History of Theme Durga Puja

আরব সাগরের পাড়ে নেওয়া এক সিদ্ধান্ত বদলে দেয় দুর্গাপুজোর চেহারা? থিম পুজোর ইতিহাস জানেন?

কলকাতায় থিম পুজোর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত গল্প। জানা আছে সে কাহিনি?

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১২:০০
Share:

প্রতীকী চিত্র

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে দুর্গাপুজো এবং থিম যেন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। কোথায় কী থিম হচ্ছে, সে দিকেই নজর থাকে মানুষের। নজরকাড়া বা বার্তাবহ থিম হলে তা দেখতে উপচে পড়ে ভিড়। কিন্তু জানেন কি, এই থিম পুজোর শুরুটা কবে হয়েছিল? কী ভাবেই বা হয়েছিল?

Advertisement

দুর্গাপুজোর ইতিহাস নিয়ে নানা গল্প রয়েছে। জনশ্রুতি বলে, ১৫০০ সালে প্রথম বার দিনাজপুরের মহারাজ স্বপ্নাদেশ পেয়ে দুর্গাপুজো করেছিলেন। কারও মতে আবার বারো ভুঁইয়ার অন্যতম কংসনারায়ণ নাকি দুর্গাপুজোর প্রচলন ঘটান। তবে ইতিহাস অনুযায়ী, নদীয়ায় মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরেই সূচনা ঘটে দুর্গাপুজোর। সময়কাল ১৬০১। পরবর্তীতে ১৯১০ সালে ভবানীপুরের বলরাম বসু ঘাট স্ট্রিটে কলকাতায় প্রথম বার আয়োজিত হয় সর্বজনীন দুর্গোৎসব। যা আগে বাবুদের বাড়িতেই সীমাবদ্ধ ছিল, এ বার সেই পুজো সর্বজনীন হয়ে ওঠে। থিম পুজোর আগমন ঘটতে অবশ্য তখনও ঢের দেরি।

থিম পুজোর ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে ভাইস প্রেসিডেন্ট শাশ্বত বসু বলেন, ''থিম পুজো শুরু হয় ১৯৯২ সাল থেকে। আমাদের উত্তর কলকাতার কিছু পুজো এবং পিকনিক গার্ডেনের কিছু পুজো নিয়ে শুরু হয়। তার পর ১৯৯৫ সাল থেকে মোটামুটি অনেকেই থিম পুজো করতে শুরু করেন। যেমন উত্তর কলকাতায় হাতিবাগান, আহিরীটোলা সর্বজনীন, তেলেঙ্গাবাগান, যুববৃন্দ, দক্ষিণ কলকাতার মুদিয়ালি শিবমন্দির, বাদামতলা– এরাও ওই সময়ে থিম পুজো শুরু করে, মানে ১৯৯৫-৯৭ সালে। এখন তা অনেক জায়গাতেই হয়।''

Advertisement

কিন্তু জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে মুম্বইয়ের জনপ্রিয় রং কোম্পানির অফিসে আলোচনা, পরিকল্পনা করা শুরু হয় যে কী ভাবে পূর্ব ভারতে তারা ব্যবসা বাড়াতে পারে। আর তাদের সেই একটি পরিকল্পনার হাত ধরেই আমূল পাল্টে যায় বাংলার, বাঙালির সবথেকে বড় উৎসবের ধারা। সেটা কি সঠিক? এই বিষয়ে শাশ্বত বলেন, ''১৯৮৫ সালে শারদ সম্মান বলে একটি পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে ওই সংস্থা। ওদের ট্যাগলাইন ছিল 'শুদ্ধ শুচি, সুস্থ রুচি।' ওরা হয়তো প্রথম পুরস্কার দেওয়া শুরু করেছিল। তার পরে আনন্দবাজার 'শারদ অর্ঘ্য', শুরু করে। শুধু আনন্দবাজার নয়, আরও একাধিক সংবাদমাধ্যমও এই শারদ সম্মান দেওয়া শুরু করে। শারদ সম্মানগুলির একটা অবদান নিশ্চয় ছিল। পুজোর পরিবেশ বা ভাবনা সেটার জন্যই বদলে গিয়েছে।''

প্রসঙ্গত, ৮০-এর দশকে তখনও সাবেকি ধাঁচের বারোয়ারি পুজোর চল। সেই সময়ে এই রং প্রস্তুতকারক সংস্থা নিয়ে আসে তাদের শারদ সম্মান পুরস্কার, যা আজ দুর্গাপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। বর্তমান সময়ে নানা প্রতিষ্ঠান, নানা মাপকাঠিতে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের সেরা দুর্গাপুজো বেছে নেয়। কিন্তু তা-ও, আজও তাদের শারদ সম্মান অনন্য হয়েই রয়েছে।

কিন্তু এই পুরস্কার কী ভাবে বদলে দিল দুর্গাপুজোর চেনা চেহারাকে?

১৯৮৫ সালে এই পুরস্কারের ঘোষণার পরে সেরা হওয়ার আশায় আর্ট কলেজের ছাত্রদের দিয়ে দুর্গোৎসব পুজো কমিটিগুলি তাদের মণ্ডপ সজ্জা থেকে প্রতিমা, আলোকসজ্জা করাতে শুরু করল। উদ্দেশ্যে? সুস্থ এবং সুন্দর কোনও বার্তাকে পুজোর মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা যেখানে থাকবে শুদ্ধতা, এবং সুস্থ রুচির ছোঁয়া। সেই কাজ আর্ট কলেজের ছাত্র ছাড়া কাদের দিয়েই বা করানো যাবে! বাঙালি এর আগে এমন কিছু কখনও দেখেনি। আর নতুন যা কিছু, তা বরাবরই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ বারও তার অন্যথা হল না।

পুজো ঘিরে এই নতুন ধারার ভাবনা যে অজান্তেই থিমপুজোর জন্ম দিয়ে ফেলল, তা বোধহয় বলা চলে। ফলে এত দিন ধরে মানুষ যে চেনা বারোয়ারী পুজোর দেখে এসেছে, তার চালচিত্র যেমন এক দিকে বদলে গেল, তেমনই ক্রমে কলকাতা তথা গোটা বাংলায় পুজো কমিটিগুলির মধ্যে শুরু হয়ে গেল রেষারেষি। কে কোন থিম দিয়ে কতটা চমকে দিতে পারে। ২০০০ সালের গোড়ার দিক থেকে সেই যে রমরমা শুরু থিম পুজোর, তা এখনও চলছে।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement