পাহাড়ের তিন বিধানসভায় দলের ফল ‘ভাল’ হলেও, সমতলের ফলাফল নিয়ে দলের অন্দরে আলোচনা হচ্ছে বলে জানালেন তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া। হারের পরে শনিবার দার্জিলিঙে ফিরে এ কথা জানান তিনি। দার্জিলিং আসনে মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার কাছে প্রায় ২ লক্ষ ভোটে পরাজিত হন ভাইচুং। গত ১৬ মে ফল প্রকাশের দিন শিলিগুড়িতেই ছিলেন তিনি। হারের পরে দলের কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে এ দিন পাহাড়ে পৌঁছন প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ভাইচুং।
দার্জিলিঙের গোর্খা দুখ নিবারক সমিতি হলে তৃণমূলের দার্জিলিং কমিটির নেতা এবং সমর্থকদের সামনে ভাইচুং বলেন, “পাহাড়ে আমরা গতবারের থেকে ৯১ হাজার ভোট বেশি পেয়েছি। এই ফল যথেষ্ট ভাল। সে কারণে বাসিন্দাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছি। দলের কর্মী সমর্থকদের মতোই জিএনএলএফের সিপ্রিমো সুবাস ঘিসিঙ্গ এবং কর্মী সমর্থকদেরও কৃতজ্ঞতা জানাই। ভোটের ফলাফল চিরস্থায়ী নয়, পাহাড়ে কাজ চালিয়ে যাব।”
গত লোকসভা ভোটের নিরিখে দার্জিলিং আসনের সমতল বিধানসভাগুলিতে দলের পিছিয়ে থাকা প্রসঙ্গও এ দিন ওঠে। শিলিগুড়ি সহ মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা আসনে পিছিয়ে থাকার কারণ নিয়ে ভাইচুঙের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “দলে আলোচনা চলছে, সেই মতো কাজ করা হবে। দুর্বলতা খুঁজে বার করতে হবে। মানুষকে পাশে নিয়ে ব্লক স্তর থেকে সংগঠন মজুত করতে হবে। এই আসনের সামগ্রিক ফল নিয়েই আলোচনা করে পদক্ষেপ হবে। তবে সমতল এবং পাহাড় দু’ এলাকাতেই সংগঠন মজবুত করার কাজ শুরু করতে হবে। আমি ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরু করেছি।’’
দার্জিলিং লোকসভা আসনের সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে একমাত্র চোপড়া বিধানসভাতেই তৃণমূল প্রার্থী শীর্ষে ছিল। বাকি ৬টি বিধানসভাতেই বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া এগিয়ে ছিলেন। এমনকী গত বিধানসভা ভোটে শিলিগুড়িতে তৃণমূল প্রার্থী ৪৮ শতাংশ ভোট পেলেও, এ বারের লোকসভা ভোটের নিরিখে শিলিগুড়িতে তৃণমূল প্রার্থীর ভোটের শতাংশ কমে হয়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। গত বিধানসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকায় তৃণমূল প্রার্থীর বাক্সে কংগ্রেসের ভোট পড়েছিল। সে যুক্তিতেই তৃণমূলের দাবি, গত বিধানসভা ভোটের সঙ্গে এ বারে লোকসভায় একা লড়া তৃণমূলের ভোটের শতাংশের হিসেব মেলালে সঠিক তথ্য মিলবে না। কিন্তু, গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এবারের লোকসভায় দলের ভোট বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ। বিজেপির দাবি, শুধুমাত্র বাম বা কংগ্রেসের ভোট নয়, তৃণমূলের ভোটও এবার তাদের দলের প্রার্থী পেয়েছেন। দলের এক নেতার কথায়, “ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে গত বিধানসভার তুলনায় বামেরা এবার শিলিগুড়িতে ২৫ শতাংশ ভোট কম পেয়েছে। আর আমরা পেয়েছি ৩২ শতাংশ বেশি ভোট। বাকিটা তৃণমূল আর কংগ্রেসের বাক্স থেকেই এসেছে।”
এ দিন পাহাড়ে ভাইচুঙের সংগঠন মজবুত করা প্রসঙ্গে মোর্চার সহ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “এ বারের ভোটে দার্জিলিঙে তৃণমূলের বিপর্যয় হয়েছে। শুধু পাহাড়ে নয় সমতলের বাসিন্দারাও তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তা প্রমাণ হয়েছে। সমতলের এই তৃণমূল বিরোধী হাওয়ার মুখে ওরা কিছুই করতে পারবে না।” একই ভাবে সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী বলেন, “গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিরোধিতা করে পাহাড়ে তৃণমূল সমর্থন হারিয়েছে। আর সমতলের বাসিন্দারাও তৃণমূলের আচরণ দেখে ওদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে। তাই ওদের অন্তত দার্জিলিঙে আর কোথাও ঠাই হবে না।”
এ দিন সভার পরে পাকাপাকি ভাবে রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে ভাইচুং বলেন, “মানুষের কাজ করতে চাই। সে কারণেই দলের হয়ে কাজ করতে চাই। ফুটবল আমার পেশা। তবে আমি মানুষ এবং দলের জন্য কাজ করতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy