‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে বেরিয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে দফায় দফায় কুড়মিদের বাধার মুখে পড়তে হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়কে। —নিজস্ব চিত্র।
‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে বেরিয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে দফায় দফায় কুড়মিদের বাধার মুখে পড়তে হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়কে। সিমলাপাল থেকে খাতড়া যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বনকাটা ও জামদা গ্রামে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কনভয়ের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখালেন আন্দোলনকারীরা। পরে খাতড়া ঢোকার মুখে অবশ্য কুড়মি নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন অভিষেক। তাঁর কথায় আশ্বস্ত হয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ তুলে নেন।
বর্তমানে ওবিসি শ্রেণিভুক্ত কুড়মি সম্প্রদায় দীর্ঘ দিন ধরে তফসিলি জাতির স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তফসিলি জাতি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কুড়মিদের কয়েকটি সংগঠন রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি লালগড়ের ধরমপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ কুড়মিদের একটি সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। বাঁকুড়ায় ‘নবজোয়ার কর্মসূচি’র যাত্রা শুরুর আগেই আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা অভিষেকের যাত্রাপথে নিজেদের দাবির সমর্থনে স্লোগান দেবেন। কিন্তু সিবিআইয়ের তলব পেয়ে শুক্রবার দলীয় কর্মসূচি কাটছাঁট করে বাঁকুড়া ছেড়ে কলকাতায় ফিরতে হয় অভিষেককে। শনিতে কেন্দ্রীয় সংস্থার দফতরে হাজিরা দেওয়ার পর সোমবার আবার জেলায় ফিরে নবজোয়ারে যোগ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সেই কর্মসূচিতে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে যান তৃণমূল নেতা।
সিমলাপালে মঙ্গলবার একটি জনসভা করার কথা ছিল অভিষেকের। কিন্তু প্রবল ঝড়বৃষ্টির কারণে তা বাতিল করা হয়। বিকেলে সেখানে একটি রোড শো করেই অভিষেক খাতড়ার উদ্দেশে রওনা দেন। তৃণমূল নেতার কনভয় বনকাটা গ্রামে ঢুকতেই দেখা যায়, রাস্তার ধারে কুড়মি আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের দেখে অভিষেক গাড়ি থামিয়ে জানলার কাচ নামিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর আবার খাতড়ার উদ্দেশে রওনা দেয় কনভয়। বনকাটার অদূরে পুখুরিয়া গ্রামের কাছেও কুড়মি সম্প্রদায়ের কয়েকশো মানুষ রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু সে বার আর অভিষেকের গাড়ি থামেনি। তৃণমূল নেতা না দাঁড়ানোয় আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে কনভয়ের বাকি গাড়িগুলির উপর। রাস্তায় গাড়ির সামনে বসে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে বিক্ষোভ চলার পর অবশেষে কুড়মিরা রাস্তা থেকে সরে যান। এর পর খাতড়া ঢোকার মুখে জামদা গ্রামের কাছে অভিষেকের গাড়ি আবার আটকানো হয়। বিক্ষোভের মুখে অভিষেক গাড়ি থেকে নেমে কুড়মি নেতাদের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলেন।
জামদায় অভিষেকের সঙ্গে কথা বলার পর কুড়মি নেতারা তাঁকে স্পষ্ট জানান, অবিলম্বে তাঁদের দাবি মেনে কেন্দ্রের কাছে সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট পাঠাতে হবে রাজ্য সরকারকে। নইলে আগামী নির্বাচনে কুড়মি সম্প্রদায়ের ভোট রাজ্যের শাসকদলের পক্ষে যাবে না। কুড়মিদের এই হুঁশিয়ারির মুখে অভিষেকও পাল্টা জানিয়ে দেন, কুড়মি সম্প্রদায় এমনিতেই শাসক তৃণমূলকে ভোট দেয় না। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট দিলে আমরা পুরুলিয়ায় ২ লক্ষের বেশি ভোটে হারতাম না। পুরুলিয়ার ৯টি আসনের মধ্যে ৬টি আমাদের হাতে নেই। আমি এখানে ভোটের রাজনীতি করতে আসিনি। যদি তাই হত, তা হলে গাড়ি থেকে নেমে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতাম না।’’
সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ কুড়মিদের সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, কথা প্রসঙ্গে তা-ও টেনে আনেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘অজিত মাইতির মন্তব্যের ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। দিলীপ ঘোষ আপনাদের কাপড় খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলুন। আপনাদের সমস্যার কথা শুনলাম। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’ সাহায্যের আশ্বাস পেয়ে কুড়মিরা অবরোধ তুলে নেন।
এর পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ খাতড়ায় পৌঁছন অভিষেক। সেখানে আদিবাসীদের পোশাক পরে তাদের আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তার পর ৭টা নাগাদ খাতড়া থেকে ছাতনা ব্লকের কমলপুরের উদ্দেশে রওনা দেন অভিষেক। সেখানেই রাত্রিবাস করার কথা তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy