সংগৃহীত চিত্র।
নিউটাউন বিসি ব্লক কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের দ্বাদশতম দুর্গোৎসবের বিশেষ আকর্ষণ তাদের অভিনব ভাবনা, ‘তাসের দেশে দশ অবতার’। বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত দশাবতার তাসের উপরই সাজানো হয়েছে পুজোর থিম। বলা যায়, পুজোর থিমের ক্ষেত্রে এই তাসের ব্যবহার এই প্রথম। তা ছাড়াও বাংলার তাঁতের শাড়ি, মাদুর, রঙিন কাগজ, চাটাই ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে পুরো প্যান্ডেল। হাতে আঁকা দশাবতার তাসের ব্যবহার পান্ডেলকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ফোম, থার্মোকল বা প্লাস্টিক নয়, সম্পূর্ণ প্যান্ডেলটি তৈরি হয়েছে পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে। এই গ্রিন পুজোমণ্ডপ সৃজন করেছেন শিল্পী প্রীতম আচার্য। কৃষ্ণনগরের সাবেক সাজে দেবী প্রতিমা গড়েছেন প্রতিমা শিল্পী শ্রী সুরজিৎ ঘোষ।
থিমটির মূল ভাবনা এসেছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস থেকে। ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুপুরের রাজা বীর হাম্বীর আকবরের দরবারে যাতায়াতের সময়ে তাস খেলার রীতি দেখে দেশে ফিরে এক নতুন ধরনের তাস বা ওরক প্রবর্তনের নির্দেশ দেন। বিষ্ণুপুর নিবাসী শিল্পী কার্তিক ফৌজদার তার নির্দেশে তৈরি করেন ‘দশাবতার তাস’। এই বিশেষ তাসে বিষ্ণুর দশ অবতার— মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, বলরাম, পরশুরাম, দশরথি রাম, জগন্নাথ (বুদ্ধ) ও কল্কি—কে ফুটিয়ে তোলা হয়। এক সেট দশাবতার তাসে থাকে মোট ১২০টি কার্ড, প্রতিটি অবতারের জন্য ১২টি করে। এর মধ্যে প্রথম তাসটি ‘রাজা’ ও দ্বিতীয় তাসটি ‘উজির’ হিসেবে নির্ধারিত। এই সমৃদ্ধ ঐতিহ্যই এ বছর নিউটাউন বিসি ব্লকের দুর্গোৎসবের মূল প্রেরণা।
পঞ্চমীর সন্ধ্যায় সম্বর্ধনা জানানো হয় বিখ্যাত পটচিত্রকার এবং বিষ্ণুপুর ফৌজদার পরিবাবের অন্যতম শিল্পী শ্রী শীতল ফৌজদারকে। নিজের পরিবারের শিল্পকলা ‘দশাবতার তাস’-এর থিমে এই প্যান্ডেলের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। উচ্ছ্বসিত দর্শনার্থীরাও।
প্রতিমা ও প্যান্ডেলের পাশাপাশি ছিল ছৌ নাচ, বাউল গান ইত্যাদির মতো বিভিন্ন লোকশিল্পের আয়োজন। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রী যধারাম কুমারের দল ছৌ নাচে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ পরিবেশন করেন চতুর্থীর সন্ধ্যায়। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় লোকগানে দর্শকদের মন মাতান বিখ্যাত শিল্পী শ্রী দেবীপ্রসাদ রাফাতানের দল। সপ্তমীর সন্ধ্যায় ‘সারেগামাপা’ খ্যাত দেবারতি দাশগুপ্ত সরকার উপস্থিত ছিলেন তাঁর ব্যান্ড নিয়ে, পরিবেশন করেন সংগীতমুগ্ধ এক সন্ধ্যা। মোট ১২ দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল নিউটাউন বি সি ব্লকের ১২তম বর্ষে। পুজোর বিভিন্ন দিনে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী সোহিনী সরকার, গায়ক দেবজিৎ দত্ত, নাট্যব্যক্তিত্ব বিপ্লব বন্দোপাধ্যায়, লেখিকা সোমা মুখোপাধ্যায়, অর্থনীতিবিদ নির্মল বন্দোপাধ্যায়, সমাজসেবী নবারুণ গুপ্ত প্রমুখ।
প্রতি বছরের মতো এ বারও নানা ধরনের কমিউনিটি প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়েছিল, যেমন রান্না প্রতিযোগিতা, আলপনা প্রতিযোগিতা, ফ্যাশন শো, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
পাশাপাশি বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে কমিউনিটি লাঞ্চ তো আছেই। আয়োজকরা জানিয়েছেন, শুধু শিল্প ও সংস্কৃতিই নয়, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততাই এই পুজোর মূল লক্ষ্য।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।