Kali Puja 2025

শিয়াল কি সত্যিই কালীর বাহন? না দেবী স্বয়ং?

Advertisement

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৩২
Share:

প্রতীকী চিত্র।

‘চূর্ণ হোক্ স্বার্থ, সাধ, মান হৃদয় শ্মশান, নাচুক তাহাতে শ্যামা।’

Advertisement

শ্যামা মা– নামটি শুনলেই ভেসে ওঠে ভয়ঙ্কর সুন্দর এক মাতৃমূর্তি। একই দেহে তিনি মায়ের শাসন, বারণ ও স্নেহ রূপে বিরাজমানা। রক্তাক্ত কৃপাণ, কর্তিত নরমুণ্ড, লোলজিহ্বা, ভীষণ দৃষ্টি, আলুলায়িত কেশদাম। অথচ বর ও অভয় মুদ্রা তাঁরই হাতে।

এ তো সে-ই মা, যিনি সন্তানকে স্নেহভরে ভাত বেড়ে দেন, আবার দুষ্টুমি করলে দু'ঘা পাখার বাড়িও দেন।

Advertisement

প্রশ্ন ছিল, এ হেন দেবীর সঙ্গে শৃগালই কেন! আগে জেনে নেওয়া যাক মা কালীর কথা।

কালী!

সৃষ্টির আদিলগ্নে দেবাসুরের ভীষণ সংগ্রামের দিনে দেবতাদের প্রার্থনায় আদ্যাশক্তি মাতা পার্বতীর দেহের কৃষ্ণ কোষ থেকে দেবী কৌশিকী আবির্ভূত হন। পক্ষান্তরে তখন দেবী কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেন বলেই তাঁর নাম কালী বা কালিকা। সে রূপভেদেই দেবী আবার চণ্ডিকা।

মহাভারতে ‘কালরাত্রি’ বা ‘কালী’ নামে আরও এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি যুদ্ধে নিহত যোদ্ধা ও পশুদের আত্মা বহন করেন।

‘কাল শিবহ্। তস্য পত্নতি কালী।’ অর্থাৎ শিবই কাল বা কালবোধক। তাঁর পত্নী কালী। (শব্দকল্পদ্রুম)

এক কথায়, কাল (সময়)-কে কলন (রচনা) করেন যিনি, তিনিই (কাল+ঈ) কালী। অর্থাৎ কালের উপলব্ধি হল কালী।

তা হলে যে কোনও শব্দার্থ ধরে যদি এগোনো যায়, সৃষ্টি বা বিনাশ দুয়েতেই তিনি বর্তমান। এক জন মানুষের জীবন চক্র কিংবা একটি যুগের কাল, অর্থাৎ ঘটমান সময় যেখানে শেষ হয়, যেখানে স্থূল দেহের নাশ হয় — তা হল শ্মশান। আর তাই কালিকা রূপের দেখা মেলে শ্মশানে। আর শ্মশান মানেই শিয়াল অর্থাৎ শৃগাল বা শিবা। তাই তো দেবী চণ্ডিকা রূপে যখন প্রথম আবির্ভূতা হচ্ছেন, সেখানে শৃগাল পরিবৃতা। সকলেই মৃত্যুর পথে পাড়ি দিয়েছে, কেবল শৃগালই বর্তমান।

আবার বলা হয় দেবী শৃগালের মধ্যে বোধরূপে বর্তমান। তার কারণ দেবীর খড়্গ মানুষকে বোধ দান করে। খড়্গে আঁকা চোখ অদেখার, অজ্ঞানতার অন্ধকার নাশ করে। তাই বুদ্ধিমানতম প্রাণী শৃগাল হল মায়ের বাহন। তাঁর শাবক।

তবে শৃগাল কিন্তু কেবল বাহনই নয়, দেবীর রূপভেদও বটে। বহু প্রাচীন প্রত্নলিপিতত্ত্বে কোকমুখা দেবীর উল্লেখ রয়েছে। যেখানে দেবী কোকমুখ অর্থাৎ শিয়াল/ নেকড়ের মুখগঠন ধারণ করছেন, শ্মশানের ধ্বনি দিচ্ছেন। বহু জায়গায় শ্মশানকালীর পুজোর আগে শিবা ভোগ দেওয়া হয়, যেখানে শিয়ালকে তুষ্ট করাই উপাচার।

হরিবংশ ও বিষ্ণুপুরাণেও দেবীর শিবা রূপ দেখা যায়। যমুনার অববাহিকা ধরে বসুদেব গোকুলের উদ্দেশে যাত্রা করলে দেবী তাঁকে শৃগালের রূপ ধরে পথপ্রদর্শন করেন।

এক কথায় চণ্ড-মুণ্ড, শম্ভু-নিশুম্ভ প্রভৃতি ভীষণ ভয়ালদর্শন অসুরকে বধ করতে দেবী যে দিন পার্বতী, গৌরী রূপ ত্যাগ করে কালিকা বা চণ্ডিকা রূপে আবির্ভূতা হলেন, সে দিন সে ভূমি শ্মশানভূমিতে পরিণত হল। তখন দেবীর একমাত্র জীবিত সঙ্গী ছিল শিবাকুল। তাই, শিবা বাহন নয়, বোধে এবং তত্ত্বে শিবাকুলই তাঁর সঙ্গী এবং শাবক।

পুরাণে কালী মূলত চণ্ডী বা আদি শক্তির বিভূতি রূপে প্রকট হয়েছেন। কিন্তু তন্ত্রে দক্ষিণা কালী একবারেই স্বতন্ত্র। সাধনা ও দার্শনিক দিক থেকেও অনেক বেশি সমৃদ্ধ। হিন্দু গৌড়ীয় তন্ত্রে কিন্তু দেবী কালিকার পাশে শৃগাল শ্মশানের প্রতীক। বাহন খোদ কালীর পায়ের নীচের শিবরূপ শবটি।

যথা~ শ্ম - শব, শান - স্থান।

শবের স্থানকে বলে শ্মশান। তন্ত্রের শববাহিনী কালী তাই শ্মশানবাসিনী। শৃগালের অপর নাম শিবা। "শিবা শত নিনাদিনী.." কারণ দলবদ্ধ শিয়ালের ডাক দেবীর অট্টহাসির প্রতীক। সে কারনে শ্মশান ও দেবীর প্রতীক হিসেবে শিয়াল কালীর পাশে অবস্থান করে। দেবীর দূত ও মানা হয় তাকে, তাই শৃগালকে ভোগ দেওয়ার বিধি আছে। কেবল সাধন মাত্র কোথাও নয়, এটি কালীর পুজো ও সাধনার একটি অঙ্গ।

তথ্য ঋণ- কালী কথা- পত্রভারতী

সাধক পরমানন্দ গিরি মহারাজ, শ্রীরামপুর সিদ্ধেশ্বরী মন্দির

শাস্ত্রকার অরিজিৎ মজুমদার

সাধক শ্রী শুভ্র ভট্টাচার্য

কালী কথা - শিবশংকর ভারতী

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement