Advertisement
১৬ মে ২০২৪
তাইকেন্ডো প্রতিযোগিতায় নালিশ

মাঝরাতে বার করে দেওয়া হল খুদেদের

তাইকেন্ডো খেলতে এসে মাঝরাতে ঘর থেকে রাস্তায় বের করে দেওয়া হল চার খুদে প্রতিযোগীকে। এদের কারও বয়স দশ-এগারো। কেউ আর একটু বড়। জলপাইগুড়িতে রাজ্য তাইকোন্ড প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আসা প্রতিযোগীদের কাছ থেকে শনিবার এমন অভিযোগই উঠল।

চলছে তাইকেন্ডো প্রতিযোগিতা।ছবি:রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

চলছে তাইকেন্ডো প্রতিযোগিতা।ছবি:রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৬
Share: Save:

তাইকেন্ডো খেলতে এসে মাঝরাতে ঘর থেকে রাস্তায় বের করে দেওয়া হল চার খুদে প্রতিযোগীকে। এদের কারও বয়স দশ-এগারো। কেউ আর একটু বড়। জলপাইগুড়িতে রাজ্য তাইকোন্ড প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে আসা প্রতিযোগীদের কাছ থেকে শনিবার এমন অভিযোগই উঠল। খবর পেয়ে মাঝরাতেই কোনও মতে স্টেডিয়ামে ছুটে এসে ওই প্রতিযোগীদের হোটেলে নিয়ে যান তাদের অভিভাবকেরা৷ এ দিন দুপুরে বিষয়টি নিয়ে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন এক অভিভাবক৷

স্বাভাবিক ভাবেই গোটা ঘটনাকে ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রতিযোগীদের অভিভাবকেরা৷ সকাল থেকে উদ্যোক্তাদের ঘিরে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা৷ যদিও ঘটনাটি নিয়ে মুখে কুলুপ এটেছেন জলপাইগুড়িতে আসা বেঙ্গল তাইকোন্ড অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা৷ এমনকী এই প্রতিযোগিতার আয়োজক জলপাইগুড়ি জেলা তাইকোন্ড অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা গোটা পরিস্থিতির জন্য ক্ষুদে প্রতিযোগীদেরই দায়ী করেছেন৷

জলপাইগুড়ি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে রাজ্য তাইকোন্ড প্রতিযোগিতা৷ গোটা রাজ্য থেকে প্রায় পাঁচশো ছেলে-মেয়ে যোগ দিয়েছে৷ তাদের স্পোর্টস কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ঘর ছাড়াও কয়েকটি স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা৷ যে চার প্রতিযোগীকে মাঝরাতে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ, তারা ওই রাতে ইন্ডোর স্টেডিয়ামের ওপরে একটি ঘরে ছিল৷

জলপাইগুড়ি জেলা তাইকোন্ড অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপ চন্দ বলেন, “আমরা মূল স্টেডিয়াম ও কয়েকটি স্কুলে প্রতিযোগীদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলাম৷ কিন্তু ওই চার প্রতিযোগী ইন্ডোর স্টেডিয়ামের একটি ঘরে ঢুকে পড়েছিল৷ যেখানে প্রতিযোগীদের থাকার নিয়মই নেই৷ সে জন্যই সন্ধে থেকে ওদের ঘর ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল৷ কিন্তু তা না করায় রতের বেলায় কেউ হয়তো তাদের বের করে দেয়৷ তবে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা ওদের বের করেনি৷”

ওই চার প্রতিযোগীর এক জন বিধি শর্মা। তার বাবা আনন্দবাবু জানান, রাতে মেয়ে তার ঘরে চলে যাওয়ার পর তাঁরা জলপাইগুড়ি শহরের একটি হোটেলে চলে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎই রাত পৌনে একটার সময় মেয়ের ফোন পেয়ে ঘাবড়ে যাই৷ ও পাশ থেকে মেয়ে জানায় তাদের ঘর থেকে ব্যাগ-পত্র সহ বের করে দেওয়া হয়েছে৷ স্টেডিয়াম চত্বরের ভেতরেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা৷ কোনও মতে একটা টোটো জোগাড় করে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাই স্টেডিয়ামে৷ তার পর মেয়েকে নিয়ে হোটেলে চলে ফিরি৷”

এগারো বছরের বিধির কথায়, “রাতে আমরা ঘরেই ঘুমোচ্ছিলাম৷ আচমকাই কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবক দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করে৷ দরজা খুলতেই তারা ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নির্দেশ দেয়৷ ব্যাগটাও ভাল করে গোছানোর সময় দেয়নি তারা৷” দশ বছর বয়সের আর এক প্রতিযোগী সৃষ্টি ডি রোজারিওর কথায়, “এত রাতে ওরা যখন ঘর থেকে বের করে দেয়, তখন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷ তার পর বাবা এসে হোটেলে নিয়ে যায়৷”

প্রদীপববুর কথায়, “এত রাতে চারটে মেয়েকে ঘর থেকে বের করা আমরা কখনওই সমর্থন করি না৷ কিন্তু সন্ধে থেকেই ওরা যদি আমাদের কথা শুনত তা হলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না৷” ওই ঘর থেকে বের করে দেওয়া হলেও তাদের কাছের একটি স্কুলে রাতেই নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল বলে দাবি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের৷ এ দিকে বিষয়টি নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন জলপাইগুড়িতে আসা রাজ্য তাইকোন্ড অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা৷

গোটা ঘটনাটি নিয়ে এ দিন দুপুরে অভিভাবক আনন্দ শর্মার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mismanagement Taikendo competition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE