Chandannagar Pal House Jagadhatri Puja

বর্গির দাপটে একদা ভিটেহারা, চন্দননগর বক্সি গলির পালবাড়িতে আজও টিকে আছে জগদ্ধাত্রী পুজো

পুইনান থেকে চন্দননগর, বিপর্যয়ের ছাই পেরিয়ে যে পরিবার গড়েছিল ঐতিহ্য, সেই পালবাড়িতেই আজও বাজে পুজোর ঢাক

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৩৩
Share:

সংগৃহীত চিত্র

শরতের বাতাস জুড়োতে না জুড়োতেই চন্দননগরের বক্সি গলিতে যেন এক অন্য সুর। ঢাকে কাঠি আর কাঁসর ঘণ্টার মিষ্টি আওয়াজ মিশে যায় ভক্তি আর ভালবাসার গল্পে। যে গল্প এক দিন শুরু হয়েছিল সর্বনাশের প্রান্ত থেকে, আর শেষ হয়েছে নতুন করে জীবন গড়ার অবিচল অঙ্গীকারে। পাল বাড়ির সেই জগদ্ধাত্রী পুজো একালের ইট-কাঠ-পাথরের মাঝেও ইতিহাসের স্পর্শ নিয়ে উজ্জ্বল।

Advertisement

সময়টা তখন বাংলার মানুষের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। বর্গী হামলার সেই ভয়ঙ্কর কালে নিজের ভিটেমাটি সব হারিয়েছিলেন শরৎচন্দ্র পাল। পুঁইনান থেকে এসে ঠাঁই নিলেন এই চন্দননগরে। হাতে আর কিছু ছিল না, কিন্তু মনের জোর ছিল পর্বতপ্রমাণ। নতুন করে বাঁচতে হবে, এই জেদ নিয়ে তিনি শুধু নিজের পরিবার নন, সঙ্গে নিয়ে এলেন আরও কিছু মানুষকে, এবং তাঁদের আরাধ্য কুলদেবতাকেও। এই জনসমাগম যেন এক নতুন প্রাণের স্পন্দন আনল গঙ্গাপাড়ের শহরে।

শুরু হল কঠোর পরিশ্রমের দিন, তৈরি হল ‘বেঙ্গলি রাইস মিল’। তিল তিল করে আবার ফিরল সমৃদ্ধি। আর সেই সমৃদ্ধির সঙ্গেই শরৎচন্দ্রের বাড়িতে এলেন দেবী জগদ্ধাত্রী। শক্তির প্রতিমূর্তি হয়ে এই গৃহস্থালির পবিত্র আসনে বসলেন। সময়ের স্রোতে পুরনো বাড়িটি আজ আর নেই, সেখানে মাথা তুলেছে নতুন ঠাকুরদালান। তবুও উৎসবের আবেগ এতটুকুও কমেনি।

Advertisement

ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসা নিয়ে তিন দিন ধরে পালিত হয় পুজো। নবমী থেকে শুরু। কুমারী পুজো হয়, ধুনো পোড়ানোর সুবাসে ভরে থাকে চার দিক। মায়ের কাছে নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া হয় ঘরে তৈরি মালপোয়া আর মুণ্ডি সন্দেশ। আর বিসর্জনের আগে ঘটে এক অপূর্ব মিলন— পাল বাড়ির দেবী জগদ্ধাত্রী এক বারের জন্য হলেও যান বোড়াই চণ্ডীতলায়। সেখানকার দেবীর সঙ্গে যেন নীরবে শুভাশীষ বিনিময় করে যান।

ইতিহাস, ঐতিহ্য আর দেবীর স্নিগ্ধ করুণার এক বাঁধনহারা গল্প এই চন্দননগরের পালবাড়ি। এ যেন এক প্রাচীন আখ্যান, যা কালের সীমানা ছাড়িয়ে আজও সমান আকর্ষণীয়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement