Advertisement
০২ মে ২০২৪

সরকারি কর্মী সম্মেলন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৃণমূলে

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবারেই পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের জনসভায় ফের জানিয়ে দিয়েছেন, দলবিরোধী কাজকর্ম বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ জেরে ভেস্তে যেতে বসেছে রাজ্য সরকারি কমর্চারিদের নিয়ে গঠিত তৃণমূলের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশন’-এর মুর্শিদাবাদ জেলা সম্মেলন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে ওই জেলা সম্মেলন হবে। সেই মতো ৫০ টাকার কুপন ছেপে সরকারি কর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ চলছে।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:২৩
Share: Save:

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবারেই পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের জনসভায় ফের জানিয়ে দিয়েছেন, দলবিরোধী কাজকর্ম বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ জেরে ভেস্তে যেতে বসেছে রাজ্য সরকারি কমর্চারিদের নিয়ে গঠিত তৃণমূলের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশন’-এর মুর্শিদাবাদ জেলা সম্মেলন।

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে ওই জেলা সম্মেলন হবে। সেই মতো ৫০ টাকার কুপন ছেপে সরকারি কর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ চলছে। এই অবস্থায় জেলা সম্মেলনের বিরোধিতায় সরব তৃণমূলের সরকারি কমর্চারি সংগঠনেরই একটি গোষ্ঠী। ওই সম্মেলন আয়োজনের বৈধতা’ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তারা।

তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের সদস্য নিলয় বাগচির অভিযোগ, “সংগঠনের রাজ্য স্তরে যখন কমিটি নেই, তখন জেলায় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সরকারি কর্মচারিদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাংগঠনিক ভাবে দলের ক্ষতি হবে। গোটা বিষয়টি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। ওই সম্মেলন বন্ধের দাবিও জানিয়েছি।” তিনি জানান, “পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের রাজ্য স্তরের কমিটি এখনও পর্যন্ত গঠন হয়নি। গত ২০১৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ওই সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তিন জন আহ্বায়ক দিব্যেন্দু রায়, সৌম্য বিশ্বাস এবং তপন গড়াই-সহ ৪১ জনের কোর কমিটি গঠিত হয়। সেই সময়ে সিদ্ধান্ত হয় আগামী ছ-মাসের মধ্যে ওই সংগঠনের সম্মেলন হবে। রাজ্য সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে রাজ্য ও জেলা কমিটিগুলি গঠিত হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্য ও জেলা কমিটিগুলি গঠিত হয়নি।”

এই অবস্থায় রাজ্য কোর কমিটির অনুমোদন ছাড়াই জেলা সম্মেলন করে নতুন জেলা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আয়োজক গোষ্ঠীর বিরোধিতায় দলের অপর গোষ্ঠী। সম্মেলনের আয়োজকদের অন্যতম মনোজ চক্রবর্তী নিজেকে তৃণমূলের এই সংগঠনের জেলা সভাপতি হিসেবে দাবি করে বলেন, “ওই জেলা সম্মেলন আয়োজনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের অনুমোদন রয়েছে।” মান্নানবাবু অসুস্থ। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মান্নানবাবু ফোনে কথা বলতে পারবেন না বলে পরিবারের তরফে জানানো হয়।

রাজ্য কোর কমিটির আহ্বায়ক দিব্যেন্দু রায় অবশ্য বলেন, “ওই জেলা সম্মেলন অবৈধ। কেননা, ওই সম্মেলনের বিষয়ে আহ্বায়ক পদে যে তিন জন রয়েছি, তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। এমনকী জেলা সম্মেলন আয়োজনের জন্য কোর-কমিটির অনুমোদনও নেননি তাঁরা। ফলে কোনও ভাবেই ওই সম্মেলন আয়োজন করা হতে পারে না।” দিব্যেন্দুবাবু জানান, “নতুন বছরের শুরুতে সরকারি কর্মচারিদের মধ্যে সদস্য পদ পূরণের ফর্ম বিলি হবে। ওই ফর্ম পূরণের পরে কনভেনশনের মধ্যে দিয়ে রাজ্য স্তরের কমিটি-সহ বিভিন্ন জেলা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই রাজ্য ও জেলা কমিটি গঠন নিয়ে অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রী তথা সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসব।”

মানোয়ার আলি দাবি করেন, তিনি ওই সংগঠনের জেলা শাখার সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠনের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। সম্মেলন যাতে বানচাল করে দেওয়া যায়, তার জন্য দলেরই বিভিন্ন গোষ্ঠী অতি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। আসলে তারা পদলোভী। ফলে সম্মলনের তারা বিরোধিতা করছে। তবে যে কোনও পরিস্থিতিতে ওই সম্মেলন সফল করব।” তাঁর কথায়, “২০১০ সালের ২৪ নভেম্বর বহরমপুর গ্রান্টহলে এক কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। ওই কনভেনশনে ৪১ জন সরকারি কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে থেকে মনোজবাবুকে সভাপতি এবং আমাকে সহ-সভাপতি বেছে নিয়ে ১৭ জনের কমিটি গঠিত হয়।” পরে ওই সংগঠনের মধ্যে বিভিন্ন উপদল তৈরি হয়। দাবি, এর মধ্যে গত ১৩ অগস্ট তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের পরামর্শে তৃণমূলের জেলা নেতা সুবোধ দাস ও সত্যেন চৌধুরী মধুপুরে দলীয় কার্যালয়ের দোতলায় ওই সংক্রান্ত ২৩ জনের কমিটি গড়ে দেন। ওই কমিটিতে মনোজ চক্রবর্তী-সহ পুরনো সদস্যদের পুনর্বহাল করা হয়। সেই সঙ্গে যাঁরা উপ-দল তৈরি করেছিলেন, তাঁদেরও নাম রয়েছে।

মানোয়ারবাবু বলেন, “ওই জেলা সম্মেলনে রাজ্যের কোর কমিটির শীর্ষে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা আসবেন। তাঁদের নিয়ে আসার দায়িত্ব নিয়েছেন মান্নান হোসেন। ওই সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে। ওই সম্মেলনে আগামী ২-৩ বছরের জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটিও তৈরি করা হবে।” তিনি জানান, “ওই সম্মেলন সফল করতে ৫০ টাকার কুপন ছাপা হয়েছে।”

নিলয়বাবু বলেন, “নিয়ম-নীতি না মেনে সম্মেলন আয়োজনের পাশাপাশি ওই চাঁদা সংগ্রহ করা নিয়েও সরকারি কর্মচারি মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আমি দলীয় শৃঙ্খলা মেনে সংগঠন করার পক্ষে। রাজ্য কনভেনশনের মধ্যে দিয়ে যেখানে কমিটি তৈরি হবে, সেখানে রাজ্য কনভেনশনের আগেই নিজেরা কী ভাবে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে! সেই সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সংগঠনের কোন পদে থাকতে পারবে না বলা হলেও দু’বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে মনোজবাবু সভাপতির মতো পদ দখল করে রয়েছেন কোন যুক্তিতে?” মনোজবাবু বলেন, “ওই জেলা সম্মেলনে সভাপতির পদ ত্যাগ করে নতুন প্রজন্মের হাতে ক্ষমতা তুলে দেব।”

সব মিলিয়ে সম্মেলন শুরুর আগেই জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের অন্দরের কাজিয়া!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE