সংগৃহিত চিত্র
আকাশে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে, শিউলি গাছের নীচে ঘাসের ওপর শিশির জমছে, আর এই সবের সঙ্গে মনে মনে একটাই সুর বাজছে— ‘পুজো আসছে!’ বাতাসেই যেন দুর্গাপুজোর গন্ধ। আর সেই পুজোকেই যেন স্বাগত জানায় দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা। ভাদ্র সংক্রান্তির দিন তাঁর আরাধনার মধ্য দিয়েই বাঙালির সব চেয়ে বড় উৎসবের ঢাকের প্রথম শব্দ শোনা যায়। কিন্তু যদি এমন একটা মন্দিরের কথা শোনা যায়, যেখানে বছরে এক দিন নয়, সারা বছর ধরে বিশ্বকর্মা পুজো হয়, তা হলে চমকে যাবেন? অবাক হওয়ারই কথা বটে।
সংগৃহীত চিত্র
ডুয়ার্সের জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা ব্লকের কুর্তি চা বাগানে হয় এই পুজো। এখানেই রয়েছে সেই ব্যতিক্রমী মন্দিরটি। ১৯৯৪ সালে তৈরি হওয়া এই মন্দিরে বছরের ৩৬৫ দিনই একই নিষ্ঠার সঙ্গে দেব শিল্পীর পুজো করা হয়। অন্য কোথাও যেখানে বছরে মাত্র একদিন বিশ্বকর্মার পুজো হয়, সেখানে কুর্তিতে প্রতি দিন চার বেলা ধরে চলে পুজার্চনা। শুধু বিশ্বকর্মা নন, এখানে একই সঙ্গে রাম-সীতা, শিব-পার্বতী, দুর্গা এবং লক্ষ্মী-নারায়ণেরও পুজো হয়।
এই মন্দিরের খরচ পুরোপুরি বাগান কর্তৃপক্ষই বহন করে। দু’জন স্থায়ী পুরোহিত রয়েছেন, যাঁরা প্রতি দিন নিয়ম করে পুজো করেন। তাঁদের পাশাপাশি মন্দিরের পরিচ্ছন্নতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেন তাঁরা। প্রতি দিন মন্দির চত্ত্বর ও আশপাশ সাফ সাফাই করা হয়। একটি পাতাও সেখানে পড়ে থাকতে দেওয়া হয় না।
অঞ্জলি দেন বাগান ম্যানেজার সহ অন্য পরিচালকরা। শ্রমিকরাও পুজো দেখতে আসেন। বিশেষ দিনে ভিড় হয় বেশি। শুধু চা বাগানের শ্রমিকরা নন, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার অথবা শিলিগুড়ি থেকেও বহু মানুষ আসেন। ডুয়ার্সে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও গাইড বা রিসর্ট মালিকদের উদ্যোগে এই মন্দির দেখতে আসেন। স্থানীয়দের মতে, কুর্তির মন্দির না দেখলে ডুয়ার্স ভ্রমণ যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।