Advertisement
০৭ মে ২০২৪
jangalmahal

জঙ্গলমহলে নয়া স্লোগান

জঙ্গলমহলের জন্য বিজেপির স্থানীয়স্তরে স্লোগান তৈরি হয়ে গিয়েছে। ঠিক হয়েছে, ‘জঙ্গলমহল কাটমানির হিসেব চায়’—এই স্লোগান সামনে রাখা হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৫৬
Share: Save:

ভোটের বাজারে জঙ্গলমহলে নতুন স্লোগান আনছে বিজেপি। তৃণমূলের নেতা-জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপির পাল্টা স্লোগান, ‘জঙ্গলমহল কাটমানির হিসেব চায়’।

কিছুদিন আগে লালগড়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার সভায় আশানুরূপ লোক হয়নি। রাজ্যে সভা-কর্মসূচি করতে আসা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ‘বহিরাগত’, ‘বর্গি’, ‘ভাড়াটে সৈন্য’-র মতো নানা শব্দবন্ধ ব্যবহার করছে তৃণমূল। তাতে অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপির। ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ তৃণমূলের সদ্য নতুন স্লোগানটি গেরুয়া শিবিরকে আরও অস্বস্তিতে ফেলছে। এমন স্লোগানের যুতসই পাল্টা স্লোগান প্রয়োজন বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। সূত্রের খবর, জঙ্গলমহলের জন্য বিজেপির স্থানীয়স্তরে স্লোগান তৈরি হয়ে গিয়েছে। ঠিক হয়েছে, ‘জঙ্গলমহল কাটমানির হিসেব চায়’—এই স্লোগান সামনে রাখা হবে। রাজ্য নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত মিললেই নতুন স্লোগান নিয়ে মাঠে নেমে পড়বেন বিজেপি কর্মীরা।

এখন গেরুয়া শিবিরের স্লোগান, ‘আর নয় অন্যায়’। সেই স্লোগান লেখা মঞ্চে দাঁড়িয়েই সোমবার হুগলির সাহাগঞ্জে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আওয়াজ তুলেছেন, ‘‘বাংলায় সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, কাট-কালচার বন্ধ না করলে এখানকার প্রকৃত বিকাশ সম্ভব নয়।’’ সেই দুর্নীতি-কাটমানির প্রসঙ্গ টেনেই বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব চাইছেন জঙ্গলমহলের ক্ষেত্রে নতুন স্লোগান প্রয়োগ করতে।

কিন্তু কেন হঠাৎ নতুন স্লোগানের প্রয়োজন হচ্ছে?

বিজেপি নেতৃত্বও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েত-কেন্দ্রিক পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতা-জনপ্রতিনিধিদের কাটমানি আদায়ের অভিযোগকে হাতিয়ার করেই দলের সাফল্য এসেছিল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফলও সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। শুধু পঞ্চায়েতের দুর্নীতিই নয়, সেই সঙ্গে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি, কাজের টেন্ডার নিয়েও যথেচ্ছ কাটমানি, একই রাস্তা বার বার সংস্কারের মতো নানা রকম দুর্নীতির তথ্য হাতে রয়েছে বলে গেরুয়া শিবিরের দাবি। পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে তৃণমূলের দ‌লীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ভোটারদের একাংশ জানিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁরা পছন্দ করেন, কিন্তু তৃণমূলের স্থানীয়স্তরের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধেই তাঁরা রায় দিয়েছেন। কিন্তু পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের পরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে ‘দুয়ারে সরকার’, ‘পাড়ায় পাড়ায় সমাধান’-এর মতো জনমুখী কর্মসূচি, ৫টাকায় ডিম-ভাতের মত প্রকল্প চালু করে জঙ্গলমহলবাসীর ক্ষোভের ক্ষতে অনেকটাই প্রলেপ দেওয়া গিয়েছে বলে তৃণমূল শিবিরের দাবি। ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম অবশ্য বলেন, ‘‘যন্ত্রণা কখনও ভোলা যায় না। যাঁরা তৃণমূলের নেতা-জনপ্রতিনিধিদের দাবিমত টাকা দিতে পারেননি, তাঁরা পরিষেবা পাননি। পঞ্চায়েত ও পুরসভার উন্নয়ন-কাজেও বিস্তর দুর্নীতি। সর্বত্রই কাটমানির কালচার। তাই ‘জঙ্গলমহল কাটমানির হিসেব চায়’ একেবারে যথার্থ স্লোগান।’’

জেলা বিজেপির সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের বিজ্ঞাপনের আড়ালে রয়েছে তাঁর দলের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি। কাটমানির হিসেব চাওয়ার পাশাপাশি, জনগণ কাটমানি ফেরত চান, সেই দাবিও আমরা তুলব।’’ তৃণমূল অবশ্য বিজেপির নয়া স্লোগানকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো বলেন, ‘‘বিজেপির দিশাহারা অবস্থা। ওরা যাই স্লোগান তুলুক, এলাকার মানুষ বলছেন, ‘জঙ্গলমহল বিজেপির বিদায় চায়’।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP jangalmahal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE