প্রেতাত্মার বিবাহ! এ কোনও ভূতের ছবির গল্প নয়, বাস্তবের মাটিতেই চলে আসছে এই রীতি—যার নাম 'প্রেত কল্যাণম'। যার আক্ষরিক অর্থ, 'মৃতের বিবাহ'।
কর্ণাটক এবং কেরলের কাসারগড় জেলার কয়েকটি সমাজে এই শতাব্দি প্রাচীন প্রথাটি আজও সযত্নে পালন করা হয়।
কেন এমনটা হয়? এর পিছনে রয়েছে এক গভীর বিশ্বাস আর কিছু না-বলা বেদনা। সমাজের মানুষজনের বিশ্বাস, যে সব শিশু বা কিশোর-কিশোরী বিবাহযোগ্য হওয়ার আগেই মারা যায়—অর্থাৎ সাধারণত ১৮ বছরের আগে—তাদের আত্মা নাকি শান্তি পায় না।
এই অপূর্ণতার কারণে সেই অশান্ত আত্মারা নাকি জীবিত আত্মীয়দের জীবনে দুর্ভাগ্য ডেকে আনে, বিশেষ করে যাঁরা সন্তান ধারণের চেষ্টা করছেন বা যাঁরা এখনও অবিবাহিত।
এই বিপত্তি এড়াতেই শরণাপন্ন হতে হয় জ্যোতিষীর। তিনি বলেন, আত্মার মুক্তি বা 'মোক্ষ'-এর জন্য বিবাহই নাকি এক মাত্র পথ।
তাই পরিবারের মানুষজন মৃত সন্তানের আত্মার শান্তি নিশ্চিত করতে সেই বিবাহের আয়োজন করে থাকেন। ছেলে বা মেয়ের বয়স যখন বিয়ের যোগ্য হয়, তখনই এই প্রথা পালন করা হয়।
তাঁরা বিশ্বাস করেন, যাঁরা চলে গিয়েছেন তাঁরা আসলে মরে যাননি, বরং প্রেতাত্মা রূপে জীবিতদের মধ্যেই রয়েছেন। আর সেই জন্যই তাঁদেরও বিবাহিত জীবন দরকার।
তাই, এই ‘প্রেত কল্যাণম’ বা 'প্রেত মদুভে'-এর অনুষ্ঠান হয় একে বারে সাধারণ বিয়ের মতোই। বর বা কনের দেহের বদলে ব্যবহৃত হয় পুতুল বা তাদের পোশাক।
বিয়ের দিনে বরের পরিবার কনের বাড়িতে আসে, সঙ্গে থাকে বরের সেজে-ওঠা মূর্তি এবং কনের জন্য নতুন পোশাক। সেই পোশাক পরানো হয় কনের মূর্তিকে। এর পর দুই পরিবার মিলে সেই প্রতিমা দু'টির গলায় মালা পরিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে।
প্রীতিভোজের পর বরের পরিবার বর-কনে দু’জনেরই মূর্তি নিয়ে ফিরে যায়। রাতে সেগুলি রাখা হয় বরের বাড়ির কাছাকাছি একটি ছাতা গাছ ('সপ্তপর্ণী') বা ওই রকমই কোনও গাছের নিচে। এই ভাবেই অপূর্ণ জীবনের 'পূর্ণতা' দেওয়া হয়।
অবশ্য শহরের মানুষজন বা আধুনিক সমাজ এই প্রথাকে কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিলেও, ওই সমাজগুলির কাছে এটি মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক গভীর মানবিক উপায়।
এই প্রথা আইনত স্বীকৃত না হলেও, প্রিয়জনদের আত্মার শান্তি ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় আজও এই প্রথা চলে আসছে কর্ণাটক ও কেরলের কিছু অংশে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।