মনিরুল ইসলাম। করণদিঘিতে। নিজস্ব চিত্র।
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গিদের গুলিতে জখম হয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির পরিযায়ী শ্রমিক মনিরুল ইসলাম। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওই ঘটনায় পরে তিনি বাড়ি ফিরলেও মেলেনি সরকারি কোনও সহায়তা। মেলেনি চিকিৎসার জন্য অর্থ। মেলেনি কাজ। কিস্তিতে কেনা টোটো চালিয়ে সংসার টানছেন মনিরুল।
জেলার মধ্যে শিক্ষা ও আর্থিক দিক পিছিয়ে পড়া করণদিঘি ব্লকের একটি গ্রাম দিঘলগাঁও। গ্রামে যেতে হয় মেঠো-পথ ধরে। কারও বাড়ি বেড়ার। কারও টিনের চালা। ঘরের কাছে কাজকর্ম নেই। বেশির ভাগ যুবক ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। এই গ্রামের ১৫ জন যুবক কাশ্মীরে একটি আপেল বাগানে কাজ করেন। ওই দলে ছিলেন মনিরুলও। মনিরুলের পরিবারে মা, স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বাড়িতে নিত্য অভাব। তাই গ্রামের হাবিবুর, জামিলদের সঙ্গে তিনিও বাড়তি রোজগারের আশায় কাশ্মীরে পাড়ি দিয়েছিলেন। দু’বেলা খাবার আর দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি। মনিরুলের কথায়, ‘‘ভালই ছিলাম। মাঝে মধ্যে সামান্য গোলমাল হত। কিন্তু যা সে দিন যা ঘটল, তা কখনও ভাবিনি। মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছি।’’ মনিরুল জঙ্গিদের গুলিতে জখম হওয়ার পরে, সেখানে কিছু দিন চিকিৎসার পরে, তাঁকে ঘরে ফেরানো হয়। বাড়ি ফিরে চিকিৎসার পরে সুস্থ হলেও ভারী কাজ করা নিষেধ করেছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু আতঙ্ক এখনও তাড়া করছে মনিরুলকে।
মনিরুল বলেন, ‘‘বাড়ি ফেরার পরেও স্থানীয় বিধায়ক গৌতম পাল বাড়ি এসে খোঁজ নিয়েছিলেন। চিকিৎসার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আশ্বাসই থেকে গিয়েছে। পা থেকে গুলি বার করা হলেও, পুরোপুরি সুস্থ হইনি। এলাকায় কাজ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত তা-ও মেলেনি। কিছু দিন হল টোটো কিস্তিতে নিয়ে চালাচ্ছি।’’
ব্লক প্রশাসনের এক সূত্র জানাচ্ছে, করোনা আবহে লকডাউনে ফেরত পরিযায়ীদের ১০০ দিনের কাজে যুক্ত করা হয়েছিল। মনিরুলকে কাজ দেওয়ার বিষয়ে ভাবাও হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের দু’বছর ধরে বন্ধ। ফলে, মনিরুলকে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিধায়ক গৌতম বলেন, "গুলিবিদ্ধ মনিরুল কাশ্মীর থেকে ফেরার পরে চিকিৎসার জন্য উদ্যোগী হয়েছিলাম। পুলিশ-প্রশাসনও সে সময় সহযোগিতা করেছিল। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বন্ধ থাকায় ওঁকে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি।’’
প্রশ্ন হচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ গঠন করেছে রাজ্য সরকার। অভিযোগ, পর্ষদ থেকেও খোঁজ নেওয়া হয়নি। পর্ষদ চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, "বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করব। ওই শ্রমিকের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করার বিষয়ে উদ্যোগী হব।" একই আশ্বাস দেন মহকুমাশাসক (ইসলামপুর) আবদুল শাহিদ।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy