Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Tollygunge Police Station

টালিগঞ্জ থানায় তাণ্ডবের ঘটনায় পিসি পুতুলের পরে এ বার গ্রেফতার ভাইপো আকাশ

যে ভিডিয়ো ফুটেজে দুষ্কৃতীদের দেখা গিয়েছে কনস্টেবল বিমান দাসকে মারধর করতে, সেই ফুটেজেই আকাশকে দেখা গিয়েছে। গণ্ডগোলের পিছনে রণজয়ের বড় ভূমিকা আছে বলে পুলিশ জানায়। রবিবার রাতে প্রকাশ্য মদ্যপানের অভিযোগে এক যুবককে পুলিশের আটক করা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। তদন্তকারীদের দাবি, রণজয়ই ফোন করে ঘটনার কথা পুতুলকে জানান। তারপরই পুতুল ও আকাশ দলবল নিয়ে চড়াও হন পুলিশের উপর।

টালিগঞ্জ থানায় হামলার ঘটনায় এখনও অবধি গ্রেফতার ৬ জন। ফাইল চিত্র।

টালিগঞ্জ থানায় হামলার ঘটনায় এখনও অবধি গ্রেফতার ৬ জন। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০৯:১৬
Share: Save:

টালিগঞ্জ থানায় হামলার ঘটনায় গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত আকাশ। মঙ্গলবার গভীর রাতে টালিগঞ্জ এলাকা থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাকে। গ্রেফতার করা হয়েছে আকাশের সঙ্গী রণজয় হালদার এবং অক্ষয় নামে আর এক অভিযুক্তকে।

পুলিশের দাবি, রবিবার রাতে থানায় হামলা ও পুলিশকে মারধরের যে ঘটনা ঘটেছিল, তার নেতৃত্বে ছিল পুতুল নস্কর ও তার ভাইপো আকাশ। পুতুলকে মঙ্গলবারই গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু ফেরার ছিল আকাশ।

যে ভিডিয়ো ফুটেজে দুষ্কৃতীদের দেখা গিয়েছে কনস্টেবল বিমান দাসকে মারধর করতে, সেই ফুটেজেই আকাশকে দেখা গিয়েছে। গণ্ডগোলের পিছনে রণজয়ের বড় ভূমিকা আছে বলে পুলিশ জানায়।

আরও পড়ুন: আলিপুর থানায় হামলা-কাণ্ডে হয়নি চার্জ গঠন

রবিবার রাতে প্রকাশ্য মদ্যপানের অভিযোগে এক যুবককে পুলিশের আটক করা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। তদন্তকারীদের দাবি, রণজয়ই ফোন করে ঘটনার কথা পুতুলকে জানান। তারপরই পুতুল ও আকাশ দলবল নিয়ে চড়াও হন পুলিশের উপর।

এই ঘটনায় এখনও অবধি গ্রেফতারের সংখ্যা ৬। পিসি, ভাইপো-সহ বাকি অভিযুক্তকে বুধবারই আলিপুর আদালতে তোলা হবে। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার দাবি জানানো হবে বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাত ন’টা নাগাদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে মেনকা সিনেমা হলের সামনে থেকে কয়েক জন যুবককে প্রকাশ্যে মদ্যপান করার অভিযোগে আটক করে পুলিশ। আটক যুবকরা প্রত্যেকেই চেতলা এলাকার বাসিন্দা। অভিযোগ, তাঁদের আটক হওয়ার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে টালিগঞ্জ থানায় ৩০-৪০ জনের একটি দল যায়। থানার কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, ওই দলে বেশ কয়েক জন মহিলা ছিলেন। তাঁরা আটক যুবকদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য থানার মধ্যেই ব্যাপক চিৎকার-গালিগালাজ শুরু করেন। বাধা দিতে গেলে তাঁদের সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তি হয় মহিলা পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে। পুলিশ কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, সেই সময় পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে ‘নরম’ হয়ে যান থানার ওসি। তাঁর নির্দেশে ‘ক্যালকাটা পুলিশ অ্যাক্ট’-এর ‘ডিসঅর্ডারলি কনডাক্ট’-এর অভিযোগে শুধুমাত্র জরিমানা করেই ছেড়ে দেওয়া হয় আটক যুবকদের।

আরও পড়ুন: মানসিক রোগী মেয়ের হাতে ‘ঘরবন্দি’ বৃদ্ধা

তখনকার মতো চলে যায় ওই দল। কিন্তু ফের তারা দলে ভারী হয়ে ফিরে আসে বলে অভিযোগ। এ বার দলে কয়েকশো জন! প্রত্যেকেই চেতলা বস্তির বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এর পরেই রীতিমতো হামলা চলে। থানার ভিতরে ঢুকে পুলিশ কর্মীদের মারধর করে ওই হামলাকারীরা। রেহাই পাননি মহিলা পুলিশ কর্মীরাও। থানার বাইরে দাঁড়ানো পুলিশ কনস্টেবলকে মারতে মারতে থানার মধ্যে নিয়ে আসে হামলাকারীরা। ওসির ঘরে গিয়ে তাণ্ডব চালানোর পাশাপাশি ওই হামলাকারীরা পৌঁছে যায় থানার উপর তলায় থাকা মেসেও। থানা লক্ষ্য করে ইট-পাথরও ছোড়া হয়।

হামলাকারীদের পাল্টা অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের ব্যাপক মারধর করেছে। ভোলার দাবি, সুজিত দাস এবং দীপঙ্কর সিংহ নামের দুই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁকেও পুলিশ আটকে রাখে। পরে গভীর রাতে তাঁদের ছাড়া হয়। ভোলা এবং তার সঙ্গীরা জানান, রাতেই পাড়ার বাসিন্দারা মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে গিয়ে গোটা ঘটনার কথা জানিয়েছেন। এর পর তাঁরা পুলিশের মারে আহতদের নিয়ে এসএসকেএমে চিকিৎসা করাতে যান।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন পুলিশ প্রথম বারেই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়নি? কেনই বা অতিরিক্ত বাহিনী চাননি থানার ওসি? পুলিশ কর্মীদের একাংশের ইঙ্গিত, রাজনৈতিক চাপ আসতে পারে, এই আশঙ্কায় শুরু থেকেই ‘নরম’ ছিলেন থানার ওসি। এমনকি পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার পরও তিনি আপসে মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন।

আরও পড়ুন: তিন দিন বন্ধ রেখে মেরামতি বঙ্কিম সেতুতেও

এর আগে ২০১৪-র নভেম্বরে আলিপুর থানায় তাণ্ডব চালিয়েছিল এক দল লোক। শুধু তাণ্ডব নয়, থানায় আটক করে রাখা চার মহিলা-সহ ১৪ জন অভিযুক্তকেও ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল হামলাকারীরা। লালবাজার অবশ্য সরকারি ভাবে থানায় হামলা-মারধরের কথা স্বীকার করতে চায়নি চায়নি সেই সময়। টেবিলের তলায় ঢুকে ফাইলের আড়ালে প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত পুলিশকর্মীর ক্যামেরাবন্দি ছবিও সেই সময়ে প্রকাশ্যে আসে। সেই সময়েই লালবাজারের এক পুলিশকর্তা এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “হামলাকারীদের থেকে বাঁচার জন্য নয়, ক্যামেরায় ধরা না-পড়ার জন্যই উনি ও-ভাবে বসেছিলেন।” সেই ঘটনাই প্রায় পুনরাবৃত্তি হয়েছে টালিগঞ্জে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE