এক কাপ কফি আর আড্ডা! শহরের কফির এই ঠিকানাগুলিতে ঢুঁ মেরেছেন কখনও?

শেষ কিছু বছরে শহর কলকাতার ছবিটা আমূল বদলে গেছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ জুড়ে দিন প্রতিদিন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে  নিত্য নতুন ক্যাফে। তাদের নামের কি  সব বাহার! থিমেও থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:১৬
Share:

এক কাপ কফিতে চুমুক সঙ্গে কিছু টুকিটাকি স্ন্যাক্স আর ঘন্টার পর ঘন্টা জমজমাটি আড্ডা। আপনার আড্ডায় ব্যাঘাত ঘটাতে আসবে কেউই ! কতকাতাবাসীর কাছে কফি হাউজের আড্ডা যেন এক অন্য নস্টালজিয়া। তবে ওই টুকুই। অন্যান্য পুরোনো কফিখানার আড্ডার ছবিটা আজ যেন কেমন নিষ্প্রভ। পাড়ার রোয়াকে বসে আড্ডা যেন আজ অতীত। নতুন প্রজন্মের কাছে নয়া ক্যাফেগুলির ঠান্ডা ঘরের মেজাজ সঙ্গে ফ্রি ওয়াইফাই আর যতক্ষণ খুশী আড্ডা দেওয়ার দেদার স্বাধীনতা, পুরোনো কফিখানাগুলির তুলনায় অনেক বেশি শ্রেয়। পকেট থেকে একটু বেশি খসলেই বা ক্ষতি কী? কফির স্বাদ আর পরিবেশটাও তো দেখতে হবে বইকী! শুধু কী তাই নয়া ক্যাফেগুলিতে রয়েছে হরেক রকম থিমের ছোঁয়া-ক্যাফেগুলির সপক্ষে এমনই হাজারটা যুক্তি সাজিয়ে দিতে পারে আজকের প্রজন্ম আপনার সামনে।

Advertisement

শেষ কিছু বছরে শহর কলকাতার ছবিটা আমূল বদলে গেছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ জুড়ে দিন প্রতিদিন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে নিত্য নতুন ক্যাফে। তাদের নামের কি সব বাহার! থিমেও থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া। এ সব ছোট ছোট কফিখানাগুলির পাশাপাশি শদর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ক্যাফে কফি ডে, স্টারবাকস, বারিস্তার মত কফি চেনগুলির রমরমাও নেহাত কম না। এক পেয়ালা কফি আর সামান্য কিছু স্ন্যাক্স নিলেই এ সব ক্যাফেতে আপনার পকেট থেকে খসে যাবে কড়কড়ে পাঁচশো টাকার নোট। এই ধরনের ক্যাফের যে কোনও একটিতে পা রাখলেই বোঝা যাবে এই ক্যাফেগুলিতে আড্ডাধারী তরুণ-তরুণীরা রোজ নিয়ম করে যান না।বরং বহুজাতিক সংস্থাগুলির কফি চেনগুলিকে কর্পোরেট মিটিং, বিজনেস টক করার ঠেক বলা যেতেই পারে।

শহরে ছোট বড় ক্যাফেগুলি গড়ে ওঠার কারণ হিসাবে কফি হাউজের সেই নস্টালজিয়া আর বহুজাতিক ক্যাফে গুলির বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তাকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় ন। দেখা যাচ্ছে এই ছোট ক্যাফেগুলি চালাচ্ছেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তরুণ-তরুণীরা।চাকরি খোঁজার পিছনে না ছুটে এই ক্যাফে ব্যাবসার পথকেই বেছে নিয়েছে তারা। বুদ্ধি খাটিয়ে বের করছে নয়া সব বিপণন কৌশল। কেউ নিজের ক্যফেকে নিছক আড্ডার স্পেস হিসেবেই প্রচার করছেন, কেউ আবার নিজের ক্যাফের অন্দরসজ্জায় রেখেছেন ‘আন্তর্জাতিক টাচ্’ খাবারেও রেখেছেন সাহেবি ছোঁয়া।

Advertisement

আড্ডার আমেজ নিতে ঘুরে আসতে পারেন যোধপুর পার্কের ‘আবার বৈঠক’ ক্যাফে থেকে। এই কাফের স্পেশালিটিই হল ফেলুদা আর মগনলালালের ছোঁয়াচ। সঙ্গে আড্ডা। রেস্তরাঁর অন্দরসজ্জা থেকে নানা ডিশের নামকরণ— সবেতেই ফেলুদার প্রসঙ্গ। সত্যজিৎ ও ফেলুদা-ভক্ত খাদ্যরসিক স্বরলিপি চট্টোপাধায়ের ভাবনাতেই মজাদার নামের অসম্ভব সুস্বাদু রেসিপি ও অন্দরসজ্জা এদের ইউএসপি।মেনুতে রয়েছে নানা ধরনের চা, কফি আর মকটেল। তবে খাবারের ভাগেও কম যায় না এই কাফে। চিকেন প্ল্যাটার, গ্রিলড ফিশ লেমন বাটার সস, ফিশ অ্যান্ড চিপস্, চকোলেট মেঘরাজ, অরেঞ্জ মোইতোর মতো নানা রকমারি ফিউশন পদ ও পানীয়তে ঠাসা মেনুকার্ড জিভে জল আনবে।

বছর চারেক আগে সল্টলেক সেক্টর ওয়ান এলাকায় নিজের বাড়ির নীচেই প্রায় ২০০০ বর্গফিট এলাকা জুড়ে ‘ক্যালকাটা সিক্টিফোর’ ক্যাফের যাত্রা শুরু করলেন কর্ণধার দেবজিত্ পাল। দেবজিত্ বললেন কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোরে থাকাকালীন সেখানকার ‘হার্ড রক’ ক্যাফেতে প্রায়শই বসত তার আড্ডার আসর। সেখান থেকেই নিজের একটা ক্যাফে খোলার ভাবনা মাথাচড়া দিয়ে বসল তার। চাকরির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ ভালই সামাল দিচ্ছেন ক্যাফের ব্যাবসা। পকেটসই দামে ভাল মানের কফি আর খাবার সার্ভ করাই এই ক্যাফের ইউ এস পি। ক্যাফের মেনুটা সম্পূর্ণ কন্টিনেনটাল। ক্যাপেচিনো, পিনাকোলাটা মকটেল, ফার্স্ট ফ্লাস দার্জিলিং টি, পেরি পেরি চিকেন সিসলার, থিন ক্রাস্ট পিত্জা এই সব কিন্তু এই ক্যাফের মাস্ট ট্রাই। প্রতি শুক্রবারেই করা গানবাজনার আয়োজন।

বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সুন্দর আয়োজন করে রেখেছে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে‘বিউন-দ্য কফি রুম’।কাফেতে ঢুকেই চক্ষু একেবারে চড়কগাছ! টেবিল আছে তবে চেয়ারের পাত্তা নেই! আসলে জাপানি কায়দায় চেয়ারের কাঠামোয় নরম কুশনের উপর বসে নীচু ডাইনিং টেবিলে খাওয়াদাওয়ার আয়োজনেই এই কাফে বাজিমাত করেছে, যা মন কাড়তে পারে আপনারও! কাফেতে বসেও বাঙালি পছন্দ করে পেট ভরানো চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল। শুধু কি তাই? এই কাফেতে আরও পাবেন বাঙালির সাধের সাদা ভাত আর কষা মাংসও। এক কাফেতেই যদি আপনি ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার সবই সারতে পারেন তা হলেই বা মন্দ কী!

হিন্দুস্তান পার্কে কন্টিনেন্টাল খাবার আর নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসেছে ক্যাফে ড্রিফটার। গানবাজনার উপকরণ মজুত। ক্যাফেতে আসেন সব বয়সের মানুষ। রাজরূপ ভাদুড়ি তিন বছর ধরে ব্যবসা করছেন। বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে জেনেই নতুন নতুন পদ তৈরি করছেন তিনি। নিজস্বতা আনতে টাই আপ করেছেন একটি ছোট বেকারির সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন