সংগৃহিত চিত্র
নিম্নচাপ বা বর্ষা, যে কারণেই হোক না কেন, আকাশ যতই মুখ ভার করে থাকুক, আদতে কিন্তু পুজো দরজায় কড়া নাড়ছে যে সেটা রোদ উঠলেই টের পাওয়া যাচ্ছে। শহর জুড়ে জোরকদমে পুজোর প্রস্তুতি চলছে। আর তার ফাঁকেই আনন্দবাজার ডট কমকে পুজোর প্ল্যান ফাঁস করে দিলেন অভিনেত্রী অঙ্গনা রায়।
পুজো নিয়ে কথা হবে, আর পুজোর পরিকল্পনার প্রসঙ্গ উঠবে না তাই কখনও হয়? এ বার কী কী পরিকল্পনা আছে জানতে চাইতেই 'পারিয়া' খ্যাত নায়িকা বলেন, “এ বারের পুজোর প্ল্যান অনেকটা প্রতি বারের মতোই। এক তো কাজ থাকে, উদ্বোধন, পুজো পরিক্রমা, ইত্যাদি। সেগুলির পর সন্ধ্যা বা রাতে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করি। যে বন্ধুরা সারা বছর কলকাতায় থাকে না, কিন্তু চেষ্টা করে পুজোর সময় কলকাতায় আসার, তাদের সঙ্গে দেখা করার প্ল্যান থাকে। এ ছাড়া, আমার দাদু এখনও জীবিত, তাঁর সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানোর পরিকল্পনা থাকে। আমি দিনগুলি ভাগ করে নিই আসলে, এক দিন পরিবারে সঙ্গে কাটাই, এক দিন শুধু দাদুর সঙ্গে দুপুরে খেতে যাই, দু'-এক দিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা। এ সবই আর কী!”
আর পুজোর কেনাকাটা? হল নাকি এখনও বাকি? “আমার না এখন একটা অদ্ভুত জিনিস হয়েছে, আমি পুজোর সময় কেনাকাটা করি না আর। গত দু'-তিন বছর ধরে পুজোর সময় কিছুই কিনিনি। আসলে সারা বছর ধরে কখনও না কখনও জামাকাপড় কেনা হয়েই যায়। জন্মদিন, সেল চললে বা অন্য সময় ধরুন কিনে রাখলাম যে পুজোয় পরব, তাই এই সময় আর আলাদা করে কেনা হয় না। আমি আর অতিরিক্ত কিছু এই সময় কিনতে চাই না। আর প্রত্যেক বছর আমি অষ্টমীর দিন মায়ের শাড়ি পরি। এখনও সেই চল আছে।”
ঠিকই তো, ছোটবেলায় পুজো মানেই অষ্টমীর দিন মায়ের নতুন শাড়ির একটিতে হাত বসানো। নতুন শাড়ি না পরে অঞ্জলি দেওয়া যায় নাকি? অভিনেত্রী আজও তাই ছোটবেলার সেই ধারা বজায় রেখেছেন। তবে তিনি যে কেবল কেনাকাটা করেন না পুজোর আগে তাই নয়, এই সময় তিনি একদমই ডায়েট মানেন না বলেও জানান। পুজোর ডায়েট নিয়ে কথা হতেই অঙ্গনা হেসে ফেলেন। বলেন, “পুজোয় ডায়েট বলতে, এই সময়টা একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে যে এখন খেয়ে নিই, পরে ঝরিয়ে ফেলব। নবমীর দিন মূলত বেশি খাওয়া-দাওয়া হয়। আমি যে খুব ডায়েট মেনে চলি সেটা নয়। এমনিও বাড়ির খাবারই খাই, বাইরের খাবার খাই না। ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণটা এ ভাবেই হয়ে যায় আর কী! কিন্তু ওই নবমীর দিনটা আর লোভ সামলাই না। ও দিন কবজি ডুবিয়ে খাই।”
ডায়েটকে বুড়ো আঙুল দেখালেও পুজোর প্রেম? সেটাও কি ‘আব্বুলিশ’ করে দিতেন, নাকি জমিয়ে এই সময় প্রেম করেছেন? না না, পুজোর প্রেমকে মোটেই ‘আব্বুলিশ’ করেননি অঙ্গনা। তবে সেখানে রয়েছে এক মজার টুইস্ট! অভিনেত্রী বলেন, “যখন একদম ছোট তখন শুনতাম যে পুজোয় প্রেম, এটা ওটা। বিষয়টা নিয়ে একটা ফ্যান্টাসি ছিল যে আমিও যখন ৯-১০-এ পড়ব, আমিও তখন পুজোয় প্রেম করব।’’ বলেই হেসে ফেলেন। বিরতি নিয়ে ফের বলেন, “আসানসোলের পাড়ার অনেক দাদাদের উপর ক্রাশ খেয়েছি ছোটবেলায়, ওইটাই তখন মজা ছিল। একদম নিষ্পাপ একটা ভাল লাগা। এরপর ক্লাস ১১-এ উঠি যখন তখন প্রথম বার বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে পুজোয় ঘুরতে বেরোনোর একটা আলাদা অনুভূতি ছিল অবশ্যই। কলেজে ওঠার পর মূলত বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতাম। ওটার আবার একটা আলাদা মজা ছিল। আসলে কী বলুন তো, আমার কাছে একটা সময়ের পর পুজোর প্রেমটা খুব একটা জরুরি ছিল না, কিন্তু এই সময় প্রেমের গান শুনতে খুব ভাল লাগে। আমি এমনিও গান শুনতে, গাইতে খুব ভালবাসি। পুজোয় প্রেম করার বদলে ফাটিয়ে প্রেমের গান শুনেছি।’’
তবে খানিক দুঃখের সঙ্গেই অঙ্গনা জানান আসানসোলের বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার পর পুরনো পাড়ায় আর যাওয়া হয়নি তাঁর। পিছুটান না থাকলেও অভিনেত্রী যে সেই জায়গাটিকে মিস করেন সেটা তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট। বিশেষ করে পুজো এলেই। অঙ্গনা বলেন, “দুর্গা ঠাকুর আমার ‘আইডল’। আমি এমনি বিশেষ পুজো-আচ্চা না করলেও, ওঁর সঙ্গে আমার একটা আলাদা অনুভূতি জড়িয়ে আছে। ছোটবেলায় আসানসোলের পাড়ার পুজোয় এতটা জুড়ে, ডুবে থাকতাম যে দুর্গাপুজো আমার জন্য খুব ইমোশনাল একটা জায়গা। আর দুর্গা ঠাকুরকে আমি খুব মানি।”
‘আইডল’-এর কাছে এ বার কী প্রার্থনা করবেন অভিনেত্রী? অঙ্গনা বলেন, “মায়ের কাছে এটাই প্রার্থনা আমার পরিবার যেন খুব সুস্থ ভাবে থাকে। আমার স্বাস্থ্যও ভাল থাকুক। গত বছর আমি একাধিক বার অসুস্থ হয়েছি, যা আগে হয়নি কখনও। যদিও এখন পুরোপুরি সুস্থ আমি। তাই নিজের, বাকিদের ভাল স্বাস্থ্যের কামনা করব। আমি মানি না যে কেউ একা বাঁচতে পারে। তাই সবার সুস্থতা কামনা করব, চাইব যাতে আগামী বছর ভাল কাটে।’’
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।