জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিটি। —নিজস্ব চিত্র।
ভুট্টার লোভে কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশের পথে হাঁটা দেওয়া দু’টি হাতিকে বাগে আনতে গিয়ে শুক্রবার কালঘাম ছুটেছিল বন দফতরের। হাতির তাণ্ডবে শনিবারেও নিস্তার মিলল না বনকর্মীদের! ভোরের দিকে শিলিগু়ড়ির লোকালয়ে ঢুকে পড়ে একটি হাতি। ভোলা মোড়, এনজেপি-সহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় তাকে। যা নিয়ে আবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহরে। পরিস্থিতি এমন যে, ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে শিলিগুড়ির কয়েকটি জায়গায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ভোরের দিকে আমবাড়ি বাইপাসের রাস্তা ধরে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে হাতিটি। এলাকাটি জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বন দফতর। তারা হাতিটিকে এনজেপি সংলগ্ন টিপার্ক এবং ফোর্থ ব্যাটেলিয়নের মাঝে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। সেখানেও বিপাকে পড়ে বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগ। হাতিটি রেলওয়ে প্রোটেকশন স্পেশাল ফোর্সের আবাসনে ঢুকে পড়ে। তাকে কী ভাবে সেখান থেকে বার করা হবে, তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বন বিভাগের কর্মীরা। কারণ, চারদিকেই ঘরদোর। সামান্য ভুলচুক হলে হাতিটি আবার শহরতলিতে ঢুকে পড়তে পারে। তখন সেটিকে বার করা আরও মুশকিল হবে। বন দফতর সূত্রে খবর, রাত পর্যন্ত হাতিটি যাতে জঙ্গলেই থাকে, আবার লোকালয়ে ঢুকে না পড়ে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। রাতে সেটিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া ব্যবস্থা করা হতে পারে। তখন যাতে ভিড়ের কারণে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা মাথায় রেখে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলের আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যে দু’টি হাতি বাংলাদেশ সীমান্তে বার বার ঢুকে পড়ছিল, এই হাতিটিও তাদেরই দলের সদস্য। কোনও প্রকারে দলছুট হয়ে গিয়েছে। নিজের দলকে খুঁজতে খুঁজতেই সে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। ঘটনাস্থলে রয়েছেন সিসিএফ ওয়াইল্ড লাইফ শ্যাম মোলে। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত আমরা রুট দেখছি, হাতিটিকে কোন দিক দিয়ে বার করা যায়। তাকে ট্রাঙ্কুলাইজ (অজ্ঞান) করা হবে কি না, এখনই সে ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’
গত কয়েক দিন ধরেই হাতির তাণ্ডব চলছে শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের পথে রওনা দিয়েছিল দু’টি হাতি। তাদের একটি মাকনা ও অন্যটি দাঁতাল। বন দফতর সূত্রে খবর, মূলত ভুট্টার লোভেই কাঁটাতার পেরিয়েছিল হাতি দু’টি। তাদের ফেরাতে কালঘাম ছুটেছিল বিএসএফ (সীমান্ত রক্ষী বাহিনী) ও রাজ্য বন বিভাগ এবং বাংলাদেশের সীমান্ত পুলিশ ও সে দেশের বন বিভাগের। শেষমেশ গরুমারা থেকে দু’টি কুনকি হাতি আনা হয়। তাদের তৎপরতায় কাঁটাতার পেরোনো হাতি দু’টির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে ঘুমপাড়ানি গুলি দিয়ে তাদের কাবু করা হয়। শনিবার শিলিগুড়ির লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিটিও ওই দু’টির সঙ্গেই ছিল বলে মনে করছেন বন দফতরের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy