Advertisement
০৫ মে ২০২৪

শুরু হয়েছে বিজেপি-বিরোধিতার লগ্ন

বিহার নির্বাচনের পরে সক্রিয় হচ্ছে প্রতিপক্ষ। জল মাপছে সবাই। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালবিহার নির্বাচনের পরে সক্রিয় হচ্ছে প্রতিপক্ষ। জল মাপছে সবাই। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

নীতীশ কুমারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে লালু-নীতীশ-মমতা-কেজরিবাল

নীতীশ কুমারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে লালু-নীতীশ-মমতা-কেজরিবাল

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ০০:২৮
Share: Save:

শপথগ্রহণের পর এক নম্বর অ্যানে মার্গে তাঁর সরকারি নিবাসে পৌঁছে বাড়ির সবুজ লনে বসে নীতীশ কুমার এই প্রতিবেদককে বললেন, আসলে বিহারের ভোটের ফলাফল গোটা দেশের মানুষের কাছে একটা জাতীয় বিকল্পেরও প্রত্যাশা তৈরি করেছে।

প্রশ্ন করেছিলাম, এ তো মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নয়। এ তো মনে হচ্ছে, একটা জাতীয় ইভেন্ট। মুখ্যমন্ত্রী বলছিলেন, আসলে দিল্লির ভোটেও অরবিন্দ কেজরীবাল বিজেপি-কে পরাস্ত করেছিলেন। কিন্তু তখন সেখানে কংগ্রেসও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপক্ষ ছিল। কিন্তু বিহারে জয় হয়েছে একটি জোটের। যার নাম মহাগঠবন্ধন। মানুষ এই জোটকে জাতীয় স্তরেও দেখতে চাইছে।

পটনা মানে পাটলিপুত্র শহর। পটনা মানে মগধের ঐতিহ্য। যে গাঁধী ময়দানে নীতীশ শপথ নিলেন, সেই ময়দানেই জয়প্রকাশের ক্রান্তি সমাবেশ হয়েছে। বিহার গোটা দেশে রাজনীতির একটি স্নায়ুকেন্দ্র। কাজেই আবার আগামী দিনের মোদী-বিরোধী রাজনীতির আঁতুরঘর হিসেবে বিহার তার জায়গা করে নেবে কি না, সেটাই হল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

গোটা দেশ জুড়ে দেড় বছরের মাথায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ জমা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদীকে ঘিরে প্রত্যাশা গগনচুম্বী ছিল। দশ বছরের মনমোহন সিংহ সরকারের নীতিপঙ্গুতার ফলে মানুষ ভেবেছিল এ বার নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এলেই ‘অচ্ছে দিন’ এসে যাবে। কিন্তু প্রত্যাশা যদি গগনচুম্বী হয়, তখন হতাশাও একই ভাবে দ্রুত আসে।

শপথ নিচ্ছেন নীতীশ কুমার।

রাশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর চেরনোমিরদিন খুব রসিক মানুষ ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে এক সংবেদনশীল সময়ে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কমিউনিজম তখন ধংসপ্রাপ্ত। আর পুটিন ধীরে ধীরে নিজের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর কায়েম করতে শুরু করেছেন। প্রবল হতাশা নেমে এসেছে রাশিয়ায়। বিষাদের মধ্যেও রসিকতা করে চেরনোমিরদিন বলেছিলেন, আমরা আরও ভাল করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যতই চেষ্টা করেছি, সেটা চিরাচরিত একঘেয়ে ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রথম কিছু করতে গিয়ে দেখেছি, যেটি করেছি সেটি আসলে পুরনোরই পুনরাবৃত্তি।

তিনি আরও বলেছিলেন, আমরা প্রশাসনিক সাফল্য অর্জনের জন্য আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক নতুন নতুন সংস্থা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু দেখা গেল, সবই শেষ পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টি অফ সোভিয়েত ইউনিয়নে পরিণত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীও ব্যতিক্রম নন। এই ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে গেলে ব্যবস্থাকেই ভাঙতে হয়। কোনও গণতান্ত্রিক শাসকের পক্ষে এই ব্যবস্থা নেওয়া কার্যত অসম্ভব। আর তাই উল্টো রথের প্রক্রিয়াও শুরু হয়। কারও ক্ষেত্রে অ্যান্টি-ইনকামবেন্সির জন্য এক বছর লাগে, কারও পাঁচ বছর।

এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম প্রার্থী। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে একা নন। তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে পারেন, তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন নন? কেন নন মুলায়ম সিংহ যাদব? কেন নন শরদ পওয়ার? এমনকী, লালুপ্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে যতই পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির অভিযোগ থাক না কেন, প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড় থেকে তিনিই বা বাইরে থাকবেন কেন?

কংগ্রেস এখনও দুর্বল। কিন্তু বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রধান বড় রাজনৈতিক দল এখনও কংগ্রেস। বিহারে অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করার পর এখন কংগ্রেসও জোট রাজনীতির পথে এসেছে। রাহুল গাঁধী চেষ্টা করছেন, রাজ্যওয়াড়ি মোদী-বিরোধী অসন্তোষকে আরও তীব্র করতে, একলা-চলো নীতি বিসর্জন দিয়ে জোট রাজনীতি করতে। আবার তিনি এটাও জানেন, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সরকার গঠন করা কার্যত অসম্ভব। লোকসভার গঠনটি এই মুহূর্তে এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে আঞ্চলিক দলের সরকার গড়তে গেলে, তা সে তৃতীয় ফ্রন্টই হোক বা চতুর্থ ফ্রন্টই হোক, হয় কংগ্রেস নয় বিজেপি— যে কোনও একটি দলের সমর্থন সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন। ’৭৭ সালই হোক বা ’৮৯। তার পর দেবগৌড়া, গুজরালের সরকারই হোক। ঐতিহাসিক ভাবে এই ঘটনার কোনও ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।


মঞ্চে একজোট মোদী বিরোধীরা

আসলে এখন পরিস্থিতিটা একটা ফ্লুইডের মতো। সবাই জল মাপছে। আর তাই সবাই সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে। জন্মদিন পালনই হোক আর দেওয়ালি মিলনই হোক, নানা ধরনের ছুতো তৈরি করে রাজনৈতিক প্রত্যাশী নেতারা জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গেও কথা বলছেন রাহুল গাঁধী। মমতার সঙ্গেও কথা বলছেন। মায়াবতী কংগ্রেসের সঙ্গেও কথা বলছেন। বিজেপি-র সঙ্গেও কথা বলছেন। এটাই রাজনীতির দস্তুর। এখানে কোনও পূর্ণচ্ছেদ নেই।

কিন্তু একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়, বিহার নির্বাচনের পর মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গোটা দেশজুড়ে একটা জনমত তৈরি হতে শুরু করেছে। অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। আর সেই সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রতিপক্ষরা ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে। ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেস ও বিজেপি বিরোধিতা পেন্ডুলামের মতো— এক বার এ দিকে আর এক বার ও দিকে ঘুরছে। এখন শুরু হচ্ছে বিজেপি বিরোধিতার লগ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE