Live Music Event

পুজোর আগে র‍্যাপ থেকে আধুনিক গানের আসর বসছে শহরে! গাবুর আয়োজনে স্যমন্তক, সুমন-সহ পারফর্ম করছেন কারা?

পুজোর আগে শহরে ফের গানের আসর জমতে চলেছে। ছয়টি ধরনের ব্যান্ড এবং একক শিল্পী পারফর্ম করবেন এই অনুষ্ঠানে। আর গোটা বিষয়টি আয়োজন করেছেন ‘লক্ষ্মীছাড়া’ ব্যান্ডের গৌরব চট্টোপাধ্যায়। ওরফে গাবু।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৫৯
Share:

সংগৃহিত চিত্র

৬টি ব্যান্ডের ঝড়ের পর পুজোর ঠিক আগেই শহরে ফের স্বচরিত গানের উদ্‌যাপন হতে চলেছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর, ‘লক্ষ্মীছাড়া’ ব্যান্ডের গৌরব চট্টোপাধ্যায় ওরফে গাবু এবং ‘গানপিয়ন’ আয়োজিত ‘৬০ চৌরঙ্গী রোড’-এ একসঙ্গে পারফর্ম করবে ৬টি দল। যার মধ্যে রয়েছে একক শিল্পী থেকে ব্যান্ড সব কিছুই। রয়েছে আধুনিক বাংলা গান থেকে র‌্যাপ, জ্যাজ, ইংরেজি, হিন্দি সব ধরনের গান। তবে এত বৈচিত্র্যের মধ্যে মিল একটাই, প্রতিটি গান শিল্পীদের নিজেদের লেখা এবং সুর করা।

Advertisement

হঠাৎ করে সম্পূর্ণ আলাদা ছয় ধরনের ‘সাউন্ড’কে একসঙ্গে আনার পরিকল্পনা করলেন কেন জানতে চাইলে আনন্দবাজার ডট কমকে গাবু বলেন, “সুরকার বা সঙ্গীতশিল্পী, যাই বলি না কেন সেটা হিসেবে ৩০ বছর পূর্ণ করলাম। আমার ব্যান্ড লক্ষ্মীছাড়ার প্রথম গান প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। আমার কাছে নিজের তৈরি করা গানের মূল্য সব সময় বেশি। গানের জন্য গান, আর কী! সেখানে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রচুর শিল্পী আছেন যাঁরা নিজেদের মতো কাজ করছেন, কিন্তু তাঁদের নিয়ে সে ভাবে শো হচ্ছে না। সেখান থেকে মনে হল কেন এমন একটা কিছু করলে হয় না। আমি দেশ-বিদেশে প্রচুর শো করেছি, কাজ করেছি। কিন্তু এই শহরেই তো সব কিছুর শুরু তাই এখান থেকেই মনে হল শুরু করি। এটা এই বছর আমার চার নম্বর উদ্যোগ। এ বার ‘গানপিয়ন’-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছি। ফলে এটা একটা খুব ভাল লাগার জায়গা থেকে করছি। আমি এই যে শোগুলি করছি সেগুলি প্রতিটি এমন শো যা আমি দেখতে পছন্দ করব। যে শো দেখতে চাই, সেটাই তৈরি করছি এখন।”

এই শোয়ে পারফর্ম করবেন ‘স্যমন্তক অ্যান্ড মেটস’, সুমন রুজ, রিভু, ‘একে চন্দ্র’, ‘বাংলার ঠেক’ এবং ‘লটারি, দ্য লস প্রজেক্ট’। আগামী রবিবারের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে স্যমন্তক সিংহ জানান তিনি দারুণ উত্তেজিত। বলেন, “এটাকে একটা ‘ইন্ডি ফেস্টিভ্যাল’ই বলা যেতে পারে। সত্যি বলতে এখন স্বাধীন গান-বাজনার জন্য সময়টা তো খুব একটা ভাল নয়। আগে আমরা যখন শো করেছি একটা-দু’টো কভার গেয়ে, বাকি নিজেদের স্বরচিত গান গেয়েছি, কিন্তু আজকাল আর সাধারণত সেটা হয় না। সেখানে দাঁড়িয়ে এ দিন প্রতিটি ব্যান্ড বা শিল্পী নিজেদের স্বরচিত গান পারফর্ম করতে পারবেন। এটাই সব থেকে ভাল ব্যাপার, বা যেটা নিয়ে আমি সব থেকে উত্তেজিত। গাবুদা (গৌরব চট্টোপাধ্যায়, লক্ষ্মীছাড়া ব্যান্ড)-র এটা একটা দারুণ উদ্যোগ। উনি দায়িত্ব নিয়ে ‘অরিজিন্যাল’ গান, স্বাধীন ভাবে গান-বাজনা করা শিল্পীদের প্রচার করছেন। আমি খুব খুশি যে আমরা এখানে পারফর্ম করছি।” সুমন রুজের গলাতেও প্রায় একই সুর শোনা গেল এ দিন। তিনিও জানান, “বাংলা স্বাধীন গান-বাজনার অবস্থা বর্তমানে খারাপের দিকেই একটু, আস্তে আস্তে ঠিক হচ্ছে বলে বিশ্বাস করি।” তিনিও একই ভাবে ৭ তারিখের শো নিয়ে উত্তেজিত। বিশেষ করে ‘ব্যান্ড স্টর্ম’-এর পর। তাঁর কথায়, “গাবুদা এবং ‘গানপিয়ন’ যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে আশা করি অনেক মানুষ আবার ব্যান্ডমুখী হবেন। গত ৩১-এর শো-টা তো দারুণ সাড়া ফেলেছে, আশা করছি আমাদের এই শো-টাও অনেক মানুষ উপভোগ করবেন, এবং সেখান থেকে আবার কিছু গান ‘ভাইরাল’ হবে। মানুষ সিনেমার গানের বাইরে নতুন আধুনিক বাংলা গান শুনবে। তাই ভীষণই উত্তেজিত এবং খুশি।”

Advertisement

রবিবার কে কী গান শোনাচ্ছেন জানতে চাইলে স্যমন্তক জানান তাঁরা ‘ছাতিফুল’ এবং ‘শ্রাবণের দিন’ গানটি শোনাবেন, সঙ্গে থাকবে আরও কিছু নতুন গান। সুমন রুজ শ্রোতাদের শোনাবেন ‘হুসনেজানা’, ‘খুশনুমা’, ‘সামনের মাসে গিটার কিনবে সে’-র মতো গানগুলি।

শহরের বুকে একের পর অনুষ্ঠানে বাংলা গান, আরও ভাল করে বললে স্বরচিত গানের উদ্‌যাপন চলছে। এই বিষয়ে গৌরবের সংযোজন, “এত ধরনের যে কাজ হয় সেটার প্রতিচ্ছবি এই শো। ‘লটারি, দ্য লস প্রজেক্ট’ দিয়ে শুরু, শেষ ‘বাংলার ঠেক’ দিয়ে। মাঝে সুমন রুজ, ‘স্যমন্তক অ্যান্ড মেটস্’ রয়েছে, আবার রিভুর মিউজিকে প্রগ্রেসিভ রক, মেটাল, জ্যাজের স্পর্শ আছে, ওর বেশ কিছু গান ইংরেজিতে লেখা। ‘একে চন্দ্র’ চন্দ্রজিৎ গোস্বামীর ব্যান্ড। এদের গানে লাতিন সঙ্গীতের ছোঁয়া আছে। ফলে ৬ জন ৬ ধরনের গান শোনাবে। এটা আমার জন্য দারুণ একটা বিষয়। আমি এটা করে যেতে চাই। লোকে বলে না যে, নতুন গান হচ্ছে না, প্রচুর নতুন গান হচ্ছে। শুধু সেই নতুন গানগুলিকে উদ্‌যাপন করা দরকার। আমি যেমন কাজ করছি, তেমন কাজ আরও কিছু মানুষ করছেন, আমি চাই আরও অনেক মানুষ করুন। ২০১০ অবধি এগুলি উদ্‌যাপন করা হতো। সেই উদ্‌যাপন আবার দরকার। আমাদের রাজ্য জুড়ে অনেক আকর্ষণীয় কাজকর্ম হয়।”

ব্যান্ডের গান নিয়ে ফের এই হইচই প্রসঙ্গে স্যমন্তক বলেন, “বড় বা ছোট, যে আকারেই হোক, বিষয়টা হচ্ছে। দেখুন প্রতিটি জিনিসের তো একটা ‘স্যাচুরেশন’ পয়েন্ট থাকে, তারপর আবার সেটা ‘রিনিউড’ হয়। হয়তো একটু অন্য রকম ভাবে বা একে বারেই নতুন করে, কিন্তু ফিরে আসে। তো সেখানে দাঁড়িয়ে আমার তো মনে হয় যে ব্যান্ড সঙ্গীত আবার ফেরত আসছে।” সুমনের মত, “আমার যে সঙ্গীত অ্যাকাডেমি আছে সেখানে পড়াতে গিয়ে দেখেছি ছেলেমেয়েরা, যারা ক্লাস ১১-১২-তে পড়ে বা কলেজে পড়ছে, আমরা যে সমস্ত ব্যান্ডের গান শুনেছি, তারা সেগুলি তো শোনেনি, অঞ্জন দত্ত বা কবীর সুমনের কোনও গান বললে বলে শোনেনি, তারা অনুপম রায়ের গানও শোনেনি। তারা যে কী শোনে আমার জানা নেই। তবুও এই ধরনের অনুষ্ঠান হলে তারা যদি সেখানে এসে আধুনিক বাংলা গান শোনে, আর সেটা যদি তাদের ভাল লাগে তা হলে তারা সেটা আবার শুনে দেখবে আর কী। আমাদের ‘ইঞ্জেক্ট’ করা ছাড়া তো আর উপায় নেই।” গায়ক এও বলেন স্বরচিত গান নিয়ে রিয়েলিটি শো হলেও চিত্রটা বদলাতে পারে।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement