Advertisement
০১ মে ২০২৪
Illegal Construction in Kolkata

বেআইনি বাড়ির বিষয় নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যেই প্রাক্তন বিচারপতিকে ফোন মেয়রের, দু’পক্ষে বাদানুবাদ

সম্প্রতি গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে বিপর্যয়ের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়।

অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম।

অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৪
Share: Save:

কলকাতা পুরসভা এলাকায় বেআইনি নির্মাণ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সাংবাদিক বৈঠকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যখন কথা বলছিলেন, তখন আচমকাই তাঁর মোবাইলে ফোন আসে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিমের! মিনিট তিন-চারেকের কথোপকথনে বাদানুবাদে জড়ালেন দু’জন।

সম্প্রতি গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে বিপর্যয়ের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। প্রশাসনের নাকের ডগায় যে ভাবে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ হয়ে চলেছে, তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। বেআইনি নির্মাণের নেপথ্যে সিন্ডিকেট চক্রেরও অভিযোগ তুলছেন। এমন সময় আচমকাই তাঁকে ফোন করেন ফিরহাদ। দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় ফোনে। ফোনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বাম আমলের বাড়ি এখনও রয়েছে কেন? কেন ভেঙে দাওনি?’’ প্রাক্তন বিচারপতি মেয়রকে জানান, তাঁর এলাকাতেই বেআইনি নির্মাণ হয়ে চলেছে। অথচ প্রশাসন কিছুই করছে না। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘তুমি এসো আমার বাড়িতে। ছাদে নিয়ে গিয়ে দেখাব গলির মধ্যে কী ভাবে পাঁচ তলা বাড়ি গজিয়ে উঠেছে।’’

ফোনের ও পারে ফিরহাদ কী বলেছেন, তা যদিও শোনা যায়নি। পরে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ নিয়ে একটা কনফারেন্স ছিল প্রেস ক্লাবে। আমি যখন কথা বলছিলাম, তখনই মেয়রের ফোন আসে। ফিরহাদ আমাকে বলেন, ওই নির্মাণ সব বাম আমলের। আমি তখন ওকে বলেছি, ভেঙে দাওনি কেন ও সব! ও তখন বলে, আমি জানতাম না। আমাকে জানাননি কেন? আমি বলি, তোমার প্রতিনিধি আছে তো!’’

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভার ৭৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কবিতীর্থ পার্ক এলাকায় থাকেন তিনি। ঘটনাচক্রে, সেই এলাকা ফিরহাদের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরের অন্তর্গত। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এক সময়ে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন ছিলেন। সেই সময় রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ বাধে। এর পরেই মানবাধিকার কমিশনের পদ থেকে সরে যেতে হয় তাঁকে। এর পর থেক শাসক-বিরোধী বলেই পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। পুরসভা সূত্রে খবর, কলকাতা পুর এলাকায় বেআইনি নির্মাণের সূচনা যে বাম আমলে শুরু হয়েছিল, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে ফোন করে সে কথাই জানিয়েছিলেন ফিরহাদ। বেআইনি নির্মাণ যে হয়ে চলেছে, সে কথা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কেন ফিরহাদকে জানাননি, সে প্রশ্নও তুলেছেন মেয়র।

সাংবাদিক বৈঠকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘তোমাকে কী ভাবে পাব আমি? তোমার প্রতিনিধি তো আছে। তোমাদের প্রশাসন কাজ করছে না। আমার এলাকায় ভেঙে দিয়ে গিয়েছিল। পরে আবার দোতলা বাড়ি পাঁচ তলা হয়ে গেল!’’ মেয়রের কাছে স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ফোনে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এক দিকে নির্মলা সীতারামন টাকার অভাবে ভোটে লড়তে পারছেন না। আর অন্য দিকে তোমার কাউন্সিলর পাঁচ কোটি টাকার গাড়ি চড়ে আসে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Construction FirhadHakim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE