ভরা তোর্সার জলে চোখের পলকে একের পর এক শুশুক ভেসে উঠছে। দৃশ্যটা এখনও ভুলতে পারেন না কোচবিহারের প্রবীণ বাসিন্দা নৃপেন পাল।
শুশুক দেখার টানে মাঝেমধ্যে নদীর পাড়ে যাওয়ার তাগিদ আজও মনে আছে আরেক প্রবীণ হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের। নদী আছে, তবে সেই নদীতে শুশুকের দেখা না পেয়ে মন খারাপ কোচবিহারের।
শুশুকের দেখা না মেলায় উদ্বেগ বেড়েছে পরিবেশপ্রেমীদের মধ্যেও। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর নদীর প্রবাহ পথের ১০টি এলাকায় নজরদারি চালানোর ও সমীক্ষার পরিকল্পনা করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা, মাঝি, জেলেদের সঙ্গে কথা বলে বাস্তব চিত্র পেতে চাইছেন তারা। পরিবেশপ্রেমীদের বক্তব্য, নদী দূষণের পাশাপাশি মাংস, তেলের লোভে শিকারের জেরেই শুশুক কমেছে তোর্সায়।
বাসিন্দারা জানান, তোর্সার প্রবাহ পথ ঘেষেই কোচবিহার শহর গড়ে উঠেছে। একসময়কার ‘রাজার শহর’ রক্ষায় নদী ও শহরের মাঝে ব্যবধান বলতে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকা বাঁধ। বর্ষায় শুধু নয়, গরমের মরসুমেও নদীর অবস্থা ছিল অনেক ভয়ঙ্কর। খাতের গভীরতাও ছিল বেশি। এখনকার মতো দূষণের অভিযোগ ছিল না। নৃপেনবাবু বলেন, “ষাটের দশকে তোর্সায় প্রচুর শুশুক দেখেছি।” হীরেনবাবুর কথায়, “বিকেল হলে কতদিন শুশুকের টানেই ছুটে গিয়েছি।” সেই তোর্সায় শুশুক না দেখতে পেয়ে হতাশ দু’জনেই।
ওই পরিবেশপ্রেমী সংস্থার কর্তারা বলছেন, গত অক্টোবর মাসে সংস্থার তরফে ওই প্রাণীদের খোঁজে নদীর কিছু অংশে নৌকা নিয়ে টানা নজরদারি চালানো হয়। একমাত্র বালাভূতেই হাতেগোনা কয়েকটি শুশুকের দেখা মিলেছে। ফলে তোর্সায় শুশুকের উপস্থিতি কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। তাই বড় এলাকা জুড়ে নজরদারি, সমীক্ষার উদ্যোগ। সংস্থা সূত্রেই জানা গিয়েছে, জয়গাঁ, হাসিমারা, সাঁতালি, পুন্ডিবাড়ি, পাটাকুড়া, বলরামপুর, বালাভূত ও লাগোয়া কিছু এলাকা মোট ১০টি এলাকায় দু’দিন করে একটি অংশে বোট বা নৌকায় চেপে নজরদারি চালানো হবে বলেও ঠিক হয়েছে। শুশুকের অস্তিত্ব বোঝা গেলে সেই ছবি ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টাও হবে। ওই সংস্থা, ন্যাসগ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “ছোটবেলায় একটা সময় ছিল যখন তোর্সার শুশুক দেখে ভয় লাগত। আকৃতি ছিল বিশাল। চোখের পলকে ভেসে উঠে মিলিয়ে যেত জলে। নৌকার মাঝিরাও বলতেন মারাত্মক জোর ওই জলজ প্রাণীর। নৌকা উলটে দিতে পারে। এখন সেভাবে দেখাই যায় না। তাই মে’র আগেই পুরো বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষা করে একটা চিত্র পেতে চাইছি।” ওই সমীক্ষা রিপোর্ট বন দফতর-সহ বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়ে সংরক্ষণের আর্জি জানানোর ভাবনাও রয়েছে।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, তোর্সার ওই সম্পদ রক্ষা থেকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ নেই। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন অবশ্য বলেন, “আমরাও চেষ্টা করছি।” কোচবিহারের ডিএফও বিমান বিশ্বাস জানিয়েছেন, সমীক্ষার রিপোর্ট তাদের দেওয়া হলে কী পদক্ষেপ করা যায় তা ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy