Advertisement
০৮ মে ২০২৪

দু’দশকে সবুজ হারিয়েছে শহর

তখন ইংরেজ শাসন। গাছপালায় ভর্তি ছিল মিলিকের বাগান। এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফাত কাঠবিড়ালি। দেখা মিলত পাখির ঝাঁকের। শোনা যায়, ওই বাগানে নাকি চিতাবাঘের অলস পায়চারিও চোখে পড়ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই মিলিকের বাগানেই তৈরি হয় রায়গঞ্জ মহকুমা হাসপাতাল। কাটা পড়তে থাকে গাছপালা। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় সাবেক পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে তৈরি হয় দু’টি জেলা। রায়গঞ্জ মহকুমা হাসপাতাল উন্নীত হয় উত্তর দিনাজপুর জেলা হাসপাতালে।

হাসপাতাল চত্বরে কাটা পড়েছে গাছ। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতাল চত্বরে কাটা পড়েছে গাছ। নিজস্ব চিত্র।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১০
Share: Save:

তখন ইংরেজ শাসন। গাছপালায় ভর্তি ছিল মিলিকের বাগান। এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফাত কাঠবিড়ালি। দেখা মিলত পাখির ঝাঁকের। শোনা যায়, ওই বাগানে নাকি চিতাবাঘের অলস পায়চারিও চোখে পড়ত।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই মিলিকের বাগানেই তৈরি হয় রায়গঞ্জ মহকুমা হাসপাতাল। কাটা পড়তে থাকে গাছপালা। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় সাবেক পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে তৈরি হয় দু’টি জেলা। রায়গঞ্জ মহকুমা হাসপাতাল উন্নীত হয় উত্তর দিনাজপুর জেলা হাসপাতালে। তার পর থেকেই নতুন ভবন তৈরি, নতুন পরিকাঠামো গড়তে ফের কোপ পড়ে গাছের উপর। গত তিন দশকে মিলিকের বাগানে আম, জাম, লিচু, বট মিলিয়ে অন্তত ৬০টিরও বেশি গাছ কাটা হয়েছে। গাছের সঙ্গেই হারিয়ে গিয়েছে চিতাবাঘের ডেরা, কাঠবিড়ালি। হারিয়েছে সন্ধেবেলা পাখির ঝাঁকের ঘরে ফেরার ছবিও।

শুধু বাগান নয়, পরিবেশপ্রেমীদের আক্ষেপ, পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলে জাতীয় সড়ক থেকে গলির রাস্তার দু’পাশ থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হয়েছে। রায়গঞ্জ জেলা আদালত চত্বর, মোহনবাটি, স্টেশন লাগোয়া এলাকায় অন্তত শতাধিক বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কোথাও গড়ে উঠেছে বহুতল, কোথাও বা রাস্তা চওড়া হয়েছে।

দু’দশক আগে রাস্তা চওড়া করার জন্য রায়গঞ্জের মোহনবাটি এলাকায় তিনটি শতাব্দীপ্রাচীন আমগাছ কাটা হয়। রায়গঞ্জ জেলা আদালত চত্বরে থাকা সাতটি গাছ কাটা হয়। এছাড়াও বিবিডি মোড়, সুদর্শনপুর, উকিলপাড়া, দেবীনগর, বন্দর-সহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটা হয়েছে। মোহনবাটি এলাকায় বইয়ের দোকান রয়েছে রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ীর। তিনি বলেন, “গরমে পথচারীরা গাছের নীচে বসে বিশ্রাম করতেন। এখন কংক্রিটের ভিড় ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না।”

গাছ কাটার প্রভাব পড়েছে পরিবেশেও। প্রবীণ পরিবেশবিদ অরূপ মিত্রের কথায়, “অবাধে গাছ কাটা চলতে থাকায় রায়গঞ্জের আবহওয়া অনেকটাই বদলে গিয়েছে। শীত, গ্রীষ্ণে তাপমাত্রার স্বাভাবিক ওঠা-নামা বিঘ্নিত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমেছে।” অথচ পরিবেশবিধি অনুযায়ী, কোনও এলাকায় গাছ কাটলে ওই এলাকাতেই অন্তত তিনটি গাছ লাগানোর কথা। এই বিধি-ই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলত ক্রমাগত বিঘ্নিত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

শুধু মিলিক নয়, বাদ যাচ্ছে না কুলিক পক্ষীনিবাসও। পরিযায়ী পাখিরা ফি বছর কুলিকে ভিড় জমায়। বসে প্রকৃতিপাঠের আসর। কিন্তু সেই কুলিকেই এ বার শুরু হয়েছে ‘দুষ্কৃতী হানা’। রাতের অন্ধকারে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। প্রতিদিনই নজরদারি এড়িয়ে গাছের ডালপালা কাটা হচ্ছে। উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমীরা। তবে কি কুলিকও আর নিরাপদ নয়? কী বলছেন কর্তারা?

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amar shohor raiganj gour acharya greenary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE