Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সিসিটিভি দেখিয়েছে খুনির ছবি

আততায়ীকে মোটরবাইকে চাপিয়ে নিজেই হাইরোডে নামিয়ে দিয়ে এসেছিল ওষুধের স্টকিস্ট পিন্টু। অন্তত পুলিশের দাবি তেমনটাই। 

কার্তিককে খুন করে কোমরে রিভলভার গুঁজতে গুঁজতে বেরিয়ে যাচ্ছে আততায়ী। কৃষ্ণনগরে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে।

কার্তিককে খুন করে কোমরে রিভলভার গুঁজতে গুঁজতে বেরিয়ে যাচ্ছে আততায়ী। কৃষ্ণনগরে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে।

সুস্মিত হালদার 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০২
Share: Save:

আততায়ীকে মোটরবাইকে চাপিয়ে নিজেই হাইরোডে নামিয়ে দিয়ে এসেছিল ওষুধের স্টকিস্ট পিন্টু। অন্তত পুলিশের দাবি তেমনটাই।

কৃষ্ণনগরে চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাসের বাড়ির চৌহদ্দিতে তাঁর সঙ্গী কার্তিক বিশ্বাসকে গুলি করার পরে কোমরে রিভলভার গুঁজতে-গুঁজতে বেরিয়ে গিয়েছিল আততায়ী। বাড়ির সামনে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সেই ফুটেজ দেখা গিয়েছে।

কিন্তু তার পরে খুনি পালাল কী করে? গেলই বা কোথায়?

পুলিশের দাবি, যে মোটরবাইকে চেপে খুনি ওই রাতে বাড়িটির সামনে এসেছিল, সেটি পিন্টুরই। কার্তিককে খুন করে সে পালিয়ে পিন্টুর কাছেই চলে যায়। পিন্টু নিজে মোটরবাইক চালিয়ে তাকে পৌঁছে দেয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। সেখান থেকে বাস ধরে এলাকা ছেড়ে চলে যায় খুনি।

কিন্তু কোথায় গেল সে? সোমবার রাত পর্যন্ত কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার পুলিশ সে ব্যাপারে কার্যত অন্ধকারে। তাদের দাবি, ঘটনার মূল চক্রী সাগর নাথ ওরফে বাবনকে কোনও ভাবেই মুখ খোলানো যাচ্ছে না। টানা জেরার মুখে যা-ও বা সে দু’একটা তথ্য দিচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর। তবে পুলিশের দাবি, পিন্টুকে জেরা করে তারা প্রায় নিশ্চিত যে পেশাদার খুনিকে ভাড়া করা হয়েছিল। সে বাবনের পূর্ব পরিচিত। তবে টাকা কে দিয়েছিল, বাবন না পিন্টু, নাকি দু’জন মিলে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেখানেও দু’জনে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি: ঘটনার দিন, ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে আততায়ী বাবনের বাড়িতে এসেছিল। রাতে বাবনের কথা মতোই সে পিন্টুর থেকে মোটরবাইক নিয়ে চিকিৎসকের বাড়ির কাছে চলে আসে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের রাউন্ড সেরে গাড়িতে কার্তিককে নিয়েই কুমুদরঞ্জন যে ফিরবেন, তা তো সে জানতই। আগেই তাকে ওই বাড়ি, কুমুদরঞ্জন ও কার্তিককে চিনিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও পুলিশ প্রায় নিশ্চিত। এবং তা বাবনের মাধ্যমেই হয়েছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের।

পুলিশের খাতায় বাবন কার্যত দাগি। ওষুধের দালালি করলেও তার বিরুদ্ধে এর আগে ডাকাতি থেকে শুরু করে নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। ফলে জেরায় তাকে কথা বলানো যে শক্ত হবে, আন্দাজ করেছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সে যে এতখানি লেজে খেলাবে, তা সম্ভবত তাঁরা বুঝে উঠতে পারেননি। তাই পরে পিন্টুকেই বেশি চেপে ধরেছেন তাঁরা। পুলিশের দাবি: প্রথম দিকে পিন্টুও মুখ বন্ধ রেখেছিল। পরে কিছু-কিছু কথা ‘স্বীকার’ করে নিতে শুরু করেছে। তবে আততায়ীকে সে চিনত না, বাবনই তাকে ঠিক করেছিল বলে দাবি করেছে সে।

সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, আততায়ীর পরনে ছিল সবুজ হাফ-হাতা শার্ট বা টি-শার্ট, নীল জিনস, মাথায় লাল ফুল-হেলমেট। মুখ ঢাকা থাকলেও এলাকার দাগি অপরাধী হলে তাকে চিনে ফেলার কথা পুলিশ বা তার ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করা লোকেদের। কেউই যে তাকে চিনতে পারছে না, তাতে সে যে অন্য এলাকার লোক, তদন্তকারীদের তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কোন সেই এলাকা? কৃষ্ণনগরের বাইরে কোথায় বাবনের ‘নেটওয়ার্ক’ বেশি? পুলিশ অন্ধকারে।

সমস্যা হল, ১২ অক্টোবর শুক্রবার বাবন এবং পিন্টু দু’জনের পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাদের আদালতে হাজির করাতে হবে এবং পুলিশ চাইলেও বিচারক যে দু’জনকে ফের তাদের হেফাজতে পাঠাবেন, তাতে সন্দেহ নেই। এক বার তারা যদি জেল হেফাজতে চলে যায়, পুলিশ তাদের জেরা করার সহজ সুযোগ হারাবে। আততায়ী ধরা না পড়লে আদালতে বাকি দু’জনের অপরাধ প্রমাণ করাও সহজ হবে না।

প্রশ্ন হল, অপরাধীকে চিহ্নিত করার অন্যতম চালু যে উপায়, সেই বর্ণনা শুনে ছবি আঁকানোর চেষ্টা কিন্তু এখনও পর্যন্ত করেনি পুলিশ। কেন?

জেলার পুলিশ কর্তাদের দাবি, এখনও তার প্রয়োজন হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “প্রকৃত খুনিকে ধরতে যা যা প্রয়োজন, তার সবটাই করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব শিগগির ধরে ফেলতে পারব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CCTV Murder Crime Murderer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE