এ ভাবেই পাড়ে ভেঙে এগিয়ে আসছে তোর্সা। কোচবিহার পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
কয়েক বছর আগেও জনবসতি এলাকা ও তোর্সা নদীর মধ্যে দূরত্ব ছিল প্রায় একশো ফুট। নদীর গতিপথ ক্রমশ পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বমুখী হওয়ায় সেই দূরত্ব ইতিমধ্যে কমেছে অর্ধেকের বেশি। তারপরেও অবশ্য নদী প্রতিদিনই একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। ফলে ভরা বর্ষায় নদী ফুঁসে উঠলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কায় রাতের ঘুম চলে গিয়েছে কোচবিহার পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের চর এলাকার বাসিন্দাদের।
এই পরিস্থিতিতে দ্রুত পাথর বা বাঁশের খাঁচা, তারজালি বসিয়ে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরুর দাবি তুলেছেন তারা। সেচ দফতরের কোচবিহারের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র স্বপন সাহা বলেন, “চর এলাকায় ভাঙন রোধের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা রয়েছে। তবু জনস্বার্থে গত বছর ওই এলাকায় বাঁশের খাঁচা বসানোর মতো কাজ হয়েছিল। এবারেও ভাঙন ঠেকাতে ওই এলাকায় অস্থায়ীভাবে কিছু কাজ করা যায় কিনা সে ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কোচবিহার পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার সীমানা ঘেঁষে তোর্সার মূল প্রবাহ বয়ে গিয়েছে। নদীর প্রবাহপথ ও শহর রক্ষায় তৈরি বাঁধের মাঝে বিস্তীর্ণ চর এলাকায় কয়েকশো পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি তৈরি করে রয়েছেন। নদীর ভাঙনের জেরে ইতিমধ্যে সেখানকার প্রচুর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বেশ কিছু পরিবারও বাড়িঘর ভেঙে নিতে বাধ্য হয়েছেন । ভাঙনের জেরে পাটাকুড়া, চর, ফাঁসিরঘাট ও লাগোয়া ওই এলাকা ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ফলে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন শহরের ১৮ নম্বর ছাড়াও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশও। গত বছর ভাঙন ঠেকাতে বসানো বেশিরভাগ বাঁশের খাঁচাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, “পুরো বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। সেচ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে ওই সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে কথা বলব।”
তারপরেও অবশ্য বাসিন্দাদের অনেকেরই উদ্বেগ কাটছে না। চর এলাকার বাসিন্দা আবদার আলি বলেন, “ পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে আমাদের এলাকা পড়েছে। নদী যেভাবে ভাঙতে শুরু করে গতিপথ বদলে এগোচ্ছে তাতে দ্রুত কাজ না হলে বসতবাড়িটাই হয়ত আর থাকবে না।” মোক্তার মিঁয়া, প্রহ্লাদ দাসরা বলেন, “নদীর ভাঙনে জেরে এলাকার অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে চলে গিয়েছেন। আমাদের মত অনেকের সে সাধ্য নেই। বর্ষায় নদী ফুঁসে উঠলে পরিবার নিয়ে কি করব সেটা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিনা।” কোচবিহার পুরসভার আওতাধীন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর পার্থপ্রতিম সেনগুপ্তও বলেন, “ভাঙন ঠেকাতে এলাকায় দ্রুত বাঁধ করা দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy