুন’ পত্রিকার প্রতুলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যায় (সম্পা: বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়)। যাঁরা তিল তিল করে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন তাঁর শিল্পকর্মের নানা নমুনা, তাঁরা ঝুলি উপুড় করে সাজিয়ে দিয়েছেন সংখ্যাটি। শতাধিক রঙিন ও দেড়শোর বেশি সাদাকালো ছবির সঙ্গে আছে তাঁকে নিয়ে অনেকগুলি লেখা, তাঁরও লেখা।

সচিত্র বাংলা বইয়ের দুশো বছরের ইতিহাসে প্রচ্ছদ ও অলংকরণ-শিল্পীদের ‘শিল্পী’ হিসেবে আমরা কতটুকু মর্যাদা দিয়েছি? বাংলার শিল্প বা শিল্পীদের নিয়ে বইপত্রে তাঁদের জন্য কটা শব্দ খরচ করা হয়? নবীন-প্রবীণ কিছু আগ্রহী মানুষের চেষ্টায় নারায়ণ দেবনাথ, ময়ূখ চৌধুরীর মতো শিল্পী পাঠকের দরবারে ফিরে এসেছেন। এ বার এলেন প্রতুল। পূর্ণ চক্রবর্তী, নরেন্দ্রনাথ দত্ত, সমর দে, ফণী গুপ্ত, বিনয় গুপ্ত, শৈল চক্রবর্তী, ধীরেন বল, সূর্য রায় এবং আরও অনেকে বাকি, তাঁদেরও ফিরিয়ে আনা জরুরি। সঙ্গে প্রতুলবাবুর আঁকা ‘শুকতারা’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ (১৯৪৮), ছোটদের চয়নিকা-র প্রচ্ছদ (১৯৩১), আর বিষয় কার্টুন-এর প্রচ্ছদে তাঁর আত্মপ্রতিকৃতি।

বহুরূপী

ভাল নাট্যের সন্ধানে পরিক্রমা আজও চলছে। ‘বহুরূপী’-র এই নাট্য-পথে রয়েছে অসংখ্য উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা। ১ মে এই নাট্যদলের ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সেই উপলক্ষে অ্যাকাডেমিতে ১-৩ মে যে নাট্যোৎসবের আয়োজন হয়েছে, তাতে ভাল নাট্য প্রদর্শনের সেই প্রয়াস থাকবে। ১ মে দুপুরে বহুরূপী-র নবতম প্রযোজনা ‘নিরো’। নির্দেশনা: তুলিকা দাস। ওই সন্ধ্যায় প্রথমে শম্ভু মিত্র সম্পর্কিত আলোচনা: শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এন এস ডি-র অধিকর্তা ওয়ামান কেন্দ্রে। পরের পর্বে নাট্যকোলাজ ‘তোমারে স্মরণ করি রূপকার’। ২ তারিখ দুপুরে ব্যতিক্রমী মানুষদের অভিনয় (সঙ্গের ছবি)। বামন সেই নাট্যকর্মীরা তাঁদের প্রযোজনা ‘কিনু কঁয়’ (বাংলায়, কী বলব?) নিয়ে আসছেন। অসমের উদলগুড়ি জেলায় তাঁদের নাট্য সংগঠন ‘দাপুন, দ্য মিরর’। প্রাণপুরুষ পবিত্র রাভা। সন্ধ্যায় ‘রবীন্দ্রভারতী থিয়েটার রেপার্টরি’র ‘ফাগুন রাতের গপ্পো’। ৩ মে সকাল ১০টায় শম্ভু মিত্রের উপর চলচ্চিত্র (নির্দেশক রাজা সেন)। দুপুরে ‘ফুল্লকেতুর পালা’, সন্ধ্যায় ‘নিরো’। পাশাপাশি শম্ভু মিত্রের জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে অ্যাকাডেমির সাউথ গ্যালারিতে ২৯ এপ্রিল থেকে ৪ মে তাঁর ও খালেদ চৌধুরীর কাজের প্রদর্শনীও থাকছে।

