অনড়: অনিলকুমার পাল। ছবি: প্রকাশ পাল
কম বয়সের বিয়েতে নানা মতলব, স্বার্থটার্থ থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু বুড়ো বয়সের বিয়ে নিকষিত হেম! ৮৮ বছরের পাণিপ্রার্থী অনিলকুমার পাল কৃষ্ণের ভক্ত। ফোকলা দাঁতে অমায়িক হাসেন, ‘‘রাধাকৃষ্ণের প্রেমের মতো বুড়ো বয়সের সম্পর্কেও কামগন্ধ নেই।’’
ছেলেরা বিয়েতে বাধা দিচ্ছে বলে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তার পর পুলিশ কিছু করছে না বলে নালিশ করে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। হাইকোর্ট অনিলবাবুর বিয়ের অধিকারে হস্তক্ষেপ না-করলেও বিয়ে না-করারই পরামর্শ দিয়েছে। অনিলবাবু কিন্তু বলছেন, ‘‘আমি ভীষণ একা। নিরুপায় হয়েই বিয়ের রাস্তায় হাঁটছি!’’
নিরুপায় কেন? স্ত্রী গত হয়েছেন দু’বছর হল। তিন ছেলে, তিন মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলের পরিবারকে নিয়ে জিরাটে নিজের বাড়িতে থাকেন। বউমার যত্নআত্তি নিয়ে অবশ্য অভিযোগ নেই। ‘‘কিন্তু ওরও তো বাপের বাড়ি যাওয়া থাকে! সংসারের কাজে বউমার একটা অ্যাসিস্ট্যান্ট চাই!’’ তাই হবু পাত্রীর খোঁজে ইদানীং হাওড়া থেকে আসানসোল যাতায়াত করছেন অনিলবাবু। এখনও চুঁচুড়া জাজেস কোর্টে নিত্য প্র্যাকটিস করেন। আসল বয়স ৮২-রও কম বলে দাবি করলেন। বললেন, তখনকার দিনে বাবারা স্কুলে ভর্তি করাতে যা খুশি বয়স বাড়াতেন!
মঙ্গলবার সকালে জিরাট স্টেশন রো়ডে ঢোকা ইস্তক অশীতিপর উকিলবাবুকে রীতিমতো ভিআইপি বলেই মালুম হল। হাইকোর্টে তাঁর মামলার কাহিনি মুখে মুখে ফিরছে। টিংটিঙে রোগা গেঞ্জি-লুঙ্গিধারী বৃদ্ধের ভ্রূক্ষেপ নেই। দোকানে টাকা মিটিয়ে ট্যাঁকে নগদ গুঁজতে গুঁজতেই পথচলতি মক্কেলের সঙ্গে কথা সারলেন। তার পর সাংবাদিককে মেপে নিয়ে বাড়িতে বসালেন।
ক্ষোভ ও অভিমানের সুরটা এর পরই ফুটে উঠল। লোকে তো বিয়েপাগলা বলছে, ছেলেপুলেরা ‘পাগলা-আশ্রমে’ রেখে আসার কথা ভাবছে! অনিলবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আমি কোর্টে কেস লড়ি এখনও! আমায় কি আপনাদের পাগল মনে হচ্ছে?’’ বেছেবুছে ষাটোর্ধ্ব পাত্রীই তাঁর নিশানা। ‘‘তবে সম্পর্ক তৈরি হওয়া না অবধি আমি কারও বাড়িতে ঢুকিনি। স্টেশনেই দেখা করেছি।’’ এবং অনিলবাবুর দাবি, তিনি সকলকেই খোলসা করে বলে দিচ্ছেন, ‘‘এই বয়সের বিয়েতে শরীরের ব্যাপারটা ১% থাকে কি না সন্দেহ! তোমরা সেটা বুঝেই এসো। কেউ কেউ রাজিও হচ্ছেন!’’
আরও পড়ুন:দাপট কমলেও বর্ষণ চলবে এখানে-ওখানে
নতুন সংসারের কাছে চাহিদা সামান্যই অনিলবাবুর। কাকভোরে উঠে তিনি ঠাকুরের ফুল তোলেন, নতুন বউ যদি তখন পারিবারিক মন্দিরটা সাফসুতরো করে রাখেন! এই আর কী! বুড়ো বয়সে সাহচর্যের এই প্রয়োজনটার গুরুত্ব স্বীকার করছেন বার্ধক্যবিজ্ঞান বিশারদ ইন্দ্রাণী চক্রবর্তীও। এমন বিয়ে এ দেশে হচ্ছেও ইদানীং। কোনও কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও উদ্যোগী হচ্ছে। সিনেমার পর্দায় বয়স্ক প্রেমের কাহিনি মাঝে মাঝেই জায়গা করে নিচ্ছে।
তা হলে অনিলবাবু কী দোষ করলেন? বৃদ্ধের অভিমান, ‘‘পুলিশ বা কোর্ট কেউ আমার কষ্ট বুঝছে না। জীবনে শান্তি পেলে বিয়ের কথা ভাবতামই না আমি!’’
সংসারে শান্তির অভাব আছে? পুত্র প্রশ্ন করেন, ‘‘কী করলে শান্তি পাবে তুমি?’’ গলার স্বর চড়ে অনিলবাবুর। ছেলেকে বলেন, ‘‘চুপ করো! এ বাড়িতে থেকে এ ভাবে কথা চলবে না আমার সঙ্গে।’’ কিছু ধারদেনা মেটানোর ব্যাপারে বাবা ও সন্তানদের মধ্যে খিটিমিটি আছে বলে অভিযোগ। অনিলবাবুর পুত্র অপূর্বর দাবি, ‘‘বাবা আমাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিয়ে বিয়ের মতলব ভেঁজেছেন। মারধর করি বলে মিথ্যে অভিযোগ করেছেন।’’
এই টানাপড়েনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সানাই বাজবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy