প্রতীকী চিত্র
কলকাতায় ঠাকুরবাড়ি বললেই জোড়াসাঁকোর সেই লাল বাড়ি চোখে ভাসে। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি। কিন্তু জানেন কি কলকাতায় আরও একটি ঠাকুরবাড়ি রয়েছে, উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালী বাড়ির কাছে অবস্থিত পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ি। আর এই দুই ঠাকুরবাড়ির মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগ!
প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের দাদু নীলমণি ঠাকুরের শুরু করা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে গেলেও, পাথুরিয়াঘাটার পুজো বহাল তবিয়তেই চলেছিল প্রায় একুশ শতক পর্যন্ত। ভাবছেন দুই বাড়ির কী যোগ?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের আদি নিবাস ছিল যশোর জেলায়। সেখান থেকে কবিগুরুর পূর্বপুরুষ পঞ্চানন কুশারী কলকাতায় আসেন প্রথমে। ঘাঁটি গাড়েন সুতানুটি অঞ্চলের গঙ্গার ঘাটে। পৌরহিত্য করতেন যেহেতু তিনি তাই লোকমুখে কুশারীর বদলে পঞ্চানন ঠাকুর হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। আর সেই থেকেই তাঁর উত্তরসূরিরা সেটাকেই পদবী হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
এই পঞ্চানন ঠাকুরের দুই নাতি হলেন নীলমণি ঠাকুর এবং দর্পনারায়ণ ঠাকুর। কিন্তু এই দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চরমে পৌঁছায়। আর তার জেরেই নীলমণি ঠাকুর তাঁর পরিবার এবং গৃহদেবতা লক্ষ্মী এবং শালগ্রাম শিলা নিয়ে বেরিয়ে আসেন। তৎকালীন মেছুয়াবাজার, বর্তমানের জোড়াসাঁকোতে এসে বাড়ি তৈরি করেন। পরবর্তীতে নীলমণি ঠাকুরের উত্তরসূরিরা ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করলে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বন্ধ হয়ে যায় দুর্গাপুজো। তবে দর্পনারায়ণ ঠাকুরের উত্তরসূরিরা হিন্দুই ছিলেন, আছেন, ফলে সেই পাথুরিয়াঘাটের ঠাকুরবাড়িতে একুশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত দুর্গাপুজো হয়ে এসেছে। বর্তমানে সেই পুজোও কালের নিয়মে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
কলকাতার এই দুই ঠাকুরবাড়ি একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। একই রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে দুই বাড়ির বাসিন্দাদের মধ্য দিয়ে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।