সত্যজিৎ-উৎসব

‘‘সত্যজিৎ রায়ের হিন্দি ছবি সচরাচর দেখা হয় না বাঙালির, তাই গত বারে ‘সদ্‌গতি’র মতো এ বারেও তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আমরা আয়োজন করেছি ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ দেখানোর।’’ জানালেন নন্দন-অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। ২-৪ মে নন্দন-এর সত্যজিৎ-উৎসবে প্রথম দিন ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ (সঙ্গে তারই পোস্টার), ছবিটি মুক্তির (৭ মে ১৯৬৫) পঞ্চাশ বছর পূর্তি বলে। দ্বিতীয় দিন ‘শতরঞ্জ’, আর শেষ দিন ‘গণশত্রু’, ছবিটি মুক্তির (১৯৯০) ২৫ বছর পূর্তির কারণে। প্রতি দিন সন্ধেয় এই ছবিগুলির আগে দেখানো হবে সত্যজিৎকে নিয়ে নানান সময়ে তৈরি তথ্যচিত্র। চলবে প্রদর্শনীও, সত্যজিতের ছবির পোস্টার-বুকলেট-লবি কার্ড-রেকর্ড-স্টিল ইত্যাদি নিয়ে। নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তপন সিংহ ফাউন্ডেশন (অরিজিৎ মৈত্র ও সৌমেন্দু দাসমুন্সীর সংগ্রহ থেকে)। অন্য দিকে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এ ৪ মে সন্ধে ৬টায় সত্যজিতের জন্মদিন উপলক্ষে বক্তৃতা দেবেন: ‘অপু টু সোমনাথ: দ্য নন-ইনডিফারেন্ট সিটি অ্যান্ড সত্যজিৎ রায়’।

প্রবহমান

গত বছর চলে গিয়েছেন কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্য। তাঁর মরণোত্তর প্রথম জন্মদিন ২ মে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অবনীন্দ্র সভাঘরে প্রকাশিত হবে তাঁকে নিয়ে বই কবি মণিভূষণ: আলোচনা ও নিজস্ব সংলাপ। বইটির আলোচনা অংশ শুরু হয়েছে শঙ্খ ঘোষের একটি লেখা ‘প্রবহমান মণিভূষণ’ দিয়ে। আলোচনা অংশে আরও ১৩টি প্রবন্ধ যাঁরা লিখেছেন তাঁদের অন্যতম শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবেশ রায়। ‘নিজস্ব সংলাপ’ অংশে থাকছে তাঁর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত কবিতার নির্বাচিত গুচ্ছ, এক অসমাপ্ত আত্মজীবনীর শুরু, ছড়িয়ে থাকা কিছু কথালাপ। প্রায় সাড়ে ছ’শো পাতার এই বইয়ে কবির চেনা ও অচেনা উপস্থাপন ঘটবে, কারণ মণিভূষণ ছিলেন একই সঙ্গে সমষ্টির আন্দোলন ও স্বগত ভাষণের বিরল সেতুবন্ধ।

গুরু-শিষ্য

১ মে মুক্তি পেয়েছিল ‘অপুর সংসার’, রূপবাণী অরুণা ভারতীতে, ১৯৫৯ সালে। সত্যজিতের আবিষ্কার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি। ওই ১ মে-তেই এ বার ‘সত্যজিৎ রায় স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন সৌমিত্র। আয়োজক সত্যজিৎ রায় সোসাইটি, অনুষ্ঠানটির নাম: ‘দ্য মাস্টার অ্যান্ড আই/ সৌমিত্র চ্যাটার্জিস হোমেজ টু রে’। আইসিসিআর-এ সন্ধে ৬.১৫-য় অনুষ্ঠান শুরুর আগে ওখানেই বিকেল ৫টায় এক সপ্তাহব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন সৌমিত্র। তাঁর আর সত্যজিতের পারস্পরিকতা নিয়েই সেজে উঠছে প্রদর্শনীটি। তাতে থাকবে ‘অশনি সংকেত’-এ গঙ্গাচরণ চরিত্রের জন্যে সত্যজিতের আঁকা সৌমিত্রর এই স্কেচটিও। বক্তৃতার আগে সৌমিত্র প্রকাশ করবেন সত্যজিতের প্রবন্ধ সংগ্রহ (আনন্দ ও রায় সোসাইটি-র যৌথ উদ্যোগ)। ‘রায় সোসাইটির পক্ষে এটা আমরা অনেকদিন ধরেই চাইছিলাম যে বাবার নামাঙ্কিত বক্তৃতাটি সৌমিত্রকাকু দিন, ওঁকে নিয়ে ১৬টা ছবি করেছেন বাবা, ২টো তথ্যচিত্র, ১৪টা কাহিনিচিত্র। ওঁদের দু’জনকে নিয়ে প্রদর্শনীটিও সে কারণেই। সবশেষে দেখানো হবে বাবার একটা আধ ঘণ্টার সাক্ষাৎকার, লন্ডনের টেলিভিশনে বিখ্যাত ‘সাউথ ব্যাঙ্ক শো’-তে নেওয়া হয়েছিল এটি, ১৯৭৮-এ, এখানে কেউই দেখেননি।’ জানালেন সন্দীপ রায়। অন্য দিকে সৌমিত্রকে নিয়ে মাসুদ করিমের তথ্যচিত্র ‘কৃষ্ণকলি’ দেখানো হবে ২৮ এপ্রিল সন্ধে ৬টায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন মিলনায়তনে। উদ্যোক্তা ‘দেবাঞ্জলি’র পক্ষে মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায় জানালেন, ‘বিশিষ্ট জনেরা অভিনেতা সৌমিত্রর বহুমাত্রিক প্রতিভার মূল্যায়ন করেছেন এ-ছবিতে।’ আনিসুজ্জামান, পবিত্র সরকার, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, গৌতম ঘোষ উপস্থিত থাকবেন।

ভাষাচার্য স্মরণে

এই বছর ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ১২৫তম জন্মশতবার্ষিকী। কিন্তু তাঁকে আমরা কতটুকু মনে রেখেছি? আশার কথা, এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে প্রকাশনা সংস্থা সূত্রধর। ২৭ এপ্রিল সন্ধে সাড়ে ছ’টায় মিলন মন্দিরে (ফেডারেশন হল) অনুষ্ঠিত হবে ‘বাঙালির শাশ্বত সারস্বত পরম্পরা: শিক্ষক সুনীতিকুমার ও ছাত্র সুকুমার সেন’। সেখানেই স্থাপনের জন্য সুনীতিকুমারের একটি আবক্ষ মূর্তি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আনিসুজ্জামান। উপস্থিত জনকে পুস্তিকাকারে দেওয়া হবে সুনীতিবাবুর লেখা যুগাবতার শ্রীবিবেকানন্দ। বিবেকানন্দের জন্মশতবার্ষিকীতে ‘উদ্বোধন’ পত্রিকায় এটি প্রকাশিত হয়। সে দিনই প্রকাশিত হবে আচার্যের প্রিয় ছাত্র সুকুমার সেন-এর স্মৃতিধর্মী গ্রন্থ সুখের স্মৃতি।

সুবর্ণজয়ন্তী

মন্টেসরি থেকেই ছবি আঁকায় গুরুত্ব দেয় পাঠভবন স্কুল। তাদের অনেক ছাত্রছাত্রীই আজ বিশিষ্ট শিল্পী। এ বছর পাঠভবন পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করবে। তাই বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অদিতি মজুমদার, চিত্রভানু মজুমদার, ইলিনা বণিক, প্রবীর গুপ্ত, ইন্দ্রপ্রমিত রায়ের মতো প্রাক্তনীদের ছবি নিয়ে ২৮ এপ্রিল একটি প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। চলবে ৩ মে (৩-৮টা, ১ মে বন্ধ) পর্যন্ত। ২৮ এপ্রিল বিকেল তিনটেয় সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা ‘শিক্ষাদীক্ষায় শিল্পচর্চার অভিমুখ’। বলবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রপ্রমিত রায়, সৌমিক নন্দী মজুমদার। অন্য দিকে ২৯ এপ্রিল বিশ্ব নৃত্য দিবসে বিকেল পাঁচটায় বিড়লা অ্যাকাডেমিতেই আলোচনা ‘রবীন্দ্র নৃত্য একটি স্বতন্ত্র নৃত্যধারা’। রবীন্দ্রনৃত্যে কবির স্পষ্ট নির্দেশিকা না থাকায় আজ বহু রূপভেদ দেখা দিয়েছে। তাই নাচ সম্পর্কে কবির মতামত থেকে একটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চাইছে বাণীচক্র মিউজিক অ্যান্ড ডান্স ট্রেনিং কলেজ। মুখ্য আলোচক সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুমিত বসু। থাকবেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবর্ধিত হবেন আশ্রমকন্যা প্রীতি ভৌমিক ও মঞ্জুলা দত্ত।

দিলীপের চা

দিলীপ মুখোপাধ্যায় ভারি মেজাজি মানুষ। বাষট্টি বছর বয়স। সাদার্ন অ্যাভেনিউতে ঢোকার মুখে তাঁর চায়ের দোকান। ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুদিনে এই দোকানের জন্ম। ‘দিলীপের চা’ জিজ্ঞেস করলে আশপাশের গাছপালা পাখপাখালি অব্দি দেখিয়ে দেবে। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে বেলা সাড়ে এগারোটা আর ও দিকে বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। শনিবার একবেলা। রবিবার পুরো বন্ধ। পুজোর পাঁচ দিন একেবারে বন্ধ। দিলীপবাবুর দাবি, কলকাতা শহরে তিনিই প্রথম মিল্কমেডের চা বানিয়ে খাইয়েছেন।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

কলকাতার প্রথম মেয়োনিজ-টোস্টও তাঁর তৈরি। সঙ্গে এগারোটা পদ পাউরুটি কেন্দ্রিক। এ ভাবেই একশো স্কোয়ার ফুটের দোকান থেকে সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। ওঁর চায়ের গুণমুগ্ধ মৃণাল সেন, মুনমুন সেন, মীর, সব্যসাচী চক্রবর্তী। ভূমি ওঁকে নিয়ে গান বেঁধেছিল। এ ছাড়াও বাংলা ব্যান্ডের বহু ছেলেমেয়ে দিলীপদার চা খেতে আসেন। ‘যদি গরম পড়ে তবে সকালে দোকানই খুলব না। সেই বিকেলে, দরকারে সপ্তাহে তিন দিন দোকান করব,’ বলেন দিলীপ মুখোপাধ্যায়। বোঝা যায় মেজাজটাই তো আসল রাজা, আমি রাজা নয়।

দাদার কীর্তি

একটা চালু রসিকতা আছে, ভারতে দুটো জিনিস হওয়া মানে সারা জীবনের সুখশান্তি বিসর্জন দেওয়া: প্রধানমন্ত্রী আর ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন। আর সেই ক্যাপ্টেনের নাম যদি হয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তবে কী পরিমাণ গল্পগাছা-মিথ আর বিতর্ক পল্লবিত থাকবে, বলাই বাহুল্য। অবসর নেওয়ার এত বছর পরেও বাঙালি তথা তামাম ভারতের ক্রিকেটাড্ডার অচ্ছেদ্য অঙ্গ বঙ্গসন্তানের বিশ্বশাসন। এগারো জন ক্রিকেটারকে টিম ইন্ডিয়ায় পালটে দেওয়াটা যেমন কিংবদন্তি, তেমনই মুচমুচে তর্কের দাবিদার গ্রেগ চ্যাপেল অধ্যায়, টিম থেকে বাদ পড়া আর কামব্যাক। এই সমস্তটাই দু’মলাটের মধ্যে লিখেছেন সপ্তর্ষি সরকার, তাঁর সৌরভ গাঙ্গুলি: ক্রিকেট, ক্যাপ্টেন্সি অ্যান্ড কন্ট্রোভার্সি (হার্পার স্পোর্ট) বইয়ে। সৌরভকে নিয়ে লেখা এ-ই প্রথম ইংরেজি বই, যেখানে ক্রিকেটার ও ক্যাপ্টেন ‘দাদা’র তাবৎ ‘কীর্তি’ পরিবেশিত হয়েছে অশেষ যত্নে। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী সপ্তর্ষি সৌরভকে নিয়ে মেতে আছেন সেই ২০০৫ থেকে। ‘উইলাভসৌরভ ডটকম’ নামের এক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যাত্রা শুরু, বৃত্ত সম্পূর্ণ হল এই বইয়ে এসে। চর্চিত পরিসংখ্যানের ও-পারে গিয়ে সপ্তর্ষি সম্ভাব্য সমস্ত ক্রিকেটীয় আঙ্গিক থেকে সৌরভের কেরিয়ারকে বিশ্লেষণ করেছেন, দেখিয়েছেন কেন শুধু ওয়ান-ডে’তেই না, টেস্ট ক্রিকেটেও তাঁর অবদান অনন্য। বিশ্বজোড়া সৌরভ-ভক্তরা এই বই সংগ্রহে রাখতে চাইবেনই। প্রিন্স অব ক্যালকাটার শহরেই বইটির প্রকাশ-অনুষ্ঠান, আজ সন্ধে সাড়ে ছ’টায়, সাউথ সিটির বই বিপণি স্টারমার্কে।

প্রয়াণ

সত্তর ছুঁই ছুঁই বয়সেও পুরোদমে কাজের মধ্যে ছিলেন ছোট্টখাট্ট মানুষটি৷ শেষ জীবনে অধ্যাপনা করতেন বিশ্বভারতীতে৷ কিন্তু তাঁর মূল আগ্রহ ছিল পুথিপাঠ, পুথি সম্পাদনা৷ বেশির ভাগ সময় ডুবে থাকতেন তাতেই। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য করুণাসিন্ধু দাস৷ তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল পাণিনির ব্যাকরণে পরিভাষা৷ ছাত্রমহলেও জনপ্রিয় ছিলেন করুণাসিন্ধু ৷ ছাত্রদের জন্য সহজ ভাষায় বই লিখেছেন। পাশাপাশি চলেছে গবেষণা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আইসিসিআর রবীন্দ্র চেয়ার অধ্যাপক’ হিসেবেও কাজ করেছেন৷ সেখানে বাংলা, দর্শন, ইংরেজি, ভাষাবিজ্ঞান ও সংগীত বিভাগ এবং চারুকলা অনুষদের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন৷ পড়িয়েছেন রবীন্দ্রনাথের শিল্পচিন্তা ও সৌন্দর্যদর্শন বিষয়ে৷ তখন থেকেই পুথিপাঠ-বিদ্যা নিয়ে নানা কর্মশালার প্রধান উৎসাহী ছিলেন তিনি৷ ১৯৪৭-এ বীরভূমে জন্ম। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে পাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতে এম এ৷ হাওড়ার নটবর পাল বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতা শুরু, পরে নরসিংহ দত্ত কলেজে। ২৯ বছর পড়িয়েছেন রবীন্দ্রভারতীতে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিরিশ৷ উল্লেখ্য সংস্কৃত সাহিত্যের সমাজতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যভাবনা প্রসঙ্গ৷ সম্পাদনা করেছেন সংস্কৃত সাহিত্য পরিষদের পত্রিকা৷ যুক্ত ছিলেন ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে আই এস আই-এর আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রকল্পেও৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE