Kolkata Bonedi Barir Pujo

পুজোর সময় ক্ষেত্রপাল ঠাকুর বাড়িতে ‘বলি’ শুরুর আগেই নিদ্রা যান পড়শি শ্যামসুন্দর!

পরিবারের স্ত্রী সদস্যের নামে সঙ্কল্প করে সারা হয় পুজোর যাবতীয় আচার।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:১৮
Share:

সংগৃহীত চিত্র।

কলকাতার আশপাশে প্রাচীন বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম হল খড়দহের ভট্টাচার্য পরিবার বা ক্ষেত্রপাল ঠাকুর বাড়ির পুজো। পুজোর বয়স আনুমানিক ৫০০ বছর। যদিও ঠিক কবে থেকে, কে এই পুজো শুরু করেছিলেন, সেই সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট প্রামাণ্য নথি আজ আর অবশিষ্ট নেই।

Advertisement

অন্যান্য বনেদি বাড়ির পুজোর মতোই এই পুজোরও বেশ কিছু স্বকীয়তা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হল, পুজোয় বাড়ির মহিলাদের কর্তৃত্বের স্বীকৃতি। চিরাচরিত নিয়ম মেনে আজও এই বাড়ির পুজোয় সঙ্কল্প করা হয় পরিবারের কোনও না কোনও স্ত্রী সদস্যের নামে! তিনি হতে পারেন বাড়ির কন্যা, অথবা বাড়ির বধূ। যে বছর যাঁর নামে পুজোর সঙ্কল্প করা হয়, সে বছর তিনিই পুজোর সমস্ত প্রধান আচার ও নিয়ম পালন করেন।

এই পুজোর আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল বলি প্রথার বিবর্তন। খড়দহের ভট্টাচার্য পরিবারে দশভুজার পুজো সারা হয় সম্পূর্ণ ভাবে শাক্ত মতে। কথিত আছে, একটা সময় পুজোর দিনগুলিতে এখানে মোষ, ছাগ এবং মৎস্য বলি দেওয়া হত। এ দিকে, এই এলাকার অন্যতম প্রসিদ্ধ একটি উপাসনালয় হল শ্যামসুন্দর মন্দির।

Advertisement

শোনা যায়, একে বারে প্রথম থেকেই দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে শ্যামসুন্দর মন্দিরের পুরোহিতরা ভট্টাচার্য পরিবারের কাছ থেকে বলির সময় জেনে নিতেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, যে পশু বা প্রাণীটিকে বলি দেওয়া হচ্ছে, তার আর্তচিৎকার শ্যামসুন্দর শুনতে চান না। তাই বলির সময় শুরু হওয়ার আগেই পুজোর দিনগুলিতে শ্যামসুন্দরকে খাবার বা ভোগ (জলপানি) অর্পণ করা হত। তিনি সেই ভোগ গ্রহণ করে বলির আগেই নিদ্রা যেতেন।

পরবর্তীতে এই এলাকায় কোনও ভাবে বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব বিস্তার হয়। যার ফলে ভট্টাচার্য পরিবারেও পশু এবং মৎস্য বলির বদলে সবজি ও ফল বলি শুরু হয়। সেই বিবর্তন ও প্রথা মেনে আজও এখানে পুজোর তিন দিন চালকুমড়ো, আখ ও শশা বলি দেওয়া হয়। এবং আজও প্রাচীন রীতি মেনে বলি শুরু হওয়ার আগেই শ্যামসুন্দরের মন্দিরে বিগ্রহকে ভোগ অর্পণ করে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই পুজোয় মায়ের ভোগ নিরামিষ হলেও মহিষাসুরের জন্য প্রতি দিন আলাদা করে মৎস্য ভোগ রান্না করা হয়। কিন্তু, সেই ভোগ কেউ প্রসাদ হিসাবে খায় না। বদলে সেটি বাড়ির পিছনের পুকুরে বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়। যদিও দশমীর দুপুরে বাড়িতে মাছ রান্না করতেই হয়। বাড়ির যে মেয়ে-বউরা মাকে বরণ করেন, তাঁদের প্রত্যেককে আগে মাছ মুখে দিতে হয়, তবেই তাঁরা মাকে বরণের অনুমতি পান। এর পাশাপাশি, সন্ধিপুজোয় এঁচোড়ের তরকারি এবং কাঁচা আমের চাটনি রাঁধতেই হয়। একই ভাবে দশমীর ভোগে পান্তা এবং কচুর শাক নিশ্চিত ভাবে থাকে।

এই বাড়িতে প্রতি বছর মূর্তিপুজো বোধন থেকে শুরু হলেও মহালয়ার পর থেকেই ঘট স্থাপন করে চণ্ডীপুজো চলে। ঘট পুজো চলে এক টানা ১০ দিন, অর্থাৎ দশমী পর্যন্ত। আরও একটি বিষয় হল, এই বাড়িতে কলাবউকে স্নান করাতে কোনও পুকুর ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় না। বাড়িতেই দর্পণের মাধ্যমে মহাস্নান পর্ব পালিত হয়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement