Manasi Ghosh's Puja Plan

পুজোর মুখেই মুক্তি পেল প্রথম হিন্দি গান, প্লেব্যাক সারলেন রূপমের সঙ্গে-ও! মানসী বললেন, ‘কখনও ভাবিনি যে…’

‘ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ১৫’ জেতার পর এটাই প্রথম পুজো তাঁর। দারুণ ব্যস্ততায় কাটছে সময়। পুজোর পরিকল্পনা নিয়ে কী জানালেন মানসী?

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৪২
Share:

সংগৃহীত চিত্র।

চলতি বছরেই ‘ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ১৫’-এর ট্রফি জিতেছেন মানসী ঘোষ। সেরার শিরোপা পাওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম পুজো। বর্তমানে শ্যুট, অনুষ্ঠান সবটা নিয়েই দারুণ ব্যস্ততায় সময় কাটছে এই বঙ্গতনয়ার। তার ফাঁকেই তাঁকে ফোনে ধরল আনন্দবাজার ডট কম।

Advertisement

আড্ডার শুরুতেই প্রসঙ্গ ওঠে মানসী ঘোষের সদ্য মুক্তি পাওয়া গানের। একটি জনপ্রিয় গয়নার ব্র্যান্ডের জন্য তিনি রূপম ইসলামের সঙ্গে একটি গান গেয়েছেন। এক সময় যাঁর গান শুনে বড় হয়েছেন, সেই গায়কের সঙ্গে পুজোর গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাইলে ‘ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ১৫’-এর বিজয়ী বললেন, “খুবই ভাল। আমি ছোট থেকে রূপমদার ভীষণ বড় অনুরাগী। মানে ওই পোস্টার লাগিয়ে রাখার মতো অনুরাগী ছিলাম। প্রায় সারা দিন ধরে ওঁর গান শুনতাম। আমায় যদি কেউ ছোটবেলায় বলতো যে বড় হয়ে ওঁর সঙ্গে আমি গান গাইব, এটা তো ভাবতেই পারতাম না, হয়তো বলতাম, ‘বাবা, আমি রূপম ইসলামের সঙ্গে গান গাইব! এ কী কথা!’ সেখানে দাঁড়িয়ে আমি যখন ওঁকে সামনাসামনি দেখলাম, উনি আমার গান শুনে প্রথমে আমায় ‘হাই-হ্যালো’ করলেন। তার পর বললেন ‘তুমি খুব ভাল গেয়েছ গানটা। আমার খুব ভাল লেগেছে। তোমার নম্বরটা আমার কাছে থাকা উচিত, আমার কাছে কখনও যদি কোনও গান আসে আমি চাই তুমি গাও।’ ওটা শুনে আমি এত আনন্দ পেয়েছি যে আমাকে কিছু বলতে হয়নি, উনি নিজে আমাকে বলছেন এমনটা। পুরো শ্যুটটাই খুব ভাল হয়েছে। ওঁর একটা অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আছে, কথার একটা ধরন আছে। গোটাটা মিলিয়ে খুব মজা করে কাজ করেছি।”

এত বড় খেতাব জয়ের পর এটাই প্রথম পুজো যখন নিশ্চয় ব্যস্ততাতেই কাটবে। কী কী পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে মানসী জানালেন, “পুজোর সময় অনুষ্ঠান রয়েছে। তার পর মিউজিক ভিডিয়োর শ্যুটিংগুলি করছি। নাইজেরিয়া যাওয়া আছে, আইডল (ইন্ডিয়ান আইডল) শুরু হবে। সেটার স্টুডিয়ো মানে অডিশন রাউন্ডে এক দিন আমার শ্যুটিং রয়েছে। গোটা পুজোই বাইরে থাকব।”

Advertisement

তিনি জানালেন এই সময় এত ব্যস্ততায় কাটে যে এক প্রকার নাওয়া, খাওয়ার সময় পর্যন্ত পান না তিনি। মানসীর কথায়, “আমার পুজোর সময়ের বদলে অন্যান্য সময় বেশি ভাল খাওয়া দাওয়া হয়, কারণ হাতে একটু তাও সময় পাই। কিন্তু পুজোর সময় কী হয় বলুন তো, বাইরে অনুষ্ঠান থাকলে এক-এক দিন এক-একটা জায়গায় শো হয় তো খুব হেকটিক হয়ে যায়। মানে আমার এখন যেমন আছে ২৭ তারিখে লাগোস, নাজেরিয়া রয়েছে। ২৮ তারিখ ওখান থেকে যাব হায়দরাবাদ, তার পর দিন বেঙ্গালুরু। বেঙ্গালুরু থেকে পর দিন ওড়িশা এবং তার পর রায়পুর যাব। ফলে ওই শোয়ের সময়টুকু ছাড়া আমার সকাল-বিকেল বিমান ধরতে, যাতায়াতে সব সময় চলে যাবে। তাই পুজোর সময় আমার খাওয়াটা খুব একটা হয় না। ওই যে হোক কিছু একটা পেলাম, খেয়ে নিলাম এটুকুই। এই সময় এটা একটু অসুবিধা হয়। পুজোর শুরু বা শেষ হওয়ার পর ভাল খাওয়া দাওয়া হয়। আর আমি তো আগাগোড়া আমিষ খেতে ভালবাসি। আর বুঝতেই পারছেন বাঙালির আমিষ মানে কী!”

কাজে কাজে পুজো কাটলেও বাঙালিদের তো এই সময় নতুন জামা না পরলেই নয়। কেনাকাটা হল? প্রায় আকুতির স্বরে মানসী বললেন, “বিশ্বাস করুন আমি কিচ্ছু কিনিনি এখনও। আমার সময়ই হচ্ছে না। কলকাতায় এলাম আমি গত পরশু। কিছু কাজ ছিল এখানে, একটা গান করার ছিল, শ্যুট ছিল। ভেবেছিলাম এসে কিছু কিনব, কিন্তু এখনও অবধি যাওয়া হয়নি। তবে ভাবছি কিছু কিনব। অনলাইনে কিছু অর্ডার করেছি, মা তো বলেই যাচ্ছে। কিন্তু পুজোর কেনাকাটা বলতে গেলে এখনও কিছুই হয়নি।”

বড় হলেই কেমন যেন পাল্টে যায় ছোটবেলার সেই চেনা পুজোর আনন্দ। থাকে কাজের চাপ, ব্যস্ততা, অন্যান্য আরও দায়িত্ব। এই সময় দাঁড়িয়ে যখন পিছু ফিরে তাকান ছেলেবেলার পুজোর কোন স্মৃতি আজও মনে পড়ে তাঁর? “ছোটবেলায় আমার খুব ভাল লাগত ঘুম থেকে উঠে যে ঢাকের শব্দ পেতাম সেটা। এত আনন্দ হতো মানে কী বলব! একটা অষ্টমীর কথা আমার মনে আছে, আমি সবে দাঁত মেজে উঠেছি আর ঢাকের শব্দ শুরু হয়েছে। সেই শব্দ শুনেই মনে হল, সবে অষ্টমী, এখনও নবমী, দশমী মানে ৩ দিন রয়েছে আমায় পড়াশোনা করতে হবে না। আরেকটা হল বাবা মায়ের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া। এগুলি খুব মনে পড়ে”, জবাব মানসীর। কথায় কথায় তিনি এ দিন এ-ও জানালেন ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে তিনি পুজোর সময় অনুষ্ঠান করছেন, ফলে সেই সময় থেকেই তাঁর এই সময় ঘোরা হত না। মানসী বলেন, “এখন আমি ২৪, প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল আমি পুজোয় ঘুরতে যাই না। ছোটবেলার পুজো মানে বাবা মায়ের সঙ্গে অঞ্জলি, ঠাকুর দেখা, এ সবই ছিল।”

অনুষ্ঠান, পড়াশোনার ফাঁকেও কি কখনও পুজোর প্রেম কড়া নেড়েছে গায়িকার জীবনে? প্রশ্নেই তাঁর সাফ জবাব, “সবাই হয়তো বলবে যে মিথ্যে কথা বলছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমার ওই ‘পাড়ার প্রেম’ বলে না, ওটা হয়নি। এটা সৌভাগ্য বলব না দুর্ভাগ্য জানি না। আমার মা মেরে ঘর থেকে বের করে দেবে এ সব করতে গেলে। সত্যি বলতে, আমার মা তো আমাকে বাড়ি থেকে বেরোতেই দিত না। এক তো গান, নাচ শিখে, স্কুলের পর পড়াশোনা করে আমার সময় হত না। যে অতিরিক্ত সময়টা পেতাম সেটায় গান নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম, শো থাকত। ফলে প্রেম হওয়ার কোনও সুযোগই ছিল না। তা ছাড়া শাড়ি পরে অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে যাব, এ সব আমার জন্য বিলাসিতা। এ সব আমার জীবনে হয়নি।”

খালি রূপম ইসলামের সঙ্গে গয়নার ব্র্যান্ডের গান নয়, সদ্যই মুক্তি পেয়েছে তাঁর প্রথম হিন্দি প্লেব্যাক, ‘মনু কেয়া করেগা’ ছবির গান। সেখানে তিনি গান গেয়েছেন শানের সঙ্গে। ললিত পণ্ডিতের এই কাজ ছাড়াও একটি জনপ্রিয় ক্যাসেট কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মানসী। পুজোর আগে মুক্তি পাবে তাঁর গাওয়া ‘লীলাবালি’ গানটিও। ফলে, পুজোর আগেই একগুচ্ছ নতুন গান মুক্তি পাচ্ছে তাঁর। ঝুলিতে রয়েছে ভরপুর অনুষ্ঠান। এত কিছুর মাঝে কী প্রার্থনা থাকবে এ বার দেবী কাছে মানসীর? “এই চাওয়াটা বোধহয় সমস্ত গায়ক গায়িকাদেরই থাকে যে তার নিজের কোনও গান মানুষে শুনছে, মানুষে জানে। অন্তত এক লাইন হলেও গাইতে পারবেন, আমি চাই আমার গান এতটা জনপ্রিয় হোক। এখন আমার গান হোক শুধু, আমি যেন অনেক ভাল ভাল গান উপহার দিতে পারি, অনেক ভাল ভাল গান গাইতে পারি, আর যেন অনেক শিখতে পারি। দেবীর কাছে আমি বলেছি, ‘দেবী প্লিজ আমার কথা শোনো, আমায় এটা দাও!’ দেবীকে দিতেই হবে এটা, যত ক্ষণ না দেবে চাইতেই থাকব”, স্পষ্ট জবাব মানসীর।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement