প্রতীকী চিত্র।
মায়ের কাছে তাঁর সকল সন্তানই সমান, তাঁদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। আর সেই মা যদি হন স্বয়ং জগজ্জননী, তা হলে তাঁকে যে অন্তত জাতপাত, ধর্মের বেড়াজালে বেঁধে রাখা যায় না, দশকের পর দশক ধরে তারই প্রমাণ দিয়ে চলেছেন হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পার্বতীপুর গ্রামের বাসিন্দারা।
এই গ্রামে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম পরিবারগুলি দীর্ঘকাল শান্তিতে সহাবস্থান করে আসছে। তাদের ধর্মবিশ্বাস পৃথক হলেও দেবী দশভূজার আরাধনায় দুই পক্ষই সমান ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে।
এই গ্রাম বিখ্যাত ‘ঠাকুরের চুল’ তৈরির জন্য। আসলে যে কোনও হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমা নির্মাণের ক্ষেত্রে মাথার চুল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটু বিষয়। পার্বতীপুরের বাসিন্দারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেই কাজই একত্রে করে চলেছেন। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয় কোনও বাধা তৈরি করতে পারেনি।
প্রতিমার চুল তৈরি করা হয় পাট থেকে। পাটের শণ ভাল করে সেদ্ধ করে, রোদে শুকিয়ে চুল বা পরচুলা তৈরি করা হয়। দুর্গাপুজোর সময়ে এই গ্রামের বাসিন্দা তথা শিল্পীদের ব্যস্ততা বাড়ে। দেবী দুর্গার জন্য মূলত কালো রঙের চুল তৈরি করা হয়। আর শিবের জন্য লাল অথবা কমলা চুলের চাহিদা বেশি। চুলের ধরন কখনও সোজা, আবার কখনও কোঁকড়ানো। গ্রামের নানা বয়সের পুরুষ ও মহিলারা এই কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
এই পার্বতীপুর থেকেই প্রতিমার চুল পৌঁছে যায় কলকাতার কুমোরটুলিতে। এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশ, বিহার, দিল্লি, মহারাষ্ট্র থেকেও কাজের বরাত আসে। এমনকী, ‘ঠাকুরের চুল’ রফতানি করা হয় পড়শি বাংলাদেশ কিংবা নেপালেও। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ হেন উদাহরণ নিঃসন্দেহে বাঙালি তথা ভারতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সহিষ্ণুতার অনন্য নজির!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